somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাদ.........

২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সকালের নাস্তা এত দেরিতে কেন রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন মহামান্য তার সেবিকার কাছে । সেবিকা কাঁপা কাঁপা গলাই বলল মহামান্য আপনার জন্য সুস্থ স্বাভাবিক শিশু পেতে দেরি হয়ে গেছিল তাই । এতদিন দেরি হতনা আজ হল, তুমি কি সত্যি বলছ ? জ্বী মহামান্য তবে আপনার জন্য সুখবর আছে একটা কোম্পানি এখন থেকে নির্ভেজাল সকালের নাস্তা দিতে প্রস্তুত তবে তার জন্য তারা কি যেন চুক্তি করতে চায় । ওরা কোথাই আবার প্রশ্ন করলেন মহামান্য । ওরা নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বলল সেবিকা । ঠিক আছে ওদের অপেক্ষা করতে বল, বলে মহামান্য লোভাতুর দৃষ্টিতে নাস্তার টেবিলের দিকে এগোলেন । আহ, পৃথিবীতে এর থেকে মজাদার কোন খাবার আছে নাকি চিন্তা করতে করতে মহামান্য গ্লাসে চুমুক দিতে থাকলেন । কি সুন্দর স্বাদ, গন্ধ এরকম খাবার খেতে খেতে মৃত্যুকেও সহজ মনে হবে, তবে তিনি জানেন তার মৃত্যু এত সহজে আসবেনা । মহামান্য তার রক্তাক্ত ঠোট দুটোকে একবার চেটে নিলেন, তিনি এক ফোঁটা তরল ও এদিক ওদিক যেতে দিয়ে অমৃতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চান না । আজকের শিশুটা অনেক সুস্থ এবং সুন্দর ছিল মনে মনে চিন্তা করতে করতে মহামান্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলার জন্য তার অফিস কক্ষের দিকে এগোলেন ।

আপনারা নাকি কি প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, বলেন কি বলবেন আমার আজ অনেক তাড়া বললেন মহামান্য প্রফুল্ল চিত্তে । ব্যবসায়ী প্রতিনিধীর প্রধান বলল মহামান্য শুনেছি ইদানিং আপনার সকালের নাস্তা পেতে সমস্যা হচ্ছে, তাই আমরা এর সমাধান দিতে চাই । আমাদের কোম্পানি আপনাকে প্রতিদিন সকালে বিশুদ্ধ নাস্তা সরবরাহ করবে যেমন আজ করেছিলাম । তার বিনিময়ে আমরা এখানে মাংস ব্যবসা করার অনুমোদন চাচ্ছি । মহামান্য'র মন আজ প্রফুল্ল ছিল এবং সকালের নাস্তাটা অনেক সুন্দর ছিল অন্যদিনের তুলনায় তাই মহামান্য নিঃসঙ্কোচে তাদের সাথে চুক্তি করে ফেললেন । ব্যবসায়ী প্রতিনিধীরা চলে গেলে মহামান্য আরো প্রসন্নচিত্তে তার সহকারীকে ডাকলেন, বললেন বাইরে হট্টগোল কিসের ? ওরা আপনার অনুসারী আপনার সাথে দেখা করতে চায় কিন্তু আপনার তো এখন ভিন্ন দেশের প্রতিনিধীদের সাথে আলোচনা করার কথা বলল মহামান্যের সহকারী । বিদেশী প্রতিনিধীরা কি সবাই এসে পড়েছেন জিজ্ঞাসা করলেন মহামান্য । না মহামান্য, চারজন প্রতিনিধি এখনও এসে পারেন নাই । তাহলে আমার অনুসারিদের ভিতরে পাঠাও দেখি ওরা কি বলতে চায় বললেন মহামান্য ।

