somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বর ও পরীর গল্প

১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পানি, পানি একটু পানি খাবো।

প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে বলে দীপ। কেউ এগিয়ে আসে না। মাথার কাছে মস্তবড় জানালা খোলা, সেখানে আকাশ আছে, আছে লক্ষ লক্ষ তারা আর এক খানা চাঁদ। দীপ কতকটা ঘোরের মাঝে আর কতকটা পিপাসায় হা করে চাঁদের আলো গেলে। বাইরের নারিকেল গাছটা ভীষন রকম দুলতে থাকে। মনে হয় ঝড় আসবে, ঝড়।


কখন জ্ঞান হারায় দীপ জানে না। একসময় তার মনে হয়, মাথায় কেউ পানি ঢালছে, বরফশীতল পানি। এই ভ্যাপসা গরমে পানি এত ঠান্ডা হলো কি করে! ফ্রিজ জিনিসটা কেনা হয়নি, দরকারের জিনিস। কিন্তু ঐ যে আলসেমি। বাইরে সত্যি ঝড় শুরু হয়ে গেছে, প্রলয়ংকারী ঝড়। কয় নাম্বার সিগনাল চলছে কে জানে! জাহান্নামে যাক দুনিয়া। আহ! শান্তি। শীতল পানির জলধারা।


তোমার আসতে কষ্ট হয়নি? বাইরে ব্যাপক ঝড়।

নাহ্‌, ঝড়ের মাঝে আসতে আমার আরো সুবিধে।
খিলখিল করে হেসে বলে পরী। এই হাসি দীপের খুব ভাল লাগে। সে উলটো ঘুরে পরীর মুখটা দেখে। কী অদ্ভুত মায়ায় যত্ন করে পানি ঢালছে।

আচ্ছা, তিনদিন ধরে আমার জ্বর। জ্বরের চোটে আমার এই আছি এই নাই অবস্থা। আর মাত্র তোমার আসার সময় হল? – অভিমানী কন্ঠে বলে দীপ।

কয়দিন পর পর জ্বর বাঁধাবা আর আমি এসে তোমার সেবা করবো, না? বৃষ্টি হলেই বুঝি ভিজতে নামতে হবে? তুমি কি কখনো বড় হবে না! – রাগ দেখায় পরী।

কী করবো বলো? বৃষ্টি দেখলে যে মাথা ঠিক থাকে না। লাফালাফি করতে মন চায়। এই দেখো কী সুন্দর ঝড় হচ্ছে। আমার সাথে ভিজবা, পরী?

চুপ, একদম চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি মাথায় পানি ঢালতে থাকি। জ্বর সেরে যাবে। তুমি ঘুমাও।

পরী, একটা গান শোনাবা!

পরী গাইতে শুরু করে আর শান্তির ঘুমে তলিয়ে যায় দীপ।
“দূর বনান্তে ছায়া নামে / সন্ধ্যে ঘনায় ঐ বুঝি
এই বিষণ্ণ দিন শেষে / তোমারেই শুধু খুঁজি”




হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে দীপের। পরী, পরী তুমি কই?

এই তো আমি এখানে, তোমার পাশে। দীপের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় পরী।

বাহ্‌, তোমার জ্বর সেরে গেছে একদম। এখন বলো তুমি কি খাবা?

উমম, গরম ভাত আর বেগুন ভাজি। - উত্তর যেন তৈরী ছিল দীপের কাছে।

আচ্ছা, তুমি একটা মিনিট বসো। আমি দেখি কি করতে পারি!

দীপ উঠে বসে। চলো আমি তোমাকে হেল্প করি।




গরম ভাতের ধুঁয়ো উঠছে। দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। ধুস্‌, কারেন্ট চলে গেল। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে মাঝখানে বসিয়ে দেয় দীপ। মোমের আলোয় কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পরীকে!

দীপের দুষ্টামি জাগে মাথায়। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। মুখে তুলে খাইয়ে দিবা?

আহ্লাদী একটা! – পরী সোহাগ করে দীপকে খাইয়ে দেয়। অনেক অনেক দিন পর দীপ খুব স্বাদ করে ভাত খায়, এক মুঠো গরম ভাত।



তারপর? তারপর শীতলপাটি বিছিয়ে বারান্দায় বসে দুজনে। ঝড় থেমে গেছে। বাইরে মিষ্টি জোছনা। পরীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে দীপ। আরামে তার চোখ বুজে আসে। চুলে হাত বুলিয়ে পরী গান ধরে –

“ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান / ঘুমাও আমার কোলে
ভালোবাসার নাও ভাসাবো / ভালোবাসি বলে”




মোবাইলের তীক্ষ্ণ চিৎকারে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে দীপ। চারপাশের আলোর খেলায় বুঝতে পারে বেলা অনেক আর সে আছে বারান্দায়। জ্বরের ঘোরে কখন বারান্দায় এসে ঘুমিয়েছে সে মনে করতে পারে না! মোবাইল বেজে চলছে ননস্টপ।

ঐ দীপ, কি অবস্থা তোর? জ্বর সারছে কিনা বল। দুইদিন ধরে অফিস করিস না। এইমাত্র বস এসে তোর কথা জিজ্ঞেস করে গেছে। অবস্থা সুবিধার না।

আমি আসতেছি। আধাঘন্টার মধ্যে আসতেছি দোস্ত। জ্বর সেরে গেছে।
দৌড়ে শাওয়ার সেরে খাবার টেবিলে যায় দীপ। এক পিস অবশিষ্ট বেগুন ভাজা আর বাসী ভাত দিয়ে নাস্তা করে আবার দৌড় লাগায়। এই দৌড়ে তাকে জিততে হবে, জীবনের দৌড়।


-------------------------------------------

১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কোকের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানা: ফিলিস্তিনি স্টেইটহুড, স্বনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অসমম্মান করে।

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:১৭

কোকা-কোলার পূর্ব জেরুজালেমের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানাটিকে ঘিরে শুরু থেকেই তীব্র বিতর্ক আছে। এই এলাকাটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিপক্ক প্রেম: মানসিক শান্তি

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০






জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছানোর পর, মানুষ যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, তখন প্রেমের মাপকাঠি বদলে যায়। তখন আর কেউ প্রেমে পড়ার জন্য শুধু সৌন্দর্য, উচ্ছ্বলতা, কিংবা সুগঠিত দেহ খোঁজে না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১১




১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

অশুদ্ধ বেনজীরের ‘শুদ্ধাচার’ পুরস্কারের কী হবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৭


যুক্তরাষ্ট্র যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেনজীর আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, এর সাড়ে ছয় মাস পর সরকার তাঁকে মহিমান্বিত করেছে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ দিয়ে। সেই হিসেবে বেনজীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×