somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারানো দিনের কথা - ছেলেবেলা, আহা!....... আমার ছেলেবেলা /:):(( (ইহা একটি নষ্টালজিয়া মুলক পোষ্ট)

২২ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্লাস সেভেনে আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন কাশেম স্যার। পরবর্তিতে তিনি হেড টিচার হয়ে রিটায়ারডম্যান্টে গিয়েছেন। উনি আবার আমার বাবার ছাত্রও ছিলেন , আর সেই সুবাধে আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল বেশ। সেজন্যে অন্য সবার থেকে একটু বেশী সমীহ পেতাম বলেই মনে হত। সেই সময় ক্লাসের ফাষ্টবয় হিসাবে আমি ছিলাম ফাষ্ট ক্যাপ্টেন আর বাহার ছিল ইলেক্টেড সেকেন্ড ক্যাপ্টেন। মোটামুটি সবার প্রিয় কাশেম স্যারের শাসনের নিয়ম ছিল একেক অপরাধের জন্যে একেক শাস্তি।
যেমন:
১। ক্লাসে না আসলে নীল ডাউন করে বাহিরে দাড় করিয়ে রাখতেন

২। ক্লাসে দুষ্টুমী করলে চক গুড়ো করে সারা মুখে মাখিয়ে দাড় করিয়ে রাখতেন

৩। হোম ওয়ার্ক না করে আনলে খাতা মাথায় দিয়ে ক্লাসের পুরোটা সময় দাড়িয়ে থাকতে হত।

৪। পড়া না পাড়লে খাতা মাথায় দিয়ে এক পায়ে ক্লাসের পুরোটা সময় দাড়িয়ে থাকতে হত।

৫। আর সবচেয়ে ভয়ন্কর শাস্তি ছিল বেত দিয়ে পিঠানো, যা সচরাচর তিনি করতেন না। ইত্যাদি, ইত্যাদি............

তয়, একদিন হল কি - স্যার ক্লাসে এসে ঢুকেই সবার হোম ওয়ার্কের খাতা চাইলেন আর 'মাই ক্লাসরুম' নিয়ে একটা ছোট্ট প্যারাগ্রাফ লিখতে বললেন। যাহোক, সচরাচর হোমওয়ার্ক করে আনা আমার কোনদিন মিস হত না আর ভাগ্যক্রমে সেদিনের প্যারাগ্রাফটাও শিখা ছিল, তাই তাড়াতাড়ি লিখে জমা দিয়ে চুপচাপ বসে আছি, সাথে আর বেশ কয়েকজন। কিছুক্ষন পর, স্যার উঠে একটু চক্ষর দিলেন। তারপর কি বুঝার, বুঝলেন, কে জানে?

গুরুগম্ভীর কন্ঠে ডাক দিলেন, ফাষ্ট ক্যাপ্টেন কাম অন ...........। আমি এগিয়ে গেলাম স্বগর্ভে (কারন হোমওয়ার্কের খাতাও ও ক্লাসের পড়া দুটিই সফলভাবে দিতে পেরেছি)। কাছে ডেকে বললেন, যা তিতা গাছের কয়েকটা ডাল নিয়ে আয়। এই তিতা গাছের কাহিনীটা একটু বলি। তিতা গাছটা আমাদের হেড স্যার অর্থ্যাৎ গোলাম কিবরিয়া স্যার কোথা থেকে যেন এনে লাগিয়েছিলেন। কাঠাতারের বেড়ার এপাশে ওপাশে দুদিকে গাছটা লাগানো হয়েছিল, যার কারনে সেটা মোটামুটি শক্ত বাওয়ান্ডারী ওয়াল হিসাবে কাজ করত এবং দেখতেও বেশ সুন্দর লাগত। এখন অবশ্য সেগুলো কেটে ইট সুরকীর ওয়াল দেওয়া হয়েছে। আর এই গাছটা আমাদের স্কুল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না।

সে যাক, ডাল আনার কথা শুনে ভয়ের পরিবর্তে আমিতো মোটামুটি খুশি! গেলাম হেলেদুলে ডাল আনতে। আমার পিঠে পড়বে না বলে ইচ্ছে করেই বেচে বুচে বেশ কয়েকটা শক্তপোক্ত ডাল নিয়ে এসে স্যার কে দিলাম। তারপর চুপচাপ নিজের আসনে গিয়ে আবার বসে আছি। আমি ও কয়েকজন ছাড়া বাকী সবার মুখ অন্ধকার, ভয়াচ্ছন্ন.......। একটু পরে স্যার ডালগুলো হাতে নিয়ে ভাল ভাবে এপাশ, ওপাশ নেড়েচেড়ে দেখলেন, তারপর আমাকে ডাকলেন। ব্যাপারটা কি হতে পারে আচ না করেই ধীরে ধীরে গিয়ে স্যারের কাছে দাড়ালাম। স্যার আমাকে জিঙ্গেস করলেন...........
তোকে কয়টা ডাল আনতে বলেছিলাম?
উত্তর দিলাম - কিছুই বলেননি স্যার
তাহলে, এতগুলো ডাল কেন এনছিস?
আমি তখন নিরুত্তর.............
স্যার এবার যা বললেন, তার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তৎক্ষনাৎ স্যার ধমক দিয়ে বললেন, দে, হাত সামনে বাড়া.....

আমিতো হতভম্ভ!!, কি করব বুঝার আগেই স্যার আবার গর্জে উঠলেন। এবার আর কিছু চিন্তা না করেই দিলাম হাত বাড়িয়ে, ওমনি সপাং, সপাং ................
এরকম আরও দু তিন ঘা খেলাম তথক্ষনাৎ। যাহোক, একটু পড়েই ঘন্টা পড়ে গেল। স্যার, সবার উদ্দেশ্যে বললেন ঠিক মত হোমওয়ার্ক করে আনবি, আর যেন কখনও ভুল না হয়। আর আমাকে বললেন, যা বেতগুলো ফেলে দিয়ে আয়..........



বেশকিছু দিন পরের কথা। স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন।
বললেন, শুন ঐদিন যে মেরেছিলাম তাতে কি খুব কষ্ট পেয়েছিস? আমি নি:শ্চুপ....মাথা নীচু করে দাড়িয়ে আছি
স্যার আবার বললেন, শুন.............
'সহপাঠীদের একজনের জন্যে আরেকজন সহমর্মিতা রাখবি, কাউকে হিংসা করবি না, কারোর অনিষ্ট চাইবি না অর্থ্যাৎ মানুষের দু:খে কখনও উল্লসিত হবি না, অপরের দু:খে সববেদনা জানাবি পারলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবি আর সব কাজে সবর করবি'। পরিশেষে বললেন, এই কথাগুলো তোর বাবা অর্থ্যাৎ আমার স্যার একদিন আমাকে বলেছিলেন, আজ আমি তোকে বললাম, মনে রাখবি।


স্যারের কথাগুলো এখনও আমার মনে আছে. বাকীদিন মনে রাখার চেষ্টা করব। আর যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টায় আছি............. । বড্ড মিস করি সব স্যারদের, সহপাঠীদের, ছেলেবেলার বন্ধুদের ও সেই সময়কে। ছেলেবেলা...........আহা! আমার ছেলেবেলা/:):((
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৩৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×