somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনের আদ্যোপান্ত বলল কবির

১৭ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
'কৈ মাছের ঝোল আর ভুনা মুরগির মাংস দিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে বিশ্রাম নিই।

মেনকা আমার পাশেই বসা ছিল। কিছু সময় পর ওর মা রান্নাঘরে যায়। এ ফাঁকেই ট্রাভেল ব্যাগ থেকে নতুন বানানো চকচকে ছুরিটি বের করে মেনকাকে দেখাই। ওকে বলি, তোমাকে খুন করতে বানিয়ে এনেছি। এখনও বলছি, সত্য কথা বলো। কার সঙ্গে তোমার প্রেমের সম্পর্ক। মেরে ফেলার কথা শুনে পাগলিটা শুধু হাসছিল। কিছুতেই বিশ্বাস করছিল না ছুরিটিই নিভিয়ে দেবে তার
প্রাণপ্রদীপ।' মনস্থির করেই গত বুধবার সকালে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসেন কবির। রাজধানীতে পেঁৗছে তিনি মেনকাদের পাইকপাড়ার ২৯/২/এ নম্বর বাসায় যান। সেদিনই ছুরিটি দেখিয়ে মেনকাকে মৃত্যুর পরোয়ানা জানিয়ে আসেন। বুধবার ঘাতক কবির সুযোগ না পাওয়ায় পৃথিবীতে হয়তো একদিন বেশি বেঁচে ছিলেন মেনকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার ভয়ঙ্কর প্রেমিক কবির (২৮) উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে খুন করে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রী মহসীনা রব্বানী মেনকাকে (২৩)।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট একেএম এমদাদুল হকের আদালতে ঘাতক কবিরকে হাজির করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় খুনি কবির অকপটে মেনকা খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড করার পর কবিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মেনকাকে হত্যার পর ঘাতক কবির পুলিশের কাছেও ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কবিরের দাবি, ২০০৪ সাল থেকে মেনকার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। গত কিছুদিন থেকে মেনকা অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। জিজ্ঞেস করলেও সে বিষয়টি অস্বীকার করত। সম্রাট নামে এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি মেনকার মুখ থেকে শোনার পরই ক্রোধে নৃশংসভাবে প্রেমিকাকে হত্যা করেন তিনি। খুনি কবির মেনকার খালা জেসমিনের দেবর। কবির সম্পর্কে মেনকার মামা।
কবিরের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে মিরপুর থানার অপারেশন অফিসার মোঃ আবু বকর মিয়া সমকালকে জানান, ঘাতক নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেছে। ঘাতকের দাবি, মেনকার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। কবির ও মেনকা দু'জনের বাড়িই ফরিদপুর। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কিছুদিন পরই মেনকা কবিরকে উদ্দেশ করে বলে, আমরা সম্পর্কে মামা-ভাগি্ন। আমাদের বিয়ে করা সম্ভব নয়। এরপরও দু'জনের মধ্যে প্রায়ই মোবাইল ফোনে কথা হতো। কবির মেনকাকে বলত, তোমার পরিবার অন্য কোথাও বিয়ে দিলে আমার আপত্তি নেই। তবে তুমি নিজ থেকে কাউকে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারবে না। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়া চলে যায় কবির। ২০০৯ সালে ফিরে আসে। দু'বছরে মেনকাকে মাত্র দু'বার ফোন করে কবির।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসার পর আবারও দু'জনের মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। কবিরের ভাতিজি অদিতির মাধ্যমে দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। দেশে ফেরার পর রাজধানীর সোবহানবাগের অফিসার্স কোয়ার্টারে কবিরের এক বোনের বাসায় দু'জনের মধ্যে প্রথম দেখা হয়। এরপর তাদের মধ্যে একাধিকবার দেখা হয়েছে। কবির মাঝে-মধ্যে মেনকাদের বাসায় যাতায়াত করত।
