somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সিনেমা সিনেমা প্রেম কাহিনী: ভাল লাগার ১০০% গ্যারান্টি বিফলে জরিমানা সহ মূল্য ফেরত

১১ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম

ফকির আবদুল মালেক

১.
ব্যাক্তিগত পরিচয়ের সুত্র ধরে একজন পত্রিকার রিপোর্টারের সাথে, যার দু’টি ফ্রি-পাস ছিল, কয়েকদিন আগে একটি সঙ্গীত সন্ধ্যা উপভোগের সুযোগ পাই।
চল্লিশের কাছাকাছি বয়স, উজ্জ্বল চেহারা, জ্বল-জ্বল করে জ্বলতে থাকা দৃষ্টিনন্দন চোখ, ঝাকড়া-লম্বা চুলের বর্তমান সময়ের আলোচিত একজন শিল্পী তার নিজস্ব ঢং-এ সঙ্গীত পরিবেশন করছিল। একটি পাশ্চাত্য ক্লাসিক সুর আর মিউজিক কম্পোজিশনের চমৎকার মাধুর্যতায় সমস্ত অর্ডিয়েন্স স্তম্ভিত মুগ্ধতার স্থবির হয়ে আছে।
“একটি গল্প আছে এই লোকের,” রিপোর্টার বলছিল,“পত্রিকা থেকে এই শিল্পীর উপর একটি ফিচার তৈরী করার নির্দেশ পাই। সঙ্গীত নিয়ে তিনি এক ধরনের পরীক্ষায় নেমেছেন। পশ্চিমের ক্লাসিক ধারার গানের মুল থিমটি আয়ত্বে এনে তিনি বাংলা গানে তার প্রয়োগ করছেন। বলার অপেক্ষা কি, তিনি সফলতা পাচ্ছেন। আমি তার বাড়ি যাই, তার জীবনের ঘটনাটি আমাকে বিস্মিত করে। তুমি তো জানো বর্তমানে হাসির নাটকের কি কদর টিভিতে। সিরিয়াস কোন নাটকই এখন আর পাবলিক খাচ্ছে না। এখন আমি একটি হাসির সিরিয়াল করছি, তুমি জান। না হলে তাদের জীবন নিয়ে একটা নাটক হতে পারত। তুমিতো ট্রেজেডি গল্প লিখ, হয়ত কোন গল্পের ক্লু খুজে পেতে পারো। আমি তোমাকে
বিস্তারিত বলব।”
সেই সন্ধ্যার পর আমার বন্ধু, পত্রিকার রিপোর্টার কাম টিভি’র কামিক সিরিজ কাহিনীকার আমাকে বিস্তারিত বলে।
“আমি কোন কারন খুজে পাই না” বলি আমি, যখন সে উপসংহারে চলে আসে, “ কেন তা একটি কৌতুকপূর্ণ কাহিনী হবে না! ঐ তিনজন কোন অবস্থাতেই এতটা উদ্ভট, অয়ৌক্তিক চরিত্রে এত সুন্দর অভিনয় করতে পারত না, যদি তারা সত্যিকারের নামী দামী অভিনেতা হতেন। আমি সত্যি ভয় পাই, মনে হয়, যেভাবেই হোক পৃথিবীটা একটা মঞ্চ আর সমস্ত নর-নারী এক একজন দক্ষ কমেডি অভিনেতা। এটা সত্যি একটা প্রাকৃতিক প্রহসন হবে।”
“চেষ্টা করে দ্যাখো... ” বন্ধু বলে।

