somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবেগের ভূগোল বুঝি...সম্পর্কের গভীরতা বুঝি না....

১০ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় এই ঝিমিঝমানো দুপুরগুলো খুব ভালো লাগতো। এখন লাগে না। যান্ত্রিকতা আর নাগরিকতার নানামুখি ভোগান্তিতে এখন আর কাঠফাটা রোদেলা দুপুরের মাঝে বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনা। অবাক লাগে...মুগ্ধতার কতো আয়োজন ছিল, এই দুপুর ঘিরে, আর আজ দুপুর মানে যন্ত্রণা! বড় বিচিত্র!
যেম বিচিত্র আমাদের ইমরান। বেশ বোকার মতো হয়ে গেল কথাটা। রাস্তায় বেরিয়ে দশটা ঠিল মারলে দেখা যাবে সবগুলো না হোক, অন্তত চার-পাঁচটা ইট এমন লোকদের গায়ে লাগবে, যাদের নাম ইমরান। এদের মধ্যে কোনটা দআমাদের' ইমরান, তা খুঁজে বের করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্দিষ্টভাবেই বলে দেওয়া উচিত...আমাদের ইমরান, মানে আবদুল্লাহ আল ইমরান। যারা তাকে চেনেন ভালো। যারা চেনেন না তারা ফেসবুকে তাকে দেখে আসতে পারেন।
যাই হোক বলছিলাম ইমরানের বিচিত্রতার কথা। সেটা বলছি, তবে তার আগে বলে নেই তার বহুমুখি প্রতিভার কথা। সে লেখালেখি করে, সে গলাবাজি (বিতার্কিক অর্থে), সে পত্রিকায় কাজ করে, সে লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে। আরো কতো কী!
তো এই বহুমুখি প্রতিভাধর ইমরানের সঙ্গে আমার পরিচয় বছর দেড়েক আগে। ইমরান খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। সে কীভাবে যেন আমাকে চেনে, যদিও আমি জীবনে খুলনায় যাইনি। (সম্ভবত ইমরান না নিয়ে গেলে কোনোদিন যাওয়া হবেও না!) সেহেতু সেখানকার কেউ আমাকে চেনে এটা জানতে পেরে আমি বেশ অবাক হলাম। তারচেয়েও বেশি অবাক হলাম, ইমরান আমাকে ফেসবুকের বুক থেকে খুঁজে বের করে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলো। এবং ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করল। এখন সে আমার ‘ঘণিষ্ঠ বাহিনী’র অন্যতম সদস্য।
এতটুকু পড়ার পর অনেকেই হয়তো কোনো বিচিত্রতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের জন্য বলি, বহুজনের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু আমার ঘণিষ্ঠজনের সংখ্যা হাতেগোণা কয়েকজন। এবং আমার যে ভ্যাগাবন্ড চরিত্র এবং কর্মকান্ড, তাতে খাপ খাওয়ানোর সাধ্য খুব বেশি কারো নেই। তাই আমার ঘণিষ্ঠও খুব বেশি কেউ হতে পারেনা। যেকজন হয়েছে তাদেরও অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু ইমরান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কীভাবে যেন আমার ঘণিষ্ঠদের মধ্যে একজন হয়ে গেছে! বিষয়টা আমার কাছে এখনও বেশ রহস্যময়।
ইমরানের অতিকৌতুহলী মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুলভাল কথাবার্তা বলে দেওয়ার স্বভাবটা আমার বা আমার ঘণিষ্ঠদের সঙ্গে কোনোমতেই যায়না। আমরা নিজেদের একটা ‘নির্বিকার’ চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে যখন ব্যস্ত, তখন ইমরানের অতিকৌতুহল প্রায়ই লোকসমাজে আমাদের ‘ইমেজ সংকট’এ ফেলে দেয়! তাই মাঝেমধ্যেই ওকে ‘মৃদু থেকে শুরু করে উচ্চমাত্রা- পর্যন্ত নানা মাত্রার ধমক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। তার কর্মকান্ডে প্রায়ই মেজাজ বিগড়ে যায়, তবু কেন যেন কিছু বলা হয়না।
এই যেমন গত ৬ জুলাইয়ের ঘটনা। গত মাসের শেষ থেকে নতুন মাসের শুরুর দিকে সঙ্গত কারণে সবার পকেট খালি থাকে। কিন্তু যেকোন কারনেই হোক, আমারটা সচরাচর থাকে না। কিন্তু যখন থাকে তখন আমি একেবারে দিশেহারা হয়ে যাই। আমার সেই দিশেহারা ভাব আমার ঘণিষ্ঠজনদের মাঝেও সংক্রমিত হয়। তারা তখন স্বাভাবিকভাবেই নিঃস্ব হওয়ার পরও আমার প্রয়োজন মেটাতে পাগল হয়ে ওঠেন। যদিও অধিকাংশ সময়ই পারেননা। আমি তা নিয়ে নির্বিকার থাকলেও, তারা কেন যেন নিজেদের অপরাধী মনে করে। যেমন ইমরান, আমার পকেট খালি থাকার বিষয়ে আমার চেয়েও বেশি চিন্তিত থাকে সে।
এবার আমার পকেটের অবস্থা একটু বিশেষ কারণে ভীষণ দূর্যোগপূর্ণ যাচ্ছিল। ইমরান সে খবর জানতো। ৬ জুলাই বিকেলে সে আমাকে ফোন করে কোনো ভূমিকা ছাড়াই বলল, ভাই টাকা লাগবে?
