সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী হামিদুল ইসলাম। ৮ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে চাকরি তার। কিন্তু তারই রয়েছে ৬-৭ জন ব্যক্তিগত কর্মচারী। যাদের তিনি ফি মাসে বেতন দেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কয়েক বছরের চাকরি। অথচ ব্যাংক হিসাবে জায়গা-জমিসহ তার সম্পদ প্রায় ৮০ কোটি টাকার ।
একেক সময় একেক মডেলের দামী গাড়ি ব্যবহার করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দাপুটে তিনি। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর আলোচনায় হামিদুল ইসলাম। বলা হচ্ছে ঘটনার অন্যতম হোতা তিনি। অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত হয়েছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ার কদমতলী এলাকায়। তার পিতা বিজি প্রেসের কর্মচারী জেদ্দার আলী। ফুফা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুলতানুল আলমের মাধ্যমে চাকরি পান ১৯৯১ সালে। চাকরির আগে রংপুর সদরের কদমতলায় ছোট একটি দোকান করে সংসার চালাতেন। চাকরি পাওয়ার পর থেকে হামিদুলের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। বদলে যায় জীবনযাত্রা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক হন। রংপুর শহরের পশ্চিম মুলাটোল এলাকায় ২ মাস আগে ২০ শতক জমি কেনেন ৭০ লাখ টাকায়। পর্যটন এলাকায় ৭ কোটি টাকায় কেনেন প্রায় ১০০ শতক জমি। ঢাকার ফার্মগেটে রয়েছে দু’টি ফ্ল্যাট। যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এক মাস আগে রংপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে এক কোটি টাকায় দু’টি দোকান কেনেন। এছাড়া গঙ্গাচড়ায় ৫০ শতক জমি কেনেন ৫৭ লাখ টাকায়। গঙ্গাচড়া ডিগ্রি কলেজের পাশে এবং চেংমারিতে ৩০ বিঘা জমি কেনেন। যার মূল্য ৫ কোটি টাকা। এছাড়া তার রয়েছে ৩টি মোটরসাইকেল এবং একটি মাইক্রোবাস। নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে রংপুরে প্রাইম, জনতা, এনসিসি ব্যাংকের একাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। হামিদুলের গ্রামের শফিক, দুলালসহ অন্যরা জানান, এত কম সময়ে তিনি কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেল আমরাও বিশ্বাস করতে পারছি না। হামিদুল অপরাধমূলক জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে কিভাবে জড়িত হলেন- এ ব্যাপারে বেশ চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। চাকরি পাওয়ার কয়েক বছর পর বিজি প্রেসের কম্পোজিটর শহিদুলের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হামিদুল জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ওই চক্রে বিজি প্রেসের মোস্তফা ও জিপি প্রেসের জলিলও জড়িত। এ চক্রের হোতা বিজি প্রেসের কম্পোজিটর শহিদুল পলাতক থাকলেও তার স্ত্রী বিজি প্রেস বাইন্ডার কোহিনুর ওরফে লাবণী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার কাছ থেকে টাকাসহ আলামত হিসেবে বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। ওই চক্রের সংস্থাপন মন্ত্রণালয় পিএসসি, জিপি প্রেসের পিএসসি কর্মকর্তা আবদুর রউফ প্রশ্নপত্র জালসহ বিভিন্ন অপকর্মের মনিটর করতেন। এর সঙ্গে বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক খন্দকার মো. আলীও জড়িত ছিলেন বলে সূত্র জানায়। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী এ জালিয়াতচক্র দীর্ঘদিন ধরে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন শুল্ক কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট কর্মকর্তা, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএ’র পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষা, সড়ক ও জনপথের সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার নিয়োগ এবং স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের থানা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে জনপ্রতি প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নিতেন। গত ৮ই জুলাই সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার রংপুর গঙ্গাচড়ার বিনোদন কেন্দ্র ভিন্নজগতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হলে পুলিশি অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী হামিদুল ইসলামসহ ১৬৭ জন গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত হোতাদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ শীর্ষ পর্যায়ে জড়িতদের সন্ধান পেয়ে খতিয়ে দেখছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ডিবি) আবদুল মান্নান মানবজমিনকে জানান।