somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবনার পোষ্টমর্টম

০১ লা জুলাই, ২০১০ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক ভাবনা করে দেখলাম ভেবে কোনো লাভ নাই। তাই ভাবনা ছাড়াই যা মাথায় আসে তা লিখতে বসে গেলাম। কথা হচ্ছিলো মানব সভ্যতার অবনতির বিষয়ে। যুগে যুগে বহু মানুষ এই পতন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিষয়গুলো এমন ভাবে পরিবর্তনশীল যে গুটিকতক মানুষ ছাড়া বাকি সবাই ই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। আর সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছেনা আমাদের চিরন্তন নৈতিক বিষয়গুলো। বদলে যাচ্ছে সময়ের ধারাবাহিকতায় সকল কর্মকান্ডের পূর্ব সংজ্ঞা। তাহলে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কি লাভ? কই? কেউ কি পেরেছে পতন রোধ করতে? হয়তো নির্ধারিত কিছু মানুষ সেই সব রিফর্মারদের অনুসরন করেছে। কিন্তু একসময় তারাও পরিবর্তিত হয়ে গেছে।


আসলে এই গতিটি পতন কিনা সেটা নিয়েও অনেকে ভাবনার পাটি বিছিয়ে বসেছেন... নাকি এটা কেবলই গতি। একটা রিক্সা দশনম্বর থেকে তেরো নম্বর যাবেই। এটা তার স্বাভাবিক গতি। বিলুপ্ত হয়েছে পেগান দর্শন। বিফলে গিয়েছে বনি ইসরাইলিয় সভ্যতা। টিকে থাকেনি মিশরীয় সংস্কৃতি। মুসলমানদের অবহেলায় মুসলিম দর্শনেরও পতন হয়েছে অনেকদিন আগে। সমাজতান্ত্রের বিবর্ণ কান্না এখনো রাশিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।এখন মুসলমানদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ও সকল প্রকার দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুসলিম দর্শন, শ্রমিক যখন রাজ পথে তার জন্য সমাজতান্ত্রিক দর্শন, ব্যাবসায়ীদের জন্য পুঁজিবাদী দর্শন আর জনগনের পেটে লাথি মারার জন্য পশ্চিমা রাজনৈতিক দর্শন যা আবার তৃতীয় বিশ্বের জন্য বিশেষ সংস্করণ... সব দিক থেকে জোড়াতালিয় এই দর্শনের যুগে ভাবনারা কাঁথা গায়ে ঘুমাতেই বোধ হয় বেশি পছন্দ করবে। হয়তো পৃথিবী এভাবেই এগিয়ে যাবে তার মহা ধ্বংসের দিকে... আমরা কেবলই তা ত্বরান্মিত করতে বিস্তর আন্তরিক সহযোগিতা করছি।

আজ যখন শুকনো মুখে পেছনে রাখা আমার আঙ্গুলে নরম কোনো হাতের স্পর্শ পেলাম ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম... একটা বাচ্চা ছেলে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো বহুদিনের পানি না পাওয়া মরু অঞ্চলের বালুর মতো লাল হয়ে উচ্চবিত্তের রঙ করার চুলের উদ্দেশ্যে ফোকলা হাসছে। বৃষ্টির পানি বুঝি তাকে নিস্তার দেয়নি।পকেটে রাখা মিল্ক ক্যাণ্ডি থেকে একটার পোষাক খুলে দু আঙ্গুলে পরম মমতায় ওকে খাইয়ে দিয়ে ভাবলাম... আহা!! কার দোষে এই রুহুটি নির্যাতিত? পাশে দাঁড়ানো গুনী মানুষটিকে জিজ্ঞেস করলাম জানেন?? উনি বললেন এটাই তো ভেবে যাই। সাথে ভাবলাম আসলেই তার অবস্থানটা আমার কাছে একজন নির্যাতিতের অবস্থান। কিন্তু সে কি এটাকে তার সঠিক অবস্থান বলে মনে করছে? তার কি অনুভুতি আছে যে তার আরো একটু ভালো থাকার কথা?? নাকি সে তার চেয়েও খারাপ মানুষকে দেখে ভাবে আমি তার চেয়ে ভালো আছি...

