somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইনাসে ডরেনা টেকিবাবা B-) প্রসঙ্গ : ইয়েলো ব্লগিং - গলাবাজি, গালিবাজি, মাল্টিনিক, রিভার্স, ছাইয়্যা ও বিবিধ

১৯ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইয়েলো জার্নালিজম শব্দটার সাথে মনে হয় আমাদের সবারই পরিচয় আছে। মনগড়া, মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কারও প্রতি রাগ কিংবা প্রতিহিংসাবশতঃ, স্বপ্নে প্রাপ্ত, কারও কাছে টাকা খেয়ে তার প্রশংসাসূচক - কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলে সেই ধরনের সাংবাদিকতাকে আমরা ইয়েলো জার্নালিজম বলি। মনে হয় আরও অনেকধরনের সাংবাদিকতা আছে যেগুলো ইয়েলো জার্নালিজমের ভিতর পড়বে, আমি সবগুলা জানি না। এই বিষয়ে মনে হয় সবাই একমত হবেন যে আমাদের দেশে প্রচলিত সংবাদপত্রগুলোর অনেকগুলিই ইয়েলো জার্নালিজম চর্চার আখড়া, মিথ্যা বানোয়াট বা রাজনৈতিকভাবে বায়াস্‌ড সংবাদ পরিবেশনার কারণে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমরা অনেকেই সন্দিহান। এই কথাগুলো আমাদের টিভি মিডিয়ার ক্ষেত্রেও মোটামুটি সমানভাবে প্রযোজ্য। মূলধারার মিডিয়ার এইরকম ব্যর্থতার সময়ে ভালো সুযোগ ছিলো(এখনও আছে) ব্লগের। কিন্তু আমরা কি সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছি? - মোটেও না!! বরং আমাদের ব্লগগুলাও জন্ডিসে আক্রান্ত। আসুন তার অন্তত একটা দিক দেখি কিভাবে।

বাংলা ব্লগগুলোর সাথে আমার পরিচয় মোটামুটি এক-দেড় বছর ধরে। প্রথম দিকে শুধু পাঠক হিসাবেই ব্লগগুলাতে ঘুরতাম। নিজে ভালো লেখার যোগ্যতা নাই বিধায় একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। শেষমেষ এক ছোট ভাইয়ের সাথে চ্যাট করার সময় জানলাম সেও সামুতে ব্লগিং করে, সে সাহস দিলো যে - "ভাই একাউন্ট খুলেন, যা মনে আসে লিখবেন। কুনো ভয় নাই।" বাংলা ব্লগের দুনিয়ায় সামু অবিসংবাদিতভাবে শীর্ষস্থানের অধিকারী। সামুর আছে অসংখ্য রেজিস্টার্ড একাউন্ট(ব্লগার নয় কিন্তু) আর সামুতে প্রায় প্রতি মিনিটেই যোগ হয় নতুন নতুন লেখা। তো একাউন্ট খোলার পর আসলো পোস্ট করার, মন্তব্য করার ক্ষমতা। আগে যেখানে মাঝেমাঝে সামুতে ঢুকতাম শুধু পড়তে এখন প্রায় সময়ই ঢুকি পড়তে ও মন্তব্য করতে যেটা আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশী সময় খায়। তো এই সময়ে যে চিত্র দেখলাম সামুর, যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম তা বড়ই মনোরঞ্জক!! সামুতে অল্প কিছুসংখ্যক আম একাউন্ট ছাড়া অধিকাংশ একাউন্টই খাস (!!! - নিক বা একাউন্ট, ব্লগার নয় কিন্তু)।

তো এইসব খাস একাউন্ট + ব্লগারদের কাজ কি? তাদের মূল কাজ হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বা আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেওয়ার মত গলাবাজি, গালিবাজি, ছাইয়্যাবাজি(!!!), মাল্টিনিকবাজি, রিভার্স খেলাসহ আরও অনেক ব্লগীয় রাজনীতি যার সবগুলোর সাথে এখনও পরিচিত হয়ে উঠতে পারিনি। কি তাদের ভাষার বাহার যা পড়লে মেঠো রাজনীতিবিদরাও তাদের লুঙ্গির গিঁট বা পায়জামার ফিতা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যাবেন। তো এইসব ব্লগীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে স্পষ্টতই দুইটা সংখ্যাগুরু দল আছে :