২.
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার রোডে বাড়িটি অবস্থিত। গত পঁচিশ বছর যাবৎ এর নিচ তলায় একটি বেশ বড় শো-রুম দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য নিয়ে চলে আসছে যেখানে নানা ধরনের বুটিকস্ এর পোশাক বিক্রি করা হয়।
বিশ বছর আগে খুব সাদামাটা বিয়ের অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয় এই শো-রুমটির উপরের তলায়। বিধবা তাহমিনা বাড়িটি ও শো-রুমের মালিক। তার কন্যা হেলেন ও বাশেদুল বারী রাশেদ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তানভীর আহমেদ তুহিন এক প্রাণবন্ত যুবক, ব্যবহারে, সৌন্দর্যে আর অর্থবিত্তে, সমস্ত অনুষ্ঠানটি অলোকিত করে রাখে নানা কৌতুকে। হেলেন তখন আঠার, শহরে শিক্ষিতা, কন্ঠশিল্পী আর সুন্দরী হিসাবে যার সুনাম ছড়িয়ে পরেছিল।
রাসেদ ও তুহিন দুজ’ন ঘনিষ্ট বন্ধু যারা একটি নাট্যদল ও সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে বেশ সুনাম অর্জন করে। দুহাতে পয়সা খরচ করে তারা যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এই গল্পের মজার দিকটি এখান থেকেই শুরু। দুজনেই হেলেনের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছিল। যখন রাশেদ জয়ী হয়ে যায়, তুহিন তাকে স্বাগত জানায়, বুকে জড়িয়ে ধরে ক্লেশহীন ভাবে।
বিয়ের পর পরই নব-দম্পতি পাহাড়ের দিকে খুব সম্ভবত: বান্দরবনের দিকে চলে যায় যেন তারা ভ্রমনের পোষাকেই বিয়ে করে। একদিন রাশেদ একটু বাইরে গেছে, কি যে পাগল লোকটা আদিবাসীদের সাথে কথা বলতে গেছে, ওদিকে হেলেন আজ সেজেছে দারুন করে, একটা পাহাড়ী ফুল চুলে গুজিয়ে দিয়েছে , একটু যত্ন করে পরিচ্ছন্ন হয়ে রাসেদের জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সময় হঠাৎ আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলতে জ্বলতে তুহিন কটেজে প্রবেশ করে, সে ছিল উদভ্রান্ত, চোখদু’টি সিদুরের মতো লাল ছিল তার, সে পাগলের আচরণ করছিল, চিৎকার চেচামেটি করে এই নিরব প্রকৃতিকে বাজারে পরিনত করে তুলেছিল, বলছিল,“ আমি সব হারিয়ে ফেলেছি, হেলেন, আমি তোমাকে ছাড়া নি:স্ব একা। এসো আমরা অন্য কোথাও চলে যাই, আমি তোমাকে ছাড়া বাচব না”
৩.
হেলেন ভয়ে পাংশু ছিল। ক্রোধে তার চোখ দুটি জ্বলছিল, একরাশ ঘৃণা নিয়ে বলেছিল ‘ভদ্রেলোকের মতো’ কথা বলতে। কিছুক্ষণের ভিতর সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। সে বিনম্র আচরণ করে, তুহিনের ছেলেমানুষি আচরণের ভিতর গহীন ভালবাসা দেখতে পায় আর বলে যে, “ তোমার হৃদয় নিসৃত আবেগ আমার স্মৃতিতে সারাজীবনের কান্না হয়ে থাকবে” এবং দ্রুত তাকে চলে যেতে বলে।
“আমি চলে যাব” তুহিন বলে,“ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে । আমি কিছুতেই থাকব না যেখানে তুমি অন্য কারো হবে। আমি অন্য কোথাও চলে যাব আন্য কোন পরিবেশে অন্য জীবন খুজে নিব, কিন্তু তোমাকে কোনদিন ভুলে যেতে পারব না” বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
“খোদার দোহাই তোমার” হেলেন বলে, “কেউ হয়ত এদিকটায় আসছে।” তারপর নাটকীয়ভাবে হাটুর উপর বর দিয়ে তার ফর্সা নরম হাতখানি মেলে ধরে। তুহিন তার বাড়িয়ে দেয়া হতে চুম্বনে সিক্ত করে দিল।
বিদায়ী চুম্বনখানি হেলেনের হাতে চিত্রময় হয়ে রইল এবং সে জানালা দিয়ে প্রস্থান করল আর হেলেনের জীবন থেকে হারিয়ে গেল।

৪.
পাঠক, দৃশ্যগুলো কল্পনা করতে পারেন। জীবন নাটকের যেসব দৃশ্যগুলো চলে স্বাভাবিক, সচল, মন্থর গতিতে তা যখন স্মৃতিতে চলে আসে তখন আনন্দের দৃশ্যগুলো কান্না তৈরি করতে পারে। ধরা যাক, ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজছে, বেহালার করুন সুর, বাশির তীব্র ব্যাথা জাগানিয়া চিক্কণ সুমধুর তান। তার মাঝখানে আমরা দৃশ্যগুলো সম্পাদানা করে নেই।