তাহলে নির্যাতনের সংজ্ঞা কি পরিবর্তিত হয়ে গেল না? কেউ যদি তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে পিঠ পেতে দেয় তাহলে কি তা নির্যাতন হয়? কেউ যদি মনে করে এটাই তার নিয়তি অথবা এজন্যই তার জন্ম তাহলে কি ওটা সঠিক ভাবে নির্যাতনের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব? সে তো নির্যাতিত হয়েও অসন্তুষ্ট নয়। নয়তো কেনো সে নিজেকে পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসছে না? তার অবস্থান নিয়ে সে যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে ঐ অবস্থানের জন্য দ্বায়ী বিষয়গুলো কি করে নির্যাতন হয়? আমি এই সমাজে উচ্চবিত্তের মতো সুবিধা ভোগ করছিনা। আমিও অনেক ভাবে নিগৃহীত হচ্ছি। উচ্চবিত্ত কারো দৃষ্টিতে আমিও হয়তো নানান ভাবে নির্যাতিত একজন মানুষ। কিন্তু আমার অবস্থানে যেহেতু আমি সন্তষ্ট তাই ঐগুলোকে নির্যাতন বলতে আমি বাধ্য নই। আমি হয়তো বলবো আমার নিয়তি। এখন কথা হচ্ছে যে সম্পদ কতটা হলে সেটাকে সহনীয় বলা যাবে এটা নিয়েই গোলমাল। এর কি নির্ধারিত কোনো মাত্রা আছে?

এদেশের মধ্যবিত্তরাই এক সময় সমাজ নিয়ে ভাবতো এবং কাজ করতো। অবশ্য সকল জাতিতেই সেই জাতি নির্মান ও তার গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজগুলো মধ্যবিত্তের হাতেই হয়। কারন উচ্চ এবং নিম্ন এই দুই শ্রেনী শুধু মাত্র উপার্জনের ধান্দায় মগ্ন থাকে। নিন্মবিত্তের টাকা নেই, তাই কিভাবে পেট চালানো যায় এই ভাবনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত- আর উচ্চবিত্তের টাকা ভুরি ভুরি আছে বলে ঐ টাকা সামলানো এবং আরো জ্যামিতিক বৃদ্ধির উপায় নিয়ে উনারা ভারি ব্যস্ত। আর মধ্যবিত্তরা টেনে টুনে চালাতে পারতো বলেই হয়তো শত ব্যস্ততার ভিড়েও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতো। আজকে যারা সমাজে উচ্চবিত্ত হিসেবে জন্মগ্রহণ করছে তাদের বাবারা একসময় মধ্যবিত্তই ছিলেন। বিগত দশ বছরে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি যে হারে ধন উপার্জনের দিকে ঝুঁকেছে এবং এটাকেই (এমেরিকান ড্রিমের ভয়াবহ ইনফ্লুয়েন্স হিসেবে) নেশা এবং পেশা হিসেবে নিয়েছে তাতে করে সেই নিরাপদ সময়টুকুতেও নানান আপদের সম্মীলন ঘটিয়ে ফেলেছে।

এবং কাঁচা টাকার উপস্থিতিতে মগজের যে নিউরনগুলো সমাজের চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সেগুলো পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিনোদন সামগ্রীর ঝনাৎকারে। এই সব বিনোদনের মোহ কাটিয়ে সময় কোথায় যে এতটুকু ভাবনার অবকাশ পাওয়া যাবে? সমাজ হয়ে গেছে ভয়াবহ আমাজনের গহীনে হেটে যাওয়া পথহারা ভয়ার্ত নিঃস্ব কোনো পথিক যার প্রতিটি পথে পথে তার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যুর গহীন অন্ধকার।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×