প্রফেশনালিজমের কাছে ইমোশনের পরাজয়, অথবা যন্ত্রের কাছে শিল্পের .....
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দুটি হাত যার উপর আপনি নির্ভাবনায় আস্থা রাখতে পারেন। যে হাত বাঁচিয়েছে অসংখ্য নিশ্চিত গোল। সেই হাতদুটি ইকার ক্যাসিয়াস(মতান্তরে ক্যাসিলাস)-এর যার হাতেই এবারের বিশ্বকাপটা সবচেয়ে বেশি মানায়। প্রতি মুহুর্তেই বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়ে ক্যাসিয়াস নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক পর্যায়ে, যার জন্য ভিক্টর ভালদেস(বার্সা) এর মতো বিশ্বসেরা গোলকিপার সাইডবেঞ্চে বসে থাকে। অথচ নিশ্চিত গোল সেভ করার পর ক্যাসিয়াসের আচরণ একদম নির্বিকার, একেই মনে হয় প্রফেশনালিজম বলে।
এবারের বিশ্বকাপের পারফেক্ট ওয়ান ম্যান শো বলা যায় ডেভিড ভিয়া(মতান্তরে ভিলা)-কে, যার উপর স্পেনের আক্রমনভাগটা পুরোটাই নির্ভর করে। প্রতি ম্যাচে ভিয়া-র অসাধারণ রিফ্লেক্সের জন্যই স্পেন আজ সেমিফাইনালে। এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে সেরা ও ধারাবাহিক খেলোয়ার নিঃসন্দেহে ভিয়াকে বলা যায়। ভিয়ার পিছনে মধ্যমাঠের অতন্দ্র প্রহরী এনিয়েস্তা, ফেব্রিগাস আর জাভি, ডিফেন্সে পিকে আর রামোস - বিশ্বসেরা লাইনআপ মনে হয় একেই বলে। সাময়িকভাবে ফর্মহীন তরেস যদি জ্বলে ওঠে তাহলে "লা ফিউরি রোজা"-এর এবারের বিশ্বকাপ জয় ঠেকায় কে !!!
*** নিজে স্পেনের সাপোর্টার বলে মনে হয় একটু বেশি লিখলাম
স্পেনের জয় খুব ভালোভাবে ঠেকাতে পারে জার্মানি, ঠিক জার্মানি না বলে সোয়ানস্টেইগার বললে সঠিক হয়। ওয়ান ম্যান শো এর পারফেক্ট এক্সাম্পল ডেভিড ভিয়া এর প্রতিদ্বন্দ্বী এই সোয়ানস্টেইগার, আবার কখনও কখনও ভিয়ার থেকে এককাঠি বেশি। মধ্যমাঠের সম্রাট সোয়ানস্টেইগার একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে যেকোন ম্যাচের ফলাফলের। সাথে স্ট্রাইকিং পজিশনে পোডলস্কি তো আছেই।
গত ৩ বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোসা(মতান্তরে ক্লোস/ক্লোজা) এর সুপার ফিনিশিং জার্মানকে এনে দিতে পারে আরেকটি বিশ্বকাপ [শালায় চান্চ মোহাম্মদ, গোলের কাছে খাড়াইয়া থাইকা চামে গোল দেয় ]। এছাড়া ঠান্ডা মাথার প্লেয়ার ফিলিপ লাম, ওজিল, এবং মুলার-কে নিয়ে গড়া জার্মান টীম বিশ্বকাপের শিরোপা লাভের জন্য যথেষ্ট যোগ্য। দুই-একজন ছাড়া সবাই একমত হবেন যে, স্পেনের ছন্দময় ফুটবল বনাম জার্মানের পাওয়ার ফুটবলের সেমিফাইনাল-ই বিশ্বকাপের অঘোষিত ফাইনাল। বল অধিকাংশ সময় নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখার পরও স্পেনের গোল করার ব্যর্থতা আর কাউন্টার অ্যাটাকে জার্মানের নৈপুন্য জার্মানকে ফেভারিট বানালেও ম্যাচে দুই দলের জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা ৫০-৫০.