রাশেদ, একজন সহজ সাধারণ মানুষ। গান গাওয়ার চেষ্টা করছে হারমোনিয়ামে। সা রে গা মা...। না হচ্ছে না কিছুতেই। হেলেন শুধরে দেয়ার চেষ্টা করছে। বার বার ছুয়ে যাচ্ছে আঙুল, হেলেনের কাঁদ ঝুকে এসে স্পর্শ করছে রাশেদের কাঁদ, আর হৃদয় দুটি কাপছে ভালবাসার গহীনতম ঝড়ে। কিম্বা ব্যাকগ্রাউন্ডে পাহাড়ের স্তব্ধতা, বাতাসের হু হু রোমান্থন আর কটেজের ভিতর যৌনাবেগ কম্পমান দুটি নর-নারী। কিছুতেই বাধ মানতে চাইছে না রাশেদের অথচ প্রকৃতির হেয়ালীপনার এক সপ্তাহের মেয়েলি রক্তাক্ত অবস্থার প্রতিবন্ধকতা। অবশেষে গোছলে শুদ্ধ হয়ে প্রতীক্ষায় ছিল হেলেন। কোথা থেকে পাগলের মতো তুহিনের আগমন, উদভ্রান্ত প্রেম নিবেদন, শান্ত হয়ে ফিরে যাওয়া। হেলেনের দুজন প্রেমিক একজন তার স্বামী, আর একজন স্বামীর বন্ধু কেউ আর ফিরে এলো না দৃশ্যপটে....
এবং এখন যেহেতু নাটকের দৃশ্যপট বদলে গেছে, বিশ বছরে বাস্তব পৃথিবীতে ঘটে গেছে অনেক বিয়ে,মৃত্যু, জন্ম,,ধনী-গরীব, সুখী আর দু:খীদের পদচারনায় অত্যন্ত মন্থর গতিতে এগিয়ে গেছে, হেলেনের জীবনের নাটক থেমে ছিল বিশটি বছর, বিশ বছর পর আবার পর্দা উঠল মঞ্চের।
একজন সুন্দরী যে শহরের কন্ঠশিল্পী হিসাবে পরিচতি ছিল, এই আটত্রিশে এসে এখনও আকর্ষনীয় যৌনাবেদনময়ী, সুন্দরী রমনীকে গত বিশটি বছরের অনেক অযাচিত প্রশংসা শুনতে হয়েছে, অনেক আকারে ইঙ্গিতে গোপন লালসার কথা হজম করতে হয়েছে কিন্তু হেলেন শান্ত, স্থির আর হৃদয় নিংড়ানো প্রতীক্ষা করে কাটিয়ে দিয়েছে এতগুলো বছর।

৫.
বাড়িটি তিন তলা। গ্রাউন্ড ফোরে শো-রুম যার পিছনের দিকে সংযুক্ত সিড়ি দ্বারা দোতলা, যেখানে একটি বড় রুমে হেলেন থাকে। রুমখানিতে যে সব আসবাবপত্র আছে, যেমন বেড,ওয়ারড্রপ, ড্রেসিং টেবিল, রিডিং টেবিল সবই ব্যাচেলারের মতো একজনের, পরিচ্ছন্ন গুছানো। সিড়ি দিয়ে নেমে শো-রুম, কাউন্টারে বসা আর দিন শেষে উপরে চলে আসা, এই তার বিশ বছরের জীবন।
বহুপূর্ব হতেই তিন তলাটা ভাড়া দেয়া হতো। হেলেনের মা তাহমিনা খুবই খুতখুতে মহিলা, প্রায়ই ভাড়াটিয়া বদল হতে দেখা যায়। এবার তিন তলাটা যে ভদ্রলোক ভাড়া নিয়েছেন তিনি বর্তমানে বেশ আলোচিত, তার ম্যানেজার খবর দেন যে তার স্যার এখানে একটি সঙ্গীত একাডেমি খুলবেন। হেলেন বেশ আগ্রহ নিয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করতে থাকে। কিন্তু যে দিন হেলেন প্রথম ভদ্রলোককে দেখল তার হৃদয়ের গহীনে একটা শির শিরে তীব্র শিহরণ বয়ে যেতে লাগল। ‘কি জানি কিসের লাগি’ তার এতটা উচ্ছ্বাস, বাধ ভাঙ্গা এক প্লাবনে তার সমস্ত অন্তরাত্মা কম্পিত হয়ে উঠল। আর যেদিন প্রথম তার সাথে কথা হলো ভদ্রলোকের চোখের চাহুনিতে কি ছিল কে জানে তার বারবার মনে হতে থাকল তার রাসেদ ফিরে এসেছে। তার হৃদয় রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছে, বারবার হেলেন বিশ বছর আগে ফিরে যেতে থাকলো। বারবার এই অনুভুতি ফিরে ফিরে আসতে লাগল আর ক্রমাগত তাড়নায় সে বিশ্বাস করতে শুরু করল, এ তার রাশেদ। সেই কন্ঠস্বর, সেই হাসি, সে চাহুনি , চোখের ভাষায় প্রকাশিত ভালবাসার সুষ্পষ্ট ছাপ যা কোন নারীর চোখ এড়াতে পারে না, তাকে এ বিশ্বাসের দিকে ক্রমাগত ছুটিয়ে নিয়ে গেল যে, গত বিশটি বছর সে একাকী নিভৃতে তারই প্রতীক্ষা করছিল।