আমি বললাম, টাকা কার না লাগে? কিন্তু লাগলেই তো আর পাওয়া যায়না।
ভাই বাড়ি থেকে কিছু টাকা পাঠিয়েছে, আপনি কিছু নিতে পারেন।
ইমরানের শেষ কথাটা শুনে আমি কতটুকু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো। বোঝাতে চাইও না। আবেগ মানেই দূর্বলতা। আমি সেই দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইনা। তবুও কেন যেন প্রকাশিত হয়ে যায়। যার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ এই পোস্টটা।
রাত্রির রূপ কী যে অপরূপ!- আমি তাই প্রায় প্রতিদিনই ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নিয়ে রাতেরবেলা ঢাকার পথে ঘুরতে বের হই। মধ্যরাতে খাওয়ার কাজ সারি চানখারপুলের দোকানগুলোতে।
হল্যান্ড- উরুগুয়ে ম্যাচ চলছে তখন। বসে আছি টিএসসিতে। সঙ্গে ইমরান এবং যথারীতি আমাদের বড়োভাই আপেল মাহমুদ। টিএসসিতে টানটান উত্তেজনা। তবে সেই উত্তেজনার চেয়ে আপেল ভাই আর ইমরানের ক্ষিধের উত্তেজনা বেশি হওয়ায় খেলা ছেড়ে খেতে চললাম। ব্যাপক খাওয়া দাওয়া হলো। ইমরান নিজ উদ্যোগে বিল দিয়ে দিল। ঘটনা বুঝলাম না তখন।
বুঝলাম কিছুক্ষন পর। ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটার ঘর পেরিয়েছে, ৬ পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা জুলাইয়ের ৭-এ। ইমরান বেশ একটা আবেগী পরিবেশ তৈরি করে কাঁপা কাঁপা গলায় জানালো, আজ তার জন্মদিন।
এই নাটকীয়তায় আমি বেশ বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু তখন কিছু বলিনি। সেই মধ্যরাতে চায়ের দোকানের লেবু কাটার ছুড়ি দিয়ে একটা পিস কেক কেটেই ইমরানের জন্মদিন পালন করা হল। এবং তাকে উপহার স্বরূপ আমি তার বয়সের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করলাম! ইমরানকে এর বেশি কিছু দেওয়ার অবস্থা তখন ছিলো না এবং আমিও অন্য(!) রকম কোনো ঘোরের মধ্যে থাকায় তাকে নিয়ে একটা লেখা লিখবো বলেও কথা দিয়ে ফেলেছিলাম। আমার ঘোর কেটে যায়, কিন্তু একবার যেকথা দেই, সেটা রাখি। তার প্রমাণ, এই পোস্ট।
আরো আগে লেখার কথা ছিল। লিখতে পারিনি। আজ মচকানো পা নিয়ে ঘরে বসে এই ঝিম দুপুরের উচ্ছলতাগুলোর কথা মনে পড়লো। সেই উচ্ছল দিনগুলো আমার কোথায় হারালো! হঠাৎ মনে পড়লো ইমরানের কথা। তার উচ্ছলতা দেখে আমি অধিকাংশ সময় বিরক্ত হলেও মাঝেমধ্যে উৎফুল্ল হই। আমি পারিনা, আমার ঘণিষ্ঠ কেউ তো পারছে। সেটা অবশ্য কখনো প্রকার করতে চাইনি। আর পোস্ট লিখতে গিয়ে হয়ে গেল।
মানুষ বড়ো বিচিত্র। মা-বাবা, ভাইবোন কিংবা আত্মীয়দের থেকে দূরে একাকী শহরে ইমরানের জন্মদিনের আনন্দময় মূহুর্তগুলো তো হওয়ার কথা বিষাদময়। সে কেন মাত্র দেড় বছরের পরিচিত কারো সঙ্গে উদযাপনে সেই বিষাদ কাটিয়ে আনন্দিত হয়ে উঠবে! কেন দিনের পর দিন আমার সঙ্গে ঘুরে এই ছেলেটা নিজের শান্তিময় রাতগুলোকে ক্লান্ত করে তুলবে! কেনই বা সে আমার চিন্তায় চিন্তিত হবে!
আমার জানা নেই। কেউ জানে কীনা তাও জানিনা।
ইমরানকে জন্মদিনের বাসি শুভেচ্ছা।











২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×