somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যরাতের আসামী

১৭ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এপ্রিল, ২০০৫।
রিহার্সাল শেষ হতে হতে রাত ২টা। সারাদিন ক্লাসের ক্লান্তি শেষে এমনিতেই দেরিতে শুরু হয়েছে, তাতে বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটিয়ে এক্কেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। ইলেকট্রিসিটি ছিল না প্রায় ২ ঘন্টা। পরদিন প্রোগ্রাম, সুতরাং স্টেজ রিহার্সাল অত্যাবশ্যক। সে যাই হোক, বৃষ্টিতে ভুনা খিচুড়ি খাইয়ে সবাইকে কোন রকমে সামাল দিয়েছি। ছেলেমেয়েগুলোর মুখ দেখে মায়া লাগছে। ওরাও সারাদিন ক্লাস করেছে, কারো কারো পরীক্ষাও ছিল। অথচ বৃষ্টি থামার কোন নামগন্ধ নেই। সবাই ফিরবে কিভাবে? ভার্সিটির মিনি অডিটরিয়ামে আটকা পড়ে আছি কখন থেকে...একটু পরপর বাইরে গিয়ে খবর নিয়ে আসছে কেউ কেউ-সবই হতাশার সংবাদ। অর্থাৎ সিলেটের নাছোড়বান্দা বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণই নেই। বরং প্রতি মূহুর্তে সে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিপুল বিক্রমে। অনুষ্ঠান না থাকলে সবাই মিলে হেঁটে যাওয়ার প্ল্যান করা যেত। এরকম করেছিও অনেকবার। কিন্তু আজকে সেই রিস্ক নেয়াটা বোকামি। কমপ্যাক্ট প্রোগ্রাম, একজন ঠান্ডা লাগিয়ে বসলেই সাড়ে সব্বোনাশ। মেয়েদের হলটা শহরে, ক্যাম্পাসের হলে যে কয়জন সম্ভব হয় পাঠিয়ে দিয়েছি সিনিয়রদের সাথে-ওখানে আর কোন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আমাকে যে করেই হোক বাকীদের হলে ফেরার উপায় করতে হবে। কি করা, কি করা...ভাবতে ভাবতে জুনিয়র রাসেল/শুভকে বললাম তার সাইকেলটা দিতে। এখান থেকে শহর প্রায় দুই/আড়াই কিলো। শহরে যাওয়া যাবেনা, তবে টুকের বাজার যাওয়া যেতে পারে। ক্যাম্পাস থেকে মাত্র দেড় কিলো। দেখি কোন হৃদয়বান টেম্পু মামাকে রাজি করানো যায় কিনা। অন্যদের আপত্তিতে কান না দিয়ে সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামলাম এই রাত দুপুরে। তুমুল বৃষ্টি। নিজেকে নিয়ে ভাবছিনা, কারণ জানি, আমার শরীর আমার সাথে কখনো প্রতারণা করেনি। আজও করবেনা। পানির দেশের সন্তান, পানিতে কি ভয়? ব্যাঙ এর আবার সর্দি কি? "সুতরাং বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনি"।

ইলেকট্রিসিটি নেই। তুমুল বৃষ্টি। রাস্তা ভালো ভাবে দেখা যায়না। সাইকেল চালাচ্ছি অনুমান করে করে। এই প্রথম আমার টো-টো করে ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাসের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে গেল। নইলে রাস্তা বাদে খাদ দিয়ে সাইকেল চালাতে হত। পার হলাম এককিলো। এবার টুকের বাজারের দিকে চলেছি। সিলেট-সুনামগঞ্জ হাইওয়ে। তখন নামেই হাইওয়ে ছিল, আসলে সুইমিং পুল। সাইকেল একটু পরপর লাফিয়ে উঠছে ১ ফুট করে। রাস্তা যখন দেখা যায়না, উপরে তাকাই। রাস্তার দুপাশের গাছের ফাঁকে যে আকাশটুকু আছে, ওখানে অন্ধকারের ঘনত্ব একটু কম। ওই আনুমানিক আকাশ দেখেই পথ ঠিক করে নেই। চেষ্টা করছি যত দ্রুত চালানো যায়। খুব খারাপ লাগছে-এতোগুলো ছেলেমেয়ে বসে আছে কখন থেকে। আগে থেকে বৃষ্টির আভাস পেলে বিকল্প ব্যবস্থা হয়তো করা যেত। এদিকে আমিও গত একমাস ধরে নিজের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। ক্লাস, পরীক্ষা, রিহার্সাল। দু'মাস হল চুল-দাঁড়ি কাটিনা। পোশাকেরও ঠিক ঠিকানা নেই। মোট কথা পারফেক্ট ভ্যাগাবন্ড। কালকে তবু যা হোক নিজের চেহারাকে একটা গতিময় অবস্থায় আনতে পারব। আজকে টেকনিক্যাল+স্টেজ রিহার্সাল ভালো হয়েছে। এর ৫০% ও যদি কালকে স্টেজে আউটপুট দেয়া যায়, ফাটিয়ে দেয়া যাবে। এই স্বস্তিতে আমার সাইকেলের স্পীডও প্রায় দ্বিগুণ। প্রায় চলে এসেছি। ওইতো বাসস্ট্যান্ড। তারপরই টুকের বাজার। আমি গুনগুন করে গানের সুর ভাঁজছি-"মাথায় পড়েছি সাদা ক্যাপ..."।

মাইক্রোবাসটা আমার পেছন থেকে এলো আচমকা। কোন হেডলাইট জ্বালানো নেই কিচ্ছুনা, স্রেফ যেন আসমান থেকে পড়লো। আমার সাইকেলের পেছন থেকে এসে একটু কোনাকুনি ভাবে এসে আমার পথ রোধ করে থামলো ঘ্যাঁচ করে। একেই বোধহয় ফিল্মি স্টাইল বলে। আমার সাইকেল গাড়ির একপাশে ধাক্কা খেলো চরম ভাবে। ব্রেক কষেছিলাম, কিন্তু বৃষ্টিতে কাজ হয়নি খুব একটা। আমি পড়তে পড়তে সামলে নিলাম। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আবিষ্কার করলাম, আমার কোমরে যে চারটা পদার্থের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি-ওগুলো বন্দুকের নল। কোন ভুল নেই।
এই ঠান্ডায়ও, বৃষ্টির পানির ভেতরে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নামা ঘামের স্রোতকে আলাদা করে চিনতে ভুল হয়নি আমার।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

ছবিসুত্রঃ আন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:২২
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×