somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেজাল্ট- বৃত্তের পূর্ণতা.....!!!!

১৬ ই জুলাই, ২০১০ ভোর ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকক্ষণ ধরে মিনুর রোল নন্বর আর রেজাল্টটা চোখের সামনে নিয়ে বসে আছে জায়েদ!
চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে কখন বুঝতে পারেনি....


দুর্গম এলাকার অজপাড়াগাঁ থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে ইটপাথরের এই ঢাকা শহরে পারি জমিয়েছিলো.. আজ যেন তা পূর্ণ হবার পথে!! এই রেজাল্ট জায়েদের জন্য অনেক অনেক বড় কিছু।

আজ বিলাসী জীবন, গাড়ি, বাড়ী, সন্মানজনক পদে চাকুরী এসব খুব স্বাভাবিক মনে হলেও পথটা তেমন মসৃণ ছিলোনা!


কি ভীষণ কষ্টকর সময় গেছে - অচেনা শহর, অচেনা পরিবেশ অজানা মানুষের ভীড়ে গ্রাম থেকে আসা এক তরুণের! হাতের আঙ্গুলে গুনে শেষ করা যায় এমন অংকের অর্থ সম্বল করে এভাবে ঢাকা শহরে আসার দুঃসাহস কেউ করেনা বোধহয়..!



গালভরা ডিগ্রী না হলেও ভালো পরিবারের শিক্ষিত ছেলে, তাই অসহায়ত্বটা আরো বেশী। লেখালেখি করার শখ অথবা ক্ষমতাকে পুঁজি করে এতো বড় চ্যালেন্জ নেয়াটা ঠিক হয়েছিলো কিনা বুঝতে পারছিলোনা!! তবে চলেই যখন এসেছে, ঠিক বেঠিকের হিসেব নিকেশ পিছে ফেলে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরাটাই মূখ্য ছিলো। কোন অন্যায় অথবা অপরাধকে প্রশ্রয় দিবেনা, বাবা মা'র কাছে মাথা নত হয় এমন কাজ করবেনা.. শুধু এই দৃঢ়তাটুকু ছাড়া যেকোন কিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে...


প্রথম যেদিন পত্রিকার সম্পাদকের কাছে দুরু দুরু বক্ষে কাঁপা হাতে লেখা নিয়ে গিয়েছিলো, আজ খুব মনে পড়ছে সেদিনের কথা! একটি লেখা প্রকাশের সুযোগ, সৎ ভাবে কিছু উপার্জনের সুযোগের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা ছিলো তাঁর।

কতোদিন অনাহারে থেকেছে.. এক গ্লাস পানি আর ক্ষুধা নিবারনের জন্য একমুঠো বাদামের হুমায়ুন আহমেদের সেই ফর্মুলা যে প্রয়োগ করবে সেই উপায়ও ছিলোনা- বাদাম কেনার সামান্য টাকাকে তখন বিশাল অংক মনে হতো। প্রতি দিনের পরিধেয় কাপড় রাতে ধুয়ে আবার সকালের পরে বের হয়েছে। লোকলজ্জা, পারিবারিক অবস্থান ভুলে ঢাকা শহরের বস্তিতে থেকেছে; রিক্সাওয়ালা, কুলি মজুর আর গার্মেন্টস কর্মীদের পাশাপাশি, আজকের স্বনামধন্য জায়েদুর রহমান।

রিক্সা দূরের কথা, বাস ভাড়ার টাকা ছিলোনা অনেক সময়, দু পায়ে হেঁটে ছুটে বেরিয়েছে ব্যস্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। ক্লান্তি এসে গ্রাস করতে চাইলেও গাঁয়ে ফেলে আসা বাবা মা আর ছোট ভাইবোনদের মুখ মনে পড়ায় আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। কাঠ ফাটা রোদ আর ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জীবিকা আর জীবনের পিছনে ছুটেছে জায়েদ.. আজ তার গাড়ি আছে তবু সেই দিনের ক্ষয়ে যাওয়া স্যান্ডেল পায়ে ছুটে চলার স্মৃতি এতোটুকু ম্লান হয়নি।

পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে নিজের পড়াশুনা দায়সারা গোছের হলেও স্বপ্ন ছিলো ছোটভাইবোনদের পড়াশুনাটা ভালোভাবে করাবে.. তাঁরা যেন সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, তার মতো কষ্ট করে শুরুটা না হয়, এই চেষ্টাটা সবসময় তাড়া করে ফিরেছে।
সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিলো বাবা মা'কে নিয়ে। তাঁদের একটু আরাম, কিছুটা বিলাসীতায় যেন শেষ জীবনটা আয়েসে কেটে যায়, তার জীবনের লক্ষ্যই ছিলো এটা। তাই পিংকী যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, জায়েদে এক মুহুর্ত দেরী করেনি নিজের বাস্তবতা আর লক্ষ্য জানাতে, বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয় সেকথা জানাতে। পিংকী ছিলো নাছোড়বান্দা, হয়তো সে জায়েদের সততা, একনিষ্ঠতা আর কর্মক্ষেত্রে সুনাম দেখে বুঝতে পেরেছিলো জায়েদের দিন ফিরতে সময় নিবেনা। ঘটেছেও তেমন...

কর্মক্ষেত্রে সততা আর বিশ্বস্ততা দিয়ে খুব দ্রুত জয় করে সকলকে। কঠোর শ্রম ও কর্মদক্ষতার পাশাপাশি কাজকে ভালোবাসে সে, কাজের ব্যস্ততার মাঝেই যেন খুঁজে পায় আনন্দ, সদ্য ফেলে আসা অতীতের দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি.... ফলশ্রুতিতে আজ সে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ও সন্মানজনক পদে আসীন।

এই অবস্থানেও খুব নিশ্চিন্ত ছিলোনা কখনো!! তাই এতো বড় পদে আসীন হয়েও কর্তব্যে হেলাফেলা করেনি কখনও... নিজের এতোটুকু অসুস্থতায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে.. পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তার সুস্থতা যে বড় জরুরী। বাবা মা ভাইবোনদের কথা ভেবে বেঁচে থাকাটাই বড় গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, তাই হয়তো নিজের সুখ দুঃখ নিয়ে ভাববার সময় হয়নি কখনও...

তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ফল সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দিয়েছে। ভাইবোনরা এক এক করে পাড়শুনার পাঠ চুকিয়ে আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

ছোট্ট এই বোনটা শুধু বাবা মা'র কোল ঘেঁষে বড় হয়েছে। প্রায় এক হাতে সামলে রেখেছে গাঁয়ের সংসার আর বুড়ো বাবা মা'কে। সেই বোনটার এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে... খুব ভালো ভাবে পাশ করেছে সে। এ প্লাস পেয়েছে।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভিজে যাওয়া গালে হাত রাখে জায়েদ.. মিনুটা যেন সুখি হয় জীবনে.. অনেক অনেক বড় হয়। অনাহার আর অনিশ্চয়তার কষ্ট যেন তাকে কখনও স্পর্শ না করে...

আজ বোনটাকে ভালো কোন উপহার দিতে ইচ্ছে করছে। বাসায় ছোট্ট বুড়িটার পছন্দের খাবার রান্না করবে নিশ্চয়। আইসক্রীম খুব পছন্দ করে বোনটা- বাসায় আজ মিষ্টি উৎসব হবে, সাথে আইসক্রীম..



ফোনের দিকে হাত বাড়ায় জায়েদ.. মা'কে ফোন করে রেজাল্টের খবরটা জানাতে হবে।





উৎসর্গ: জায়েদের মতো বড় ভাইবোনদের, যাঁরা নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে বাবা মা ভাইবোনদের জীবন গড়ে তোলার সংগ্রামের যুদ্ধ করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:০৮
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×