এদিকে অপরাজিত হল্যান্ডের ৯,১০ ও ১১ নাম্বার জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় রবিন, স্নেইজদার ও রোবেন এর মতো ওয়াল্ডক্লাস আ্যাটাকিং লাইন-আপ বদলে দিতে পারে যেকোন সম্ভাবনা --- কারণ, এ বিশ্বকাপ তো আর যাই হোক "প্রোবাবিলিটি ও স্টাটিস্টিকস" সাবজেক্টে প্রতি মুহুর্তে ফেল করছে। আর উরুগুয়ের সাথে আছে তাদের চরম সৌভাগ্য[ঘানার বিপক্ষে জয় এর প্রমাণ], সুয়ারেজের মতো ন্যাশনাল হিরো[যদিও সেমিফাইনাল মিস করবে], এবং ফোরল্যান এর মতো অসাধারণ স্ট্রাইকার।
লাতিন আমেরিকার গতিময় ও ছন্দময় ফুটবল যে বিশ্বসেরা সেটা আমিও স্বীকার করি। কিন্তু স্ট্রাটেজি ও ট্যাকটিসক এর সামান্য ভূল সব হিসাবকে নিমিষেই তুচ্ছ করে দিতে পারে। আর্জেন্টিনার ভূল স্ট্রাটেজি আবারও প্রমাণ করে দিলো যে "Offense is not always the best defense"। বিশ্বকাপটা যদি কোন কোচের হাতে সবচেয়ে বেশি মানাতো তবে তা হতো ম্যারাডোনা। কিন্তু প্রফেশনালিজমের কাছে আবেগের পরাজয় ঘটে, যান্ত্রিক ফুটবলের কাছে পরাজিত হয় শৈল্পিক ফুটবল, যন্ত্রের কাছে শিল্প। আর এই শিল্পকে যন্ত্রে রূপ দিতে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গের জ্বালায় পুড়তে হচ্ছে ব্রাজিলকে। দুঙ্গার সবচেয়ে বড় ভূল ছিলো শিল্পকে ধ্বংশ করা। রোনালদিনহো এর মতো ক্লাসিক খেলোয়াড় এ বিশ্ব খুব কমই দেখেছে। তাকে দলে না নেওয়া, কাকা-ফ্যাবিয়ানো-রবিনহোর মতো অ্যাগ্রেসিভ খেলোয়াড়দের ডিফেন্সিভ অ্যাটিচিউড শিখানো, উপোর্যপুরি সেরা খেলোয়াড়দের স্বাধীনভাবে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে না দিয়ে তাদের স্ট্রাটেজির পরিবর্তন করানোর সমস্ত দায়ভার দুঙ্গার কাঁধের উপর পড়ে। যদিও ব্রাজিল ভাগ্যের দোষে হেরেছে বা প্রথমার্ধে অসাধারণ খেলে দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামুলকভাবে খারাপ খেলায় হেরেছে, তারপরও ২০০৬ সালের ব্রাজিল টীম এর কাছে এই টীম কিছুই না।
যাই হোক, স্পেন ও হল্যান্ড ফুটবলকে অনেক কিছুই দিয়েছে, কিন্তু ফুটবল তাদের এ পর্যন্ত তেমন কিছু দেয় নি। এই বিশ্বকাপ কি তাদের কারও অপূর্ণতা মেটাতে যাচ্ছে না কি রোবোটিক বা পাওয়ার ফুটবল টীম জার্মানকে যোগ্যতার মূল্য পরিশোধ করতে যাচ্ছে তা এখন দেখার বিষয়। অনেকের মতে এ বিশ্বকাপ অঘটনের বিশ্বকাপ হলেও যেখানে চার সেমিফাইনালিস্টের তিন দলের র্যাংকিং ২, ৪ ও ৬ সেখানে এদের মধ্যে যেকোন টীম চ্যাম্পিয়ন হলেও সে টীম যে আসলেই যোগ্য টীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন