somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কোন সর্বনাশা ভালোবাসা!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসার রঙ কী? সবুজ, লাল, নীল, গোলাপি, কমলা না সাদা! পৃথিবীর তাবৎ রঙ মিলেই তো ভালোবাসা। ভালোবাসা মানেই তো সৃষ্টি, সুন্দরের পূজা, সততার আরাধনা, প্রগাড় বিশ্বাস, নির্ভরতা আর ভরসার আশ্রয়স্থল। আমরা তো এটাই জানি। কিন্তু তারপরও কেন আমাদের জানার ভিতটা মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে! কেন? তবে কি ভালোবাসা রঙচটা, বিবর্ণ, বিকৃতরূপে নীল দংশন হয়ে উঠছে ক্রমশ! না, আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। তাহলে যে পৃথিবীর অনেক সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে। মা, এই একটি মাত্র অক্ষরের বিশাল অর্থের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দটি মৃত্যুর হুমকিতে পড়বে। আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চাই না, অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবেসে মা তার নিজের সন্তানকে হত্যা করতে পারেন। বিশ্বাস করতে চাই না স্বামীর ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মা তার সন্তানকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করতে পারেন। তাহলে এ সমাজ-সংসার বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়বে।
মানুষের মনকে জানা পৃথিবীতে কঠিনতম কাজ। কারণ প্রতিটি মানুষের ভেতরে বাস করে অন্য এক মানুষ। তাই হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় জেগে ওঠা অতি সহজ-সরল মানুষের হিংস্র রূপ দেখে আমরা চমকে উঠি, হতবাক হই, দেখব না বলে চোখ বুজে রাখতে চাই, শুনব না বলে কানে আঙুল চাপা দেই। আয়শা হুমায়রা এশা কি একবারও টের পেয়েছিলেন তার ভেতরের মানুষটি আদিম লালসার নেশায় ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠেছিল? এ কোন ভালোবাসা, যার নেশায় উন্মত্ত মমতাময়ী মা এতটা নিষ্ঠুর হলো! যদিও এখনও স্পষ্ট নয় সন্তান সামিউলের হত্যাকাণ্ডে মা আয়শা জড়িত। এখনও তদন্ত চলছে। আমাদের চিরকালের বিশ্বাসের জায়গা ধরে রাখতে 'দৈনিক কালের কণ্ঠ' পত্রিকায় 'মাকে লেখা সামিউলের চিঠি' শিরোনামে সাংবাদিক লুৎফর রহমান রনো লিখেছেন_
'মা তুিম চিৎকার করে বলে দাও, তুমি তোমার সামিকে হত্যা করোনি। এই পৃথিবীর সব সজীব বন, বৃক্ষ, নদী, সমুদ্র, পর্বত,আকাশ,বাতাস শুনুক তুমি সামি হত্যাকারী মা নও, তুমি নির্দোষ।' 'মানুষ অনেক সময় ভুল দেখে মা, সত্যিকার ঘটনার প্রকৃত দোষীদের ক'জন শাস্তি পায় পৃথিবীর আইন-কানুনের কাছে। একটি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অস্বাভাবিক কোনো দুর্ঘটনার কারণে কোনোক্রমেই মায়ের স্বাভাবিক শাশ্বত ভালোবাসাকে অস্বীকার করা যায় না। মায়ের ভালোবাসা যে চিরন্তন, তুলনাহীন।'
মানুষের মনের প্রতিশোধের আগুন কতটা বিস্তৃত হতে পারে? যে আগুন নেভাতে বলি দিতে হয় সন্তানকে? স্বামী রাশেদুল কবিরের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ফারজানা রিতা দু'সন্তানসহ নিজেকে বলি দিলেন! এমন স্বামীর জন্য, যে স্বামী বিশ্বাস নষ্ট করে পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা দিয়েছে। এমন স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশে তো উপযুক্ত আইনের অভাব নেই । নারী নির্যাতন আইন অত্যন্ত কঠিন। তিনি সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারতেন! নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মায়ের সহযোগিতায় একাই হয়ে উঠতে পারতেন পবন আর পায়েলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপদ আশ্রয়। দিনভর মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে রাস্তার ফুটপাতে নিজের ছেঁড়া আঁচলে সন্তানকে জড়িয়ে বুকের কাছে চেপে ধরে হতদরিদ্র মা যদি পারেন সন্তানের আশ্রয় হয়ে উঠতে, রিতার মতো শিক্ষিত মেয়েরা কেন তা পারেন না? এ কোন মোহ, অন্ধ ভালোবাসা। জীবননাশের আতঙ্কের মধ্যেও রাশেদুলের মতো স্বামী নামক হিংস্র পশুর আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন না রিতার মতো স্ত্রীরা?
আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে রিতার মতো স্ত্রী আছেন, যারা স্বামীর নানারকম নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করে সংসার করছেন। তাদের অনেকেই শিক্ষিত, স্বাবলম্বীও। বাবার বাড়ির আশ্রয়ের সুবিধাও আছে। কিন্তু তাদের কথা, সন্তানের জন্য সব অপমান সহ্য করছি। সন্তানের জীবন নষ্ট করতে চাই না। পরিবারের মর্যাদাটাও তো দেখতে হবে। এতকাল সংসার করে কেমন একটা মায়ার জালে আটকে গেছি। দুর্বল মনের মানুষ নির্ভরতার আশ্রয় খোঁজে_ এটা মনোবিজ্ঞানের কথা। যুগ যুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থাই মেয়েদের দুর্বল করে রেখেছে, করেছে পরনির্ভরশীল। শুরুতে বাবার আশ্রয়, তারপর স্বামী এবং সবশেষে ছেলে_ এভাবে পরগাছা হয়ে থাকতে থাকতে নারী হারিয়ে ফেলেন সব শক্তি।
কিন্তু আর নয়। এখন বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। মা-বোনেরা দয়া করে ঘুরে দাঁড়ান। দেখুন আপনার চারপাশ। অনেককে পাবেন যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়াতে শিখেছেন। কেউ কেউ নিজের শক্তিতে বটবৃক্ষ হয়ে উঠেছেন। তার নিচে আশ্রয় নিয়েছে হাজারও সন্তান। আপনার অপার শক্তি। সন্তানের জন্য আপনি একাই যথেষ্ট।
কোনো মানুষের জীবনই শতভাগ প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ নয়। অপ্রাপ্ত জীবনে ভালোবাসা আসতেই পারে। কিন্তু সমাজ সংসারের কথা বিবেচনায় রেখে সুস্থ ভালোবাসার চর্চাই সভ্যসমাজের কাম্য। ভালোবাসা জিঘাংসা নয়, উন্মাদনা নয়। ভালোবাসা মানুষকে সংযমী করে, শুদ্ধ করে। যদি একান্তই মনে হয় সঠিক মানুষটির দেখা পেয়েছেন জীবনের মধ্যাহ্নে এবং তাকে বড় বেশি প্রয়োজন, তাহলে সাহসী হোন। বিকৃত ঘটনার জন্ম দেওয়ার চেয়ে বরং বিচ্ছেদের পথ বেছে নেওয়াই ভালো। ধর্মেও তা অনুমোদন আছে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও আইন আছে। শুরুতে সমাজ হয়তো বাঁকা চোখে তাকাবে, কিন্তু সময়ে তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×