somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের অপরিকল্পিত পরিবার !

১২ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্বে যাদের কাঁধে, সেই তারাই মানছেন না জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। তাদের অনেকের ঘরেই রয়েছে গণ্ডায় গণ্ডায় বাচ্চা কাচ্চা। ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা পরিকল্পিত পরিবারে বিশ্বাসী নন। সুখী পরিবার গঠনের স্লোগানটি তাই বই-পুস্তক, লিফলেট, ব্যানার আর বিলবোর্ডেই থেকে গেছে, ঠাই পায়নি তাদের নিজেদের পরিবারে। ‘প্রতিটি জন্মই পরিকল্পিত’-এ নজির তারা নিজেরাই রাখেননি।

অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারের আকৃতি ছাপিয়ে গেছে সরকার ঘোষিত ছোট পরিবারের আকারকে। একটি দুটি বা তিনটি নয়, কারো কারো সন্তান সংখ্যা ডজন ছাড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বে আসা মহাপরিচালক পর্যায়ের মাত্র তিন জন কর্মকর্তা পরিবার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করেছেন। এই ত্রয়ী নিজেদের পরিবার ছোট রাখলেও বাকি সবাই জনবিস্ফোরণের পথে হেঁটেছেন আর ক্রমাগত বাড়িয়ে গেছেন পরিবারে নতুন মুখের সংখ্যা।
১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালনকারী ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই দুই বা তারও বেশি ছেলে-মেয়ের বাবা।

সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক, প্রকল্প কর্মকর্তা, ফিল্ড সুপারভাইজার এবং অন্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বাস্তবে দুই বা তারও বেশি সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারেও এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অনীহ। উপ-পরিচালক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত একশ’রও বেশি কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ৯ জন জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ তথ্য জানা গেছে খোদ অধিদপ্তর সূত্রে ।

‘ছেলে হোক মেয়ে হোক - দু’টি সন্তানই যথেষ্ট’ এ স্লোগান পাল্টে গিয়ে এখন ‘আর দু’টি নয়- ছেলেই হোক একটি, আর মেয়েই হোক একটি’ স্লোগান দেশবাসীকে শোনানো হচ্ছে। অথচ এ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরাই অপরিকল্পিত পরিবার গড়ে তুলছেন। এর মধ্য দিয়ে পুরো অধিদপ্তরের কার্যক্রমই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সাবেক মহাপরিচালক মীর শাহাবুদ্দিনের তিন মেয়ে। আরেক সাবেক মহাপরিচালক এম তবিবুর রহমানের চার ছেলেমেয়ে, স্ত্রীও একাধিক।
প্রায় একইভাবে শফিউদ্দিন আহম্মেদ, মোহাম্মদ নাজমুল হক, তসলিমুর রহমান, কর্নেল আব্দুল লতিফ মল্লিকসহ ১১ জন সাবেক মহাপরিচালকের ছেলে-মেয়ের সংখ্যা তিন জন কিংবা তার বেশি। কর্নেল (অব.) হাসমত আলীর ছেলে মেয়ের সংখ্যা ৫।
তবে মহাপরিচালক পদমর্যাদার মাত্র তিন কর্মকর্তা পরিবার-পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও সরকারি নীতিমালাকে নিজেদের জীবনে অনুসরণ করে এক সন্তানের ছোট পরিবার গড়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাই নন, বরং পরিচালক থেকে শুরু করে পদস্থ কর্মকর্তারাও বেশি সন্তানের জনক-জননী হয়ে বড় পরিবার গড়ে তুলেছেন।
পরিচালক এনামুল হকের তিন মেয়ে, এক ছেলে। পরিচালক (প্রশাসন) নওয়াব আলীর দুই ছেলে এক মেয়ে। উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ চার সন্তানের পিতা। পরিচালক মোন্তাজ উদ্দিনের দুই ছেলে এক মেয়ে।
১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৯ জন মহাপরিচালক দায়িত্বে এসেছেন। নিচে তাদের নাম,দায়িত্বকাল ও সন্তান সংখ্যার বিবরণ দেওয়া হল-


মহাপরিচালকের নাম:

কর্নেল হাসমত আলী,
দায়িত্বকাল: ২৩-৪-১৯৭৬ থেকে ২০-১১-১৯৭৮; সন্তান সংখ্যা: তিন মেয়ে দুই ছেলে

কর্নেল এল এ খান
দায়িত্বকাল: ২১-১১-৭৮ থেকে ০৫-০৪-১৯৮০
সন্তান সংখ্যা: দুই ছেলে দুই মেয়ে

কর্নেল হাসমত আলী, দায়িত্বকাল: ০৬-০৪-৮০ থেকে ১০-০৬-৮৩
সন্তান সংখ্যা: পাঁচ ছেলে মেয়ে