৬.
কিন্তু হেলেন কিছুই প্রকাশ করে নি। তার ভিতর ঘুমরে উঠেছিল অভিমান। একজন স্বামী যে কিনা বিশ বছরের জন্য কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল, ফিরে এলো কোথা থেকে, একবারও খুজ করে দেখল না। মানুষতো পায়ের সেন্ডেল হারিয়ে গেলেও খুজ করে, চুরুট জ্বালাবার জন্য ম্যাচ লাইট হারিয়ে গেলেও তার খুজ নেয়ার প্রয়োজন পরে। পরে না? কোথায় থাকবে অনুতাপ আর নম্রভাবে প্রত্যাবর্তন, হেলেনতো মাথার মুকুট করে রাখতে চায়। তাই সে তার জানাকে বা সন্দেহকে প্রকাশ করে নি।
এক সন্ধ্যায় ভদ্রলোক হেলেনের আফিস-কাম বেড রুমে আসে। অনুমতিতো মনে মনে আগেই দিয়ে রেখেছিল তারপর যখন ভদ্রলোক অনুমতি চাইল তখন হেলেন আর নিজের ভিতর থাকতে পারল না। ভদ্রলোক নিজের নাম প্রকাশ করে রাজিব খান বলে। তিনি অতিশয় আবেগ প্রবন হয়ে কথা বলছিলেন। তার কথাগুলো স্বার্গীয় আলোর মতো ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসছিল, একজন আবেগ প্রবন স্বপ্নাপ্লুত মানুষের হৃদয়ের গহীন উচ্চারণের মতো মনে হচ্ছিল তার কথা।
“কিন্তু তোমার উত্তর পাবার আগে” রাজিব খান বলছিল, “ আমাকে বলতেই হবে, রাজিব খান একটি নাম মাত্র যে তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব করছে। আমার ম্যানেজার এই নামটি দেয়। আমি জানি না কে আমি কোথা থেকে আমি এসেছি। প্রথম আমি চোখ মেলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে নিজেকে আবিষ্কার করি। তারা আমাকে বলে আমার মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিলাম আমি। রাস্তার উপর পরে ছিলাম। তারা একটি এম্বুলেন্সে করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হেই শোন আমি তোমার নাম জানি না, আমার কাছে তোমার নাম শুধু ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। যখন প্রথম আমি তোমাকে দেখি তখনই আমি বুঝতে পারি, তুমিই একমাত্র নারী যে আমার জন্য সারা জীবন প্রতীক্ষা করে আছ , সারাজীবন....” এই জাতীয় আরো অনেক কথা।

৭.
হেলেন পুনরায় নিজের ভিতর যৌবন ফিরে পায়। প্রথমত: একটি গর্বের দোলা এবং একটি রোমাঞ্চকর কম্পন তার সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে বইতে থাকে। রাজিব খানকে সে এখন অন্য চোখে দেখতে থাকে এবং তার হৃদয়ের কম্পন, হৃদয়ে ধুকধুকানি শুনতে পায়। সে নিজেই বিস্মিত হয়ে ল্য করল যে এই মিউজিশিয়ান তার জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠছে যাকে কোন মতেই এড়াতে পারছে না। কিন্তু হেলেন তাকে প্রত্যাখ্যান করল যখন সে আত্মস্ত হতে পারল যে সে মনে প্রাণে ভাবছে এই তার রাসেল কিন্তু এ-তো তা নয়। সে বলল,“ রাজিব সাহেব, আমি সত্যিই দু:খিত, কিন্তু আমি তো বিবাহিতা।” সে নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার হতে চাইল। তারপর তার জীবনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলল।
রাজিব সাহেব কিছুই বললেন না, ব্যথিত চিত্ত নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।

