নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের তাগিদের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।
Published : 23 Aug 2013, 03:24 PM
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন।
আগামী নির্বাচন, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা হয় তাদের মধ্যে।
“প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, সংবিধান মেনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। আগামী মাসে সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। বিরোধী দল যদি কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চায়, তাহলে সরকার তাদের ওয়েলকাম জানাবে।”
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের পরিস্থিতি জানতে চান। প্রধানমন্ত্রীও সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, তার সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী। আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তার সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বান কি-মুন কথোপকথনের শুরুতেই শেখ হাসিনার কুশল জানতে চান। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়া এবং ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সমবেদনা জানান বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান উপদেষ্টা।
“দীর্ঘ আধা ঘণ্টার আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ নির্মূলে তার পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসা অর্জনে করেছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান তিনি।
“বান কি-মুন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জঙ্গিবাদবিরোধী পদক্ষেপ আরো সফল হবে।”
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “অতীতে দেশে অসাংবিধানিক পথে অথবা রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক পথে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ নিশ্চিত করতে চান।”
প্রধানমন্ত্রী গত সাড়ে চার বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের কথাও বান কি-মুনের কাছে তুলে ধরেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “প্রধামন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন, এইসব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ৬৪ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। তারপরও এসব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও প্রভাবমুক্তভাবে হয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমে ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরারও এর প্রশংসা করেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, তিনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এ কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকে সংলাপের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টিও তিনি বান কি-মুনকে জনিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তার উপদেষ্টা বলেন, “দুঃখের বিষয়, বিরোধী দলীয় নেতা ওই প্রস্তাবের জবাবে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দেন। এতে দেশে সহিংসতা ও নাশকতামূলক তৎপরতায় ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্টের ঘটনা ঘটে। জনগণের দুর্ভোগ ও রাজনেতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, যা দেশের জনগণের কাছে কাম্য নয়।”
সংলাপের বিষয়ে সংসদে বিরোধী দলের মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার প্রসঙ্গটিও বান কি-মুনের সঙ্গে আলোচনায় আসে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সরকার আলোচনা করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিরোধী দল ওই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে আলোচনার সুযোগ নষ্ট করে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের আগে সর্বোচ্চ আদলতের রায়ের বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটিতে বিরোধী দলকে ডাকা হলেও তারা আসেনি।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সাংঘর্ষিক। ওই রায়ের প্রেক্ষিতে বিশেষ কমিটি গঠন করে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।”
সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।
সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষভাগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, যা নিয়ে বিরোধী দলের আপত্তি।
বিরোধী দলীয় নেতাকে আগে সংলাপের জন্য ডাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন সংবিধান থেকে তার সরকার ‘এক চুলও’ নড়বে না। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া পরদিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন তার দল মানবে না।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এই মুখোমুখী অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সমঝোতা ও সংলাপের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রধান দুই দলের সমঝোতা হলে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় কেটে যেতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।