somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসর

০৫ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার স্ত্রী’র বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বেশ হালকা লাগছে। পাত্র ব্যবসায়ী, মুরাদপূরে গাড়ীর শো রুম আছে। ভদ্রলোকের থ্রিতে পড়ুয়া ফুটফুটে একটি ছেলে রয়েছে। সে নানার বাড়ীতে মা’র সাথে থাকে।
মমতার কপাল ভাল। এমন ভাল পাত্র মিলে যাওয়াটা খুবই মুশকিল। অবশ্য কারো কপালের ভালমন্দ বিচার করাটা বেশ কঠিন। কপালের লিখন বৃত্তাকারে ঘোরে। ঘুরতে ঘুরতে কখনো সুখ আসে কখনো দুঃখ - কখনো আসে তড়িৎ কখনো বা দীর্ঘ ঘুর পথে। কারো বৃত্তের পরিধি ক্ষুদ্র কারোটা বা প্রশস্ত। এই যেমন ক’দিন আগে মমতাকে নিয়ে লোকে বলাবলি করছিল, ‘আহারে মেয়েটার কপালটাই খারাপ!’ আর এখন, কয়েক মাসের ব্যবধানে নিশ্চয় সকলে উল্টোটাই বলছে।
পাত্রপক্ষ একটি শর্ত দিয়েছেন, বিয়ের পর বাচ্চা গুলো মা’র সাথে থাকতে পারবে না। ছোট মেয়েটা শান্ত প্রকৃতির হলেও বড়টা আমার মতই বিচ্ছু, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। মমতার জন্য বড় মায়া হচ্ছে। কি করে থাকবে সে ওদের ছাড়া? ওরাই বা কিভাবে থাকবে? ওহ্‌ খোদা, মানুষকে তুমি মাঝে মাঝে এমন জটিল পরীক্ষায় ফেলে দাও না! মায়ের সাথে বাচ্চাদের অভিমানী সময় গুলো দমকা হাওয়ার মত এসে স্মৃতির পাতাগুলো দ্রুত ওল্টাতে থাকে।
মমতার সাথে বাচ্চাদের দুষ্টুমি দুষ্টুমি খুনসুটি সবসময়ই লেগে থাকত। আর মায়ের বুক নিয়ে দু’বোনের ভাগাভাগি তো ছিলই। খেলতে খেলতে কিংবা গল্প শুনতে শুনতে প্রায়ই তুলতুলে হাতগুলো মায়ের জামার ভেতর ঢুকে বুকের উঞ্চতা পোহাতে ব্যস্ত থাকত। বিশাল পালঙ্কে চার জনে আড়াআড়ি ঘুমোতাম। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত মেয়ে দু’টোকে দু’পাশে নিয়ে ঘুমুতে। ওরাও আমাকে একেবারে নিরাশ করত না। দু’পাশ থেকে দু’জন আমার গলা জড়িয়ে ধরে গল্প শোনানোর আব্দার করত। তখন নিজেকে কি যে সুখী মনে হত! হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চমকে উঠতাম, আমার মানিকরা কোথায়? এদিক ওদিক খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেতাম, একপাশে কুন্ডুলি পাকিয়ে তিনজনে একজোটে স্বপ্ন দেখছে। কুসুম রঙা বাতির মৃদু আলোয় সবকিছু রহস্যময় মনে হত। মায়ের গলা পেঁচিয়ে নিশ্চিন্ত নিদ্রায় হাসছে দুটো দেবশিশু। মনে হত যেন বিখ্যাত কোন শিল্পীর তৈরী শায়িত কোন ব্রোন্জের ভাস্কর্য। মাঝে মাঝে ওদেরকে চেনা মনে হত, মাঝে মাঝে অচেনা। আমি একলা জেগে স্রষ্টার অপার রহস্যের কথা ভাবতাম; কেউই আমার কেউ ছিল না, একে একে আমার হল।
ঘুমের মাঝেও মায়ের দু’বুকে দু’পাশ হতে দু’জনের দু’টি হাত স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করে রাখত। তিনটি দেহ একটি প্রাণ। শ্বাস প্রশ্বাস যেন একই ছন্দে সঙ্গত করছে। আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সুখদৃশ্য পান করতাম। আমার সমস্ত অনুভব উপচে উপচে সোনার পালঙ্কে গড়াগড়ি খেত। খোদা, তুমি নাকি মুহুর্তেই যা খুশী করতে পারো? মমতার জন্য একটু দয়া করো। ওঁদের মনটা দ্রবীভুত করে দাও, যাতে সে বিয়ের পর বাচ্চাদেরকে তার সাথে রাখতে পারে। তাহলে আমার উপর যে অবিচার তুমি করেছ, তার জন্যে ক্ষমা করে দেব তোমাকে। আমিতো ফুটপাতেই দাঁড়িয়েছিলাম, কেন হঠাৎ রাস্তার দানব ফুটপাতে উঠিয়ে এনেছিলে?
মমতার বিয়েটা হয়ে গেল আজ। বাচ্চারা অবশেষে মায়ের সাথে থাকবার অনুমতি পেয়েছে। ওরা এখন ওদের নতুন দাদুর সাথে ঘুমুচ্ছে। মমতার ভেতরটা গুমরে গুমরে কাঁদছে, আর বাইরে আমি মিটি মিটি হাসছি।
নববধূ তার স্বামীকে পা ছুঁয়ে সালাম করল। স্বামীটি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বউয়ের দু’বাহু ধরে দাঁড় করালেন। মমতার চোখের কোণে পানি জমে আছে, যেন পলক পড়লেই গড়িয়ে পড়বে। কিন্তু ভুলেও পলক ফেলছে না সে, পাছে নতুন মানুষের চোখে ধরা পড়ে যায়। প্রথম বাসরের কথা মনে পড়ে গেল বুঝি তার?
আশ্চর্য, সেদিনও সে এভাবে কাঁদছিল। অনেক সাধনায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল, তবুও ওদিন সে ওভাবে কাঁদছিল কেন? সেকি নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার আনন্দে নাকি ফেলে আসা সময়গুলো হারিয়ে ফেলার বেদনায়? হঠাৎ বিদ্যুৎটা চলে গেল। মনে হল, মমতার নিকষ কালো চুলগুলো আশীর্বাদ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঘরময়। কষ্টে খুলে রাখা তার চোখের পাতাগুলো বন্ধ হল গভীর ভাবে। গড়িয়ে গেল ঝরণা।
স্বামীটি নতুন বউয়ের হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে আসলেন। বাইরে অথই অন্ধকার, কুল কিনারা দেখা যায় না। ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রী’র কাঁধে হাত রাখলেন। মমতা কুঁকড়ে গেল। তার ঝাপসা চোখ জোড়া স্থির হয়ে আছে তারা ভরা গহীন আকাশের দিকে।
নিজেকে লুকিয়ে নিতে ইচ্ছে হল। এই রাতে, আকাশের অযুত যোজন দূরে, আমার খোঁজ করা কি উচিৎ হবে তার?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৫৬
২৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×