কর্নেল আবু হেনা
, দায়িত্বকাল: ১৩-০৬-৮৩ থেকে ০৬-০৬-৮৫, সন্তান সংখ্যা: তিন সন্তান

কর্নেল লতিফ মল্লিক, দায়িত্বকাল: ০৬-০৬-৮৫ থেকে ১৬-১১-৮৭, সন্তান সংখ্যা: তিন মেয়ে এক ছেলে

তসলিমুর রহমান, দায়িত্বকাল: ১৬-১১-৮৭ থেকে ০১-০২-৮৮, সন্তান সংখ্যা: এক ছেলে এক মেয়ে

নাজমুল হক, দায়িত্বকাল: ১২-০৬-৯০ থেকে ১৭-০৩-৯২, সন্তান সংখ্যা: দুই মেয়ে এক ছেলে

এম তবিবুর রহমান, দায়িত্বকাল: ১৪-০১-৯৯ থেকে ২৩-০১-৯৯, সন্তান সংখ্যা: চার ছেলে

শফিউদ্দিন আহমেদ, দায়িত্বকাল: ২৩-০১-২০০০ থেকে ২৭-০৭-২০০০, সন্তান সংখ্যা: দুই ছেলে এক মেয়ে

মীর শাহাবুদ্দিন, দায়িত্বকাল: ০৯-০২-২০০১ থেকে ১২-০২-২০০২, সন্তান সংখ্যা: তিন মেয়ে

ফজলুর রহমান, দায়িত্বকাল: ১৯-০২-২০০২ থেকে ২৬-১০-২০০৪, সন্তান সংখ্যা: ১ ছেলে ১ মেয়ে

এম এ আকমল হোসেন, দায়িত্বকাল: ২৭-১০-২০০৪ হতে ০৫-০৭-২০০৬, সন্তান সংখ্যা: ১ মেয়ে

ডা. মো. সিরাজউদ্দৌলা, দায়িত্বকাল: ০৫-০৭-২০০৬ হতে ১৬-০৭-২০০৬, সন্তান সংখ্যা: তিন সন্তান

আয়ুবুর রহমান খান, দায়িত্বকাল: ১৭-০৭-২০০৬ হতে ২৪-০৭-২০০৬, সন্তান সংখ্যা: ৩ সন্তান

মু. আব্দুল মান্নান, দায়িত্বকাল: ২৫-০৭-২০০৬ হতে ১৭-০১-২০০৮, সন্তান সংখ্যা: ১ মেয়ে

কামরুন্নেসা খানম, দায়িত্বকাল: ১৭-০১-২০০৮ হতে ০৫-০২-২০০৯, সন্তান সংখ্যা: ১ ছেলে

গণেশ চন্দ্র সরকার, দায়িত্বকাল: ০৫-০২-২০০৯ হতে ১১-০২-২০০৯, সন্তান সংখ্যা: ২ সন্তান

মো. আব্দুল কাইয়ুম, দায়িত্বকাল: ১১-০২-২০০৯ হতে চলতি দায়িত্ব পর্যন্ত
সন্তান সংখ্যা: ১ ছেলে, ১ মেয়ে
------------------------------------------------------------------------------
পিছিয়ে নেই কর্মচারীরাও। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অওতাধীন ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইউনিট (টেমু)’তে চাকরিরত শামসুদ্দিন নামের এক কর্মচারী এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ে করে ১৮ সন্তানের পিতা হয়েছেন।

এদিকে, ২০০৪-’০৫ সাল থেকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নতুন স্লোগান প্রচার করে। ‘আর কুড়িতে বুড়ি নয়Ñতিরিশে সুন্দরী’ স্লোগান তুলে কম বয়সের মেয়ে বিয়ে দেওয়া বা বিয়ে করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ আদর্শটিও পালন করছেন না।

স্লোগানটির প্রচারকালেই স্কুলপড়–য়া ষোড়শী মেয়েকে মহা ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছেন এক উপ-পরিচালক। তার যুক্তি, ‘দেশের যা অবস্থা তাতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদাই চিন্তিত থাকতে হয়। তাছাড়া সব সময় ভালো পাত্র পাওয়াটাও তো মুশকিল!’
(সূত্র: বাংলনিউজ২৪.কম)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারকে সবাই কৃত্রিম সন্মান দেখায়েছে, বেনজিরকে মিথ্যা স্যার ডেকেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



এমপি আনার ৪/৫ শত ক্যাডারকে লালন পালন করতো, সবাই তাকে "ভাই" ডাকতো; কত কলেজের শিক্ষক, প্রিন্সিপাল, থানার দারোগা উনাকে স্যার ডেকেছে; পার্লামেন্ট ভবনে উনাকে কত আদর করে খাবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×