জীবনটা এমনই। যখন কোন ঘটনা ঘটে না তখন হয় পানসে ধীর গতি আর যখন নাটকীয়তা ভর করে জীবনে তখন একটা পর একটা নাটকীয়তা রচিত হতে থাকে। যখন সে নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধ করতে করতে রাজিব সাহেবের দিকে ঝুকে যাচ্ছিল এক উদভ্রান্ত আগুন্তুকের আগমন ঘটে। অস্থির চিত্ত নিয়ে হেলেনের পাশে এসে বসে, প্রর্থণার ভঙ্গিতে বলতে থাকে,“ হেলেন তুমি কি আমাকে মনে করতে পারো। তুমি কি গত বিশ বছরে একটি বারের জন্য তোমার ভালবাসাকে ভুলতে পেরেছে? আমি তোমার প্রতি অন্যায় করেছি, আমি ভয়ে তোমার কাছে আসতে পারি নি। কিন্তু আমার ভালবাসা আমাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে এনেছে, তুমি কি আমাকে মা করবে?”
উত্তেজনায় হেলেন বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

৮.
হেলেন তার দ্বি-খন্ডিত হৃদয়কে দেখতে পায়। এদিকে তার বিশুদ্ধ, ভুলতে না পারা, স্বামীর প্রতি গভীর অনুরাগ আর অন্যদিকে এতদিন পর রাজিব সাহেবের প্রতি তার গহীন ভালবাসা,এই দুইয়ের দ্বন্ধে হেলেন অস্থির হয়ে উঠে। যখন হেলেন দ্বিধাগ্রস্ত, পাশের ফাট থেকে একটি মৃদু, বেদনাঘন, মন পাগল করা ভায়োলিনের সুর ভেসে আসে। এই গুঞ্জরন এই সম্ভ্রান্ত মহিলাকে ডাইনীতে রূপান্তরিত করে।
সেই সুর আর গায়ক তাকে ডাকতে থাকে যাদুকরের মতো। অন্যদিকে পুরানো ভালবাসা এতদিন পর এসে হাটু গেড়ে তার কাছে প্রর্থনা করতে থাকে।
“ আমাকে ক্ষমা করো” সে বলতে থাকে।
“দীর্ঘ বিশটি বছর কোথায় ছিল তোমার এত ভালবাসা যেই ভালবাসার দাবী নিয়ে এত কাঁদছো” হেলেন বলে।
“কিভাবে তোমাকে বলি?” সে করুণা ভিক্ষা করে আর বলতে থাকে,“ আমি তোমাকে কিছুই লুকাব না। সে সন্ধ্যায় আমি তাকে অনুসরণ করি। আমি পাগল আর ঈর্ষায় কাতর ছিলাম। পাহাড়ের উচু হতে সে নামছিল, যখন অন্ধাকার ঘনিয়ে আসছিল আমি তাকে ধাক্কা দেই। বিশ্বাস কর আমি তাকে মারতে চাই নি। আমি তোমার ভালবাসায় পাগল আর অন্ধ ছিলাম। আমি লুকিয়ে দেখেছি একটি এম্বুলেন্স তাকে নিয়ে চলে যায়। তারপর তাকে নানা হাসপাতালে আমি খুজেছি কোথায় ও পাই নি। তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে?.....”
শেষ করতে পারে নি সে। হেলেন পাগলীনির মতো তাকে খামছে ধরে বলতে থাকে, “ কে তুই?”
“তুমি আমাকে চিনতে পারছো না। হেলেন যে তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালবাসে, সব সময়। আমি তুহিন। যদি তুমি আমাকে ক্ষমা করো.....”

৯.
কিন্তু সে লাফিয়ে উড়ে উড়ে ছুটে যেতে থাকে আর আছড়ে পড়ে গানের দিকে, গায়কের দিকে যার স্মৃতিতে হেলেনের স্ত্রীরূপটি হারিয়ে গেছে কিন্তু যে তার উভয় সত্ত্বাতেই কেবল হেলেনকে জেনেছে। সে চিৎকার করে বলতে থাকে..“ রাশেদ, রাশেদ, রাশেদ”
গল্পটি শেষ করে আমি আমার বন্ধু পত্রিকার রিপোর্টার কাম টিভি সিরিয়ালের কাহিনীকারকে দেখাই। সে বলতে থাকে “তোমার এই গল্পের চিত্রনাট্য দিয়ে কোন টিভি নাটক হয়ত হতে পারে না কিন্তু সিনেমা হতে পারে।”
................
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×