প্রস্তুতি পর্ব : কবির পুলিশকে জানায়, সম্প্রতি প্রতি রাতেই মেনকার মোবাইল ফোনে কল করলে বিজি দেখাত। জিজ্ঞেস করলে সে বলত, 'আমি প্রশ্ন করা পছন্দ করি না। মাঝে-মধ্যে কথা বলার বিষয়টি অস্বীকারও করত। এরপরই খুন করার মনস্থির করে। গত ১০ জুলাই ফরিদপুরের এক কামারের দোকান থেকে আড়াইশ' টাকায় একটি ছুরি তৈরি করে। বুধবার ঢাকায় পেঁৗছে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেনকাদের বাসায় যায়। এর আগে মেনকাকে ফোন করে বলে, সে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফ্লাইট। মেনকার সঙ্গে দেখা করতে চায়। এরপর মেনকা কবিরকে বাসায় যেতে বলে। ঢাকায় পেঁৗছেই সে ওদের বাসায় যায়। বুধবারই ছুরিটি দেখিয়ে মেরে ফেলার কথা বললে বিশ্বাস করেনি মেনকা। বিকেল ৫টার দিকে জরুরি কাজের কথা বলে মেনকা বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে। আধা ঘণ্টার মধ্যে কবিরও বের হয়ে যায়। রাতে বাসায় ফিরে মেনকা কবিরের মোবাইলে ফোন করে। জানতে চায়, তার অবস্থান। কবির বলে, সে মোহাম্মদপুরে খালার বাসায় উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বাসায় যাওয়ার কথা বলে মেনকা।
রুদ্ধশ্বাস দেড় ঘণ্টা : বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মেনকাদের বাসায় প্রবেশ করে কবির। দুপুরের খাবারের পর মেনকার মা প্রেশার আর ঘুমের ওষুধ খেয়ে পৃথক রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। এই সুযোগে মেনকাকে নিয়ে তার বেডরুমে যায় কবির। এরপর ছুরিটি বের করে কবির। মেনকাকে সেটি দেখিয়ে বলে, তোমাকে মেরে ফেলব। এ কথাটা শুনে আগের দিনের (বুধবার) মতোই সে বলছিল, তুমি আমাকে মারতে পারো না। এ সময় মেনকাকে তার বেডরুমের খাট থেকে নামিয়ে ফ্লোরে রাখা হয়। একটি বালিশ দিয়ে মেনকার মুখের ওপর চাপা দিয়ে কবির বলতে থাকে, ছুরি দিয়ে নয়, বালিশচাপা দিয়ে তোমাকে খুন করব। এখনও সত্য কথা বল, কার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক। কোনো উত্তর না দেওয়ায় ছুরিটি হাতে নিয়ে কবির বলতে থাকে, তোমার নাক, কান কেটে ফেলব, যাতে কেউ তোমাকে বিয়ে না করে। এভাবেই রুদ্ধশ্বাস দেড় ঘণ্টা কাটে মেনকা-কবিরের। একপর্যায়ে মেনকা জানায়, সম্রাট নামে এক ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্রাটকে সে (মেনকা) বলেছে, তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে। এ কথা শোনার পরই উত্তেজিত হয়ে প্রথমে মেনকার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেন কবীর। মেনকার শরীর থেকে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে উপর্যুপরি তার সারা শরীরে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে স্বীকার করেন কবির।
বাড়িতে শোকের মাতম : গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মেনকার লাশ তাদের পাইকপাড়ার বাসায় নেওয়া হয়। এ সময় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মেনকার বাবা লুৎফে রব্বানী, মা হাসিনা রব্বানী ও একমাত্র ভাই মজিবল রব্বানী সবুজ। পুরো বাড়িতে ছিল শোকের মাতম। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা মধ্যপাইকপাড়ায়। জুমার নামাজের পর স্থানীয় একটি মসজিদে মেনকার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মিরপুর-১ নম্বর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
মিরপুর থানার অপারেশন অফিসার মোঃ আবু বকর মিয়া সমকালকে বলেন, ঘাতকের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্য মতে ধারণা করা হচ্ছে, খুনের পেছনে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ। ঘাতক কবিরের বাড়ি ফরিদপুরের নীলটুলিতে। তার স্টুডিও ও ফটোকপির ব্যবসা রয়েছে। কবির এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। মোবাইলের মেসেজ ও কথোপকথন যাচাই করছে পুলিশ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×