somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভূমিশক্তির উত্তরাধিকার

১৬ ই জুলাই, ২০১০ ভোর ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভূমিশক্তির উত্তরাধিকার
ফকির ইলিয়াস
========================================
শেষ পর্যন্ত জামায়াতের আরও দুই নেতা কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামায়াতের এই দুই নেতার অতীত ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। একাত্তরে এই দু'জন শুধু অখ- পাকিস্তানের পক্ষেই কাজ করেননি, তারা মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধ, অগ্নিসংযোগ, নরহত্যার মতো জঘন্য কাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর আগে জামায়াতের আরও তিন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা রিমান্ডে নানারকম চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা ও লালনে একাত্তরের পরাজিত শক্তির যে মদদ ছিল, তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে দিনে দিনে।
একটি বিষয় খুবই রহস্যজনক, এসব পরাজিত শক্তির শিকড় কিন্তু এই জামায়াতিদের হাতেই। যারা একাত্তরে বাংলাদেশে নরহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিল তারাই এখন জঙ্গিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর তাই আজ সঙ্গত কারণেই দাবি উঠেছে এই বিষফোঁড়াদের সমূলে উৎপাটন করা হোক।
সদ্য গ্রেফতারকৃত দুই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে জামালপুরে লুটতরাজ ও ঢাকার মীরপুরে গণহত্যার ফিরিস্তি ছাপা হচ্ছে পত্র-পত্রিকায়। এই দুই নেতার গ্রেফতারের পরও বিএনপির সিনিয়র নেতারা জামায়াতের পক্ষ নিয়েছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে বলেছেন সরকার নাকি স্বৈরাচারী আচরণ করছে।
গণহত্যার নেতৃত্বদানকারী এবং পরিকল্পনাকারীদের বিচার সেই আইনেই করা হোক। এমন দাবি দেশজুড়ে যখন জোরালো হচ্ছে তখনই ডানপন্থি বিএনপি এবং তাদের দোসররা ঘোলাজলে মাছ শিকারে নেমেছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে পুঁজি করে এরা নানা মতলব হাসিল করার চেষ্টা করছে। সন্দেহ নেই ছাত্রলীগের খুনোখুনি গোটা দেশবাসীকে তটস্থ করে তুলেছে। সম্প্রতি সিলেটে উদয়ন সিংহ পলাশ নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুরো ছাত্র সমাজ। ছাত্রলীগ কি তবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে অন্য কোন ফায়দা হাসিলে মাঠে নেমেছে? এ প্রশ্নটি আসছে নানা মহল থেকে।
ছাত্রলীগকে সরকার সামাল দিতে পারছে না। এর দায় সরকারকে এড়ানোর কোন সুযোগ আছে বলে কেউ মনে করছেন না। তারপরও এমন নগ্ন ব্যর্থতা কেন? তবে কি ঘাতক-রাজাকারদের বিচারের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করার জন্য কবর খুঁড়ছে কেউ? এ বিষয়ে আর কোন ভাষায় বললে যে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বুঝতে পারবেন, তা বোধগম্য হওয়ার নয়।
সরকারের চারদিকে সমস্যার পাহাড় জমা হচ্ছে ক্রমেই। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ওবায়দুল কাদের, লতিফ সিদ্দিকীরা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী পক্ষান্তরে নিজামী-মুজাহিদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। গামছা প্রতীক নিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্ম দিলেও কাদের সিদ্দিকী যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তা বেমালুম তিনি ভুলেই যাচ্ছেন। এই যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্রান্তিকাল, এর জন্য দায়ী কে বা কারা? মনে হয় তাও আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে সবাইকে ভেবে দেখা দরকার।

দুই.
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম স্খলন আমরা পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবেই দেখেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) এমএ জলিল নিজেই ক্রমশ হয়ে গিয়েছিলেন বিপরীত মেরুর মানুষ। বলেছিলেন 'অরক্ষিত স্বাধীনতার নামই পরাধীনতা'। আমার ভাবতে এখনও লজ্জা লাগে একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সেক্টর কমান্ডার হয়ে পড়েছিলেন কতিপয় ভন্ডদের সিঁড়ি। মেজর জলিলকে ব্যবহার করে সেই অপশক্তিরা নিজেরাই পুনর্বাসিত হওয়ার জন্য ছিল মরিয়া। তারা সে সুযোগ কাজেও লাগিয়েছিল। ভিন্ন মত পোষণের জন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জন্ম দিলেও জলিল-রব-সিরাজুল আলম খানরা নিজেরাই ছিলেন মনেপ্রাণে বুর্জোয়াতন্ত্রের ধারক-বাহক। ফলে বর্তমান বিশ্বে ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিংবা হুগো শ্যাভেজ অথবা প্রতিবেশী জ্যোতি বসুর মতো কমরেড চিরঞ্জীব হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার ধারকরা তেমন উচ্চাসনে পেঁৗছাতে পারেননি। কেন পারেননি? আর পারেননি বলেই তাদের একটি অংশ মৌলবাদী শক্তির ভিকটিম হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনার সঠিক পথ না খুঁজে, সাম্প্রদায়িক শক্তির তল্পিবাহক হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
এটা সবাই জানেন, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কোন রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা কখনোই উঁচু রাখতে পারে না। যেমনটি পারেনি পাকিস্তান। সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদের মদদ দিয়েছিলেন। তাই জঙ্গিরা রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়েই আজ এমন বলীয়ান। খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে ক্ষমতার স্থায়ী বন্দোবস্ত চেয়েছিলেন। তাই এই দেশে গড়ে উঠেছিল বাংলাভাই, শায়খ রহমান। সামরিক স্বৈরশাসকের উৎস থেকেই জঙ্গিবাদ ডালপালা মেলেছে। এমন উদাহরণ এখন আর অস্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশের ভূমিশক্তির প্রকৃত মালিক ৩০ লাখ শহীদের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারীরা। এই প্রজন্ম, যারা একটি সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই এগিয়ে যেতে চায়। তাদের চোখে ঐতিহাসিক সত্যগুলোকে লুকানোর কোন সুযোগ নেই। অথচ সেই কাজটিই খুব কৌশলে করতে চাইছে কিছু তস্কর রাজনীতিক। ভাবতে অবাক লাগে তারা বলে বেড়ায় দেশের সিংহভাগ মানুষ নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না।
যারা নরঘাতক, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা করেছিল তাদের বিচার জনগণ চাইবে না- এটা কেমন কথা? এ কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে? এসব পাকিস্তানি দালালদের মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ ভালই জানে এবং বোঝে।
দালাল রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া যতই অগ্রসর হবে ততই এই ভূখ-কে অস্থির করে তোলার অপচেষ্টা করবে একটি মহল। সে বিষয়ে সরকারকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। আমরা জানি, সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বারবার বলেছেন, তারা প্রতীকী বিচার করবেন। রাষ্ট্রের মানুষ আশা করবে, প্রতীকী এই বিচার যেন প্রহসনের বিচারে পরিণত না হয়। এ দেশের আপামর জনসাধারণ '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্রকৃত বিচার চায়।
নিউইয়র্ক, ১৪ জুলাই ২০১০
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৬ জুলাই ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- ভেরা এ্যন বীন
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×