দল-১.এরা জীবনযৌবন লাগিয়ে দিয়েছেন রাজাকার-আলবদর-জামাতিদের বিচার দাবী করতে এবং বর্তমান সরকার ও তার নেতাদের দোষগুলাতে পিছলা দিতে।

দল-২. এরা জীবনযৌবন লাগিয়ে দিয়েছেন বর্তমান সরকার ও তার নেতাদের দোষত্রুটি ধরতে আর রাজাকার বিষয়ে পিছলা দিতে।

এই উভয় দলই একজন আরেকজনকে চতুষ্পদ প্রাণীদের নামে ডাকতে পছন্দ করেন। দল-১ দল-২ কে নিরীহ এক চতুষ্পদ যার লেজ কখনো সোজা কখনো বাকা থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মুখে কিঞ্চিত দাড়ি থাকে - সেই নামে ডাকে। আর দল-২ দল-১ কে মোটামুটি হিংস্র এক চতুষ্পদ যার লেজ কখনই সোজা করা সম্ভব নয় সেই নামে ডাকে। এছাড়া আরও কিছু সংখ্যালঘু খাস নিক/ব্লগার/একাউন্ট আছে যারা নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে অতটা সফল হয় না এবং ক্ষেত্রবিশেষে দল-১ দল-২ উভয়ের কাছ থেকেই বিপরীতধর্মী চতুষ্পদের নামে নামাংকিত হয়।

এইসব খাস ব্লগারদের কার্যপদ্ধতি মোটামুটি একইরকম -

১.তারা বিপুল তথ্যপ্রমাণ যেমনঃ ছবি(ব্যাপকভাবে ফটোশপে এডিটকৃত), লিংক(নিজেদের মতাবলম্বী সাইটের), চুক্তি(আধুনিক, প্রাচীন, কার্যকর, অকার্যকর, সিমলা, দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, ভিত্তিহীন), ভিডিও(কাটপিস-এর মত এখান থেকে ওখান থেকে জোড়া লাগানো, মাঝখান থেকে উড়ানো) ইত্যাদিসহ নিজেদের মতামত প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন জ্ঞানবর্ধক পোস্ট পুস্টান। কিছুক্ষণ পর যখন তাদের এইসব তথ্যপ্রমাণওয়ালা যুক্তিপূর্ন পোস্টগুলো তাসের ঘরের মতন ভেঙ্গে পড়ে তখন তারা যুক্তির রণে ভঙ্গ দিয়ে গলাবাজি গালিবাজির সাহায্যে মুক্তির পথ খুঁজেন।

২.তারা নিজেদের পোস্ট মন্তব্য করে জিন্দা রাখার জন্য, বিপরীতধর্মী পোস্টে সুপার গালিবাজি করার জন্য, কোনো পোস্টকে প্লাস/মাইনাসের সাগরে ভাসানোর জন্য অসংখ্য একাউন্ট/নিক খুলে রেখেছেন, এগুলোকে বলে মাল্টিনিক। গালিবাজির জন্য কখনও আসল একাউন্টে মডারেটর-বাবা বান মারলে বা সাধারনের মর্যাদা প্রদান করলে প্রোপাগান্ডা মেশিন চালু রাখার জন্যও এই বাড়তি নিকগুলো খুবই উপকারী।

৩.রিভার্স খেলা(!!) - কয়েকদিন আগে পর্যন্তও বুঝতাম না, এই জিনিসটা কি। আস্তে আস্তে শিখছি। এই খেলার জন্য দরকার মাল্টিনিক। আপনি দল-১ এর হলে আপনার আরেকটা নিক দিয়ে দল-২ ঘরানার আর দল-২ এর হলে দল-১ ঘরানার একটা বিয়াফক গবেষণাধর্মী পোস্ট ছাড়বেন। তারপর অন্য নিকগুলো নিয়ে বিশাল বিক্রমে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, আপনার সাথে আপনার সাথী এবং বিরোধীরাও অংশ নিবে।

