somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রে জীবন - ৮

২১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেবল আমি নই, যে কোন জাহাজীকেই যে কয়টি recurrent প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, তার একটি হচ্ছে:"তুমি/আপনি কখনো সমুদ্রে ঝড়ে পড়েছো/পড়েছেন? সে সময় তোমরা/আপনরা কি করেন?" গল্পে, সাহিত্যে ঝড়ে পড়া পাখিদের বা পথ হারানো সাঁঝের পাখিদের নিয়ে, সহানুভুতি দেখিয়ে, অনেক কথা লেখা হয়। জাহাজীদের জন্য বাস্তবতাটা একদম উল্টো! যে সব অঞ্চলে হঠাৎ করেই একটা নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে ঝড় হবার সম্ভাবনা দেখা দেয় - সে সব অঞ্চলের বন্দরে, একটু পুরানো নাবিক মাত্রই হয়তো এই পরিস্থিতিটার অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকবেন যে, সব কিছুই নিয়মিত বা স্বাভাবিকভাবেই চলছিল - হঠাৎ দেখলেন সাজ সাজ রব। কি ব্যাপার? জাহাজকে যথাশীঘ্র সম্ভব বন্দর ছেড়ে বাইরে চলে যেতে হবে! বাইরে মানে এমন কি Anchorage-এও নয় - একেবারে সমুদ্রে ! বরং Anchorage-এ যে সব জাহাজ অপেক্ষমান ছিল (বিশেষত inner-anchorage যদি হয়), তাদেরও বলবে বাইরে বা দূরে চলে যেতে। আমার জীবনে এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। পূর্ব-এশিয়ায় জাপান, কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের বন্দর সমূহে, "টাইফুন" মৌসুমে, যে কারো এমন অবস্থায় পড়তে হতে পারে।

আমার বেশ মনে আছে আমি একটা জেনারেল কার্গো জাহাজে সেবার জাপানের Yokohama-য় ছিলাম - আমরা New Zealand-এর (Auckland, Wellington) জন্য বড় বড় কাঠের বাক্সে CKD (Cars Knocked Down) লোড করছিলাম। বন্দরটি Tokyo সংলগ্ন বলে, সবাই সুযোগ পেলেই Tokyo-তে বেড়াতে যায়। আমিও গিয়েছিলাম। জাহাজে ফিরে দেখি সাজ সাজ রব - তাড়াহুড়া করে কোনমতে লোডিং শেষ করে আমাদের বাইরে বের করে দিচ্ছে। কারণ? বার্থে থাকলে ঝড়ের সময় বাতাসের প্রভাবে জাহাজের মুরিং-এর দড়ি ছিড়ে, জাহাজ জেটিতে bang করতে করতে জাহাজের তথা জেটির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে - সেই ক্ষতি এড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা । ঝড়ে inner বা outer-anchorage-এ থাকা জাহাজগুলোরও anchor বা নোঙ্গর drag করে একটার সঙ্গে আরেকটা ধাক্কা লেগে ক্ষতি হতে পারে - তাছাড়া এসব থেকে উদ্ভূত পরিস্থিততে চ্যানেল বন্ধ হয়ে জাহাজ চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। সেজন্য সেখানকার জাহাজগুলোকেও সমুদ্রের গভীরে চলে যেতে বলা হয়। এরকম অবস্থায় ঝড়ের তীব্রতার সংকেতের উপর নির্ভর করে, জাহাজগুলো দূরে সরে যায় - এবং প্রয়োজনবোধে ইন্জিন চালু রেখে বাতাসকে face করার চেষ্টা করা হয় - যাতে ঝড়ের প্রভাবটা কম হয়। ঝড় বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়, জাহাজের Main Engine অকেজো হয়ে যাওয়া - জাহাজ-ডুবি বা জাহাজ চরে (reef-এ) আটকে "মৃত ইতিহাস" হয়ে যাবার একটা অন্যতম প্রধান কারণ। আমার মনে আছে, আমি একবার জাহাজে করে জর্ডানের Aqaba-য় গিয়েছিলাম Rock Phosphate লোড করতে। Aqaba Bay-তে ঢোকার মুখে দুপাশে দু'টো জাহাজ দেখেছিলাম - যে গুলো reef বা চড়ায় উঠে "ইতিহাস" হয়ে গেছে। তার মূল কারণ হচ্ছে এই যে, একটা critical moment-এ ওগুলোর Main Engine fail করেছিল। জীবনে অনেক সময়ই দেখা যায় যে, একটা জিনিস আপনার সবচেয়ে বেশী যখন প্রয়োজন, তখনই তা আপনাকে ছেড়ে যায়! তবে এর উল্টোটাও হয় - আমার জাহাজী জীবনেই হয়েছে। সেই গল্প না হয় পরে কখনো বলা যাবে ইনশা'আল্লাহ্।

যাহোক, এর আগে একটা পর্বে, আপনাদের একটা কন্টেইনার জাহেজের কথা বলেছিলাম যা কিনা ঝড়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ঐ জাহাজটি প্রশান্ত মহাসাগরে ৪০৬ টি কন্টেইনার হারিয়েছিল, আরো ১০০০ টি কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আর অর্থের নিরিখে ক্ষতি হয়েছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের।। আজ ঐ জাহাজটা সম্বন্ধে কিছু বলার চেষ্টা করবো ইনশা'আল্লাহ্!

ঐ জাহাজটি Kaohsiung (Taiwan) থেকে Seattle (US) যাচ্ছিল - তখন পথে, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে, ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল থেকে ২৭০০ মাইল পশ্চিমে, সে টাইফুনের কবলে পড়ে। ভীষণ উত্তাল সমুদ্রে তখন ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ৭৫ ফিট। দুর্ভগ্যজনকভাবে, ঐ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এক সময় কোন কারণবশত জাহাজটিতে black-out হয়, ফলে Main Engine ও Steering Gear সহ সকল যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে। অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, ইমার্জেন্সি জেনারেটর ঐ সময় চালু হয়নি। ঝড়ো হাওয়া আর বিশাল ঢেউ তখন জাহাজটিকে নিয়ে "রাগবি" খেলতে শুরু করে। প্রকৃতির সর্বগ্রাসী শক্তির কাছে মানুষের দম্ভ ও অহংকারের "শিল্প" তখন ভাসমান "ম্যচ-বক্সের" মত insignificant । ১৯৬০ সালে কন্টেইনার ট্রেড শুরু হবার পর, এটাই ছিল সর্ব-বৃহৎ ক্ষয়-ক্ষতি! জাহাজটি তার সিডিউলের ২ দিন পর Seattle (US) পৌঁছে।

শীতের সময়টায় উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে একের পর এক লঘুচাপ সৃষ্টি হতে থাকে। বড় কন্টেইনার জাহাজগুলো তাদের শক্তিশালী ইন্জিন, দ্রতগতি আর অত্যাধুনিক নেভিগেশন তথা আবহাওয়া পযর্বেক্ষণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, প্রায়ই খারাপ আবহওয়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু, ভাগ্য বিরূপ হলে, কখনো টের পাবার খুব অল্প সময়ের ভিতরই, কোন জাহাজ নিজেকে "eye of the cyclone"-এ আবিষ্কার করে - তখন আর করার কিছুই থাকে না!



[ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির সাইড থেকে তোলা ছবি]



[ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির পেছন থেকে তোলা ছবি]
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×