ধস্তা ধস্তির শব্দ হচ্ছে বাইরে, মনে হয় কে আসবে তাই নিয়ে তারা এরকম করছে যেহেতু মহামান্যের কক্ষে অনেকের একসাথে প্রবেশ নিষেধ ভাবলেন মহামান্য এবং প্রশান্তির একটা হসি দিলেন আহ তার অনুসারীরা তাকে কত ভালবাসে। বিদ্ধস্ত চেহারা এবং যুদ্ধ জয়ের হাসি নিয়ে দুজনের প্রবেশ ঘটল । তারা একসাথে যেন কথা বলতে চায় তাই মহামান্য বললেন একজন একজন করে বল তোমাদের সমস্যা কি । মোটামুটি শক্ত সামর্থবান যুবকটি বলল মহামান্য একটা সমস্যা হয়ে গেছে বলে আমরা এসেছি । কাল রাতে আমাদের কয়েকজন তাদের রাতের খাবার সংগ্রহ করতে যেয়ে একজনকে মেরে ফেলেছে । কি ? মহামান্য চিৎকার করে উঠলেন । ভয়ে কুঁকড়ে গেল দুই যুবক । তোমরা কি করেছ, তোমাদের বলেছিনা এসব কাজে খুব সাবধান । এখন বিরোধীরা যদি বুঝতে পারে এসব তোমাদের কাজ তাহলে তো ওরা মাঠে নামবে, এমনিতেই তারা এই অমূল্য খাবার থেকে বঞ্চিত এবং সু্যোগ খুজে বেড়াচ্ছে কিভাবে তারা এর স্বাদ নেবে তারউপর এটা তোমরা কি করেছ । এই প্রথম মহামান্যের ভ্রু কিছুটা কুঞ্চিত হল । দ্বিতীয় যুবকটা বলল কিন্তু মহামান্য যে মারা গেছে সে আমাদের অনুসারী । এবার মহামান্য কিছুটা খুশি হয়ে উঠলেন, তবে কিছুটা প্রশ্রয়ের ধামকিতে বললেন আচ্ছা আমি দেখছি তাহলে কি করা যায় তবে তোমরা নিজেরা নিজেদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ কর কেন । এতে তো বিরোধীরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে । আর খাদ্য সংগ্রহতে আরো মনযোগী হও, এভাবে খাদ্য সংগ্রহতে যদি কেউ মারা যায় তা হলে আমি দেশের মানুষের কাছে কি বলব । সাধারণ মানুষ এগুলো খুব মনে রাখে, আর এই কারনে তারা যদি পরবর্তিতে আমাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তবে এই অমুল্য অতুলনীয় খাবার থেকে তোমরাও বঞ্চিত হবে । তখন এত সহজে এই খাবার পাবে না । এখন তোমরা যাও, এত সুন্দর উপদেশ দিতে পেরে মহামান্য নিজের উপর আবার খুশি হয়ে উঠলেন ।

এখন তাকে কয়েকজন বিদেশী প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে হবে । বিদেশী প্রতিনিধিরাও কিছু নাকি দিতে চাই সাধারনের উন্নয়নের জন্য । আহ সেইসব উন্নয়নের জিনিস দিয়ে আরো কত অতুলনীয় ওই স্বাদ পাবেন ভাবতেই মহামান্যের জ্হীব লকলক করতে থাকে । সহকারীকে ডেকে মহামান্য বিদেশী প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দিতে বললেন । আহা আপনারা এসেছেন দেখে আমি কিভাবে কৃতজ্ঞতা বুঝাব বুঝতে পারছিনা, খুশিতে ঝলমল করছে মহামান্যের চোখমুখ । বলুন এ অধম আপনাদের কিভাবে সাহায্য করে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে । প্রতিনিধিরা এক এক করে তাদের উপকার করার জায়গার কথা বলতে লাগল, কিন্তু মহামান্যের ওসব শুনার সময় নাই তিনি তাদের কাছ থেকে কি পাবেন এবং সেটা দিয়ে কিভাবে সেই আতুলনীয় স্বাদ নেবেন সেই চিন্তায় বিভোর ছিলেন । মহামান্য যখন বিদেশীদের খুশি করে এবং নিজে খুশি হয়ে উঠে আসলেন, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল ধরেছে ।

এখন তার দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সময় । আজ একটা সফল দিন গেল ভাবতে ভাবতে মহামান্য টেবিলের দিকে এগোতে থাকলেন । আহ আজ দেখি মাংস মেনু সেই সাথে এক গ্লাস অতুলনীয় তরল । আহ এমন যদি প্রতিটা দিন যেত । হমম এ মাংসেরও দেখি অতুলনীয় স্বাদ বললেন মহামান্য । খেতে খেতে হঠাৎ দাঁতে কি যেন বাধল, বের করে তিনি দেখলেন একটা আংটি । এই ভুলের জন্য পাচককে তিনি ফাঁসিতে ঝুলাতে পারেন তবে তিনি তাকে মাপ করে দিলেন এই অতুলনীয় খাদ্য রান্নার জন্য । সব কাজ শেষে মহামান্য তার নিকটবর্তী বাসার দিকে যখন পা বাড়ালেন তখন সন্ধ্যা ।

মামনি মামনি বলতে বলতে মহামান্য তার শোবার ঘরের দিকে গেলেন । মহামান্য আজ তার মামনিকে অর্থাৎ তার একমাত্র মেয়েকে একটা বিশেষ উপহার দিতে চান । কিন্তু কই তার মামনি, পকেটে হাত ঢুকালেন । তখন কাজের লোকটি এসে বলল এখনো সে বাড়িতে আসেনি । মহামান্য এবার কিছুটা ভীত হয়ে পড়লেন বললেন আমাকে বলনি কেন এতক্ষন । কাজের লোকটি বলল মহামান্য আপনাকে তো খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না কারন আপনি তখন কোন একটা আলোচনার টেবিলে ছিলেন । মহামান্য তার হাত বের করে আনলেন, তখন হঠাৎ করে মেঝেতে কি যেন পড়ার শব্দে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন একটা আংটি যা তিনি তার দুপুরের খাবারের মাঝে পেয়েছিলেন । আংটিটি কুড়াতে যেয়ে বুঝে পারলেন এ আংটিটি তার বেশ পরিচিত, যা তিনি উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন তার মেয়েকে তার গত জন্মদিনে । মহামান্য কেঁপে উঠলেন ভয়ে, তিনি এখন বুঝতে পারলেন কেন আজ দুপুরের খাবার এত উপাদেয় মনে হয়েছিলে ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:২৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×