৪.তারপর আছে ছাইয়্যা, এটাও মাল্টিনিকের খেলা। আপনি সার্চ দিয়ে বা চুরি করে সুন্দরী মেয়ের ছবি যোগাড় করবেন তারপর একটু ভাবওয়ালা আশা-হতাশা-নিরাশা টাইপ নিক বাগাবেন। আপনার প্রোপাগাণ্ডা মেশিন লুলিয় ব্লগারদের মুখ থেকে ঝরে পড়া লালাতে গড়গড়িয়ে চলবে। অনেক লুল আপনার লেখা না পড়েও + এবং সহমত জানিয়ে যাবে।

এছাড়াও মনে হয় আরও অনেক রোমাঞ্চকর পন্থা আছে যে সম্বন্ধে এখনও আমার জ্ঞানপ্রাপ্তি ঘটেনি!

এইসব তো গেল খাস ব্লগারদের খাস ব্লগিং স্টাইল। এইসব খেলাধুলা, গালি-গলাবাজির মূল উদ্দেশ্যই হল আমাদের মূলধারার মেঠো রাজনৈতিক দলগুলার মতবাদ এই ব্লগে প্রতিষ্ঠা করা এবং মুখের কথাতে হাতি-ঘোড়া মারা। এখন আমার প্রশ্ন হল:

এই যে আপনারা এইখানে আপনারা এত্ত গলাবাজি করেন - আপনাদের কে আপনাদের মূলদল চিনে তো?

আপনাদের এই যুদ্ধকে মূলদল সম্মান দেয় তো?

মূলদলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় বড় রুই-কাতলা গুলা ব্লগ বলে কোনো জিনিস যে পৃথিবীতে আছে তা জানে কি?

গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল এই আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি এইখানে মূল দলের নাম ধরে যে গলা-গালিবাজি করছেন আপনার মূলদলও তা চাইছে?

আপনারা কি মনে করেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে শুধুই গালাগালি, মিথ্যা বলা; নাকি গালাগালি, মিথ্যা ছাড়া আপনাদের আর কোনো মতামতই নাই।

আশা করি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব।

কেউ যদি বলে "আমার মতে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে" তখন বিষয়টা হাস্যকর দেখায়। কারণ এইরকম স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে কারও মত দেওয়ার কিছু নাই। কেউ এর পক্ষে বললেও এইটা সত্য থাকবে, কেউ এর বিপক্ষে বললেও এইটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। একই কথা খাটে রাজাকার-আলবদর-আলশামস নেতাসহ সকল যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও। এই দেশের সবচেয়ে বড় এই শত্রুগুলোর বিচার হতেই হবে যেকোন মূল্যে এবং হবেও। এই বিষয় নিয়ে ব্লগে পক্ষ-বিপক্ষের গলাবাজি-গালিবাজি শুধু হাস্যকর ইয়েলো ব্লগিং-এরই পরিচয় বহন করে। মেঠো রাজনীতিবিদদের গলাবাজি গিলানোর জন্য দেশে ৭০-৮০% অশিক্ষিত জনগণ আছে। অন্যদিকে আম-খাস সবরকম ব্লগারই বাকি ২০-৩০% শিক্ষিত জনগণের প্রতিনিধি যারা ভালোমতই জানে সত্যটা কি, তাহলে আপনারা এই গলাবাজি-গালিবাজি করে কাকে কি গিলাতে চাচ্ছেন?

যাই হোক, অনেক বড় লিখে ফেললাম। এইজন্য দুঃখিত। এই লেখা হয়ত অনেক খাস ব্লগারের পছন্দ হবেনা এবং তারা হয়ত তাদের মাল্টি, রিভার্স, ছাইয়্যা সবরকম নিক দিয়ে মাইনাস দিয়ে যাবেন, সবাইকেই অভিনন্দন। পরিশেষে একটাই আশা আপনাদের সুমতি হোক!
২৬টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×