স্টিফেন হকিন্স এর "কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস "বইটি হাতে এসেছে।বইটি
সহজ ভাষায় লেখা ও অনুবাদ করা হলেও আসলে বইটি কোন কোন ক্ষেত্রে যথেষ্ট কঠিন।বইটির সবচেয়ে আকর্ষনীয় ও সহজ অংশ "সময়ের তীর"অধ্যায়টি নীচে দিয়ে দিলাম।(ইষৎ সংক্ষেপিত)।
সময়ের তীর
এই শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত লোকের বিশ্বাস ছিল পরম কালে।অর্থাৎ প্রতিটি ঘটনাকেই "কাল " নামক একটি বিশেষ সংখ্যা দ্বারা অনন্য উপায়ে চিন্হিত করা যায় এবং বিশ্বাস ছিল দুটি ঘটনার অন্তবর্তীকাল বিষয়ে প্রতিটি ভাল ঘড়িরই মতৈক্য থাকবে ।কিন্তু পর্যবেক্ষক যেভাবেই চলমান হোক না কেন আলোকের গতি সবসময় প্রতিটি পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে একই মনে হবে-এ আবিষ্কার অপেক্ষবাদের পথ দেখালো এবং তার ফলে অনান্য পরম কাল সম্পর্কিত চিন্তাধারা ত্যাগ করতে হল।তার বদলে ধারানা হল প্রতিটি পর্যবেক্ষকেরই কালের মাপন হলে তার নিজস্ব এবং সেটা চিন্হিত হবে তিনি যে ঘড়ি বহন করছেন তার সাহায্যে।
মহাকর্ষের সঙ্গে কণাবাদী বলবিদ্যার মেলানোর চেষ্টার ফলে "কাল্পনিক" কাল সম্পকিত চিন্তন উপস্থিত করতে হয়েছে।কাল্পনিক কালে অগ্র পশ্চাৎ অভিমুখের ভিতর কোন গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য থাকা সম্ভব নয়।অন্যদিকে"বাস্তব" কালের অভিমুখে দৃষ্টি দিলে অগ্র পশ্চাৎ অভিমুখের ভিতর রয়েছে বিরাট পার্থক্য।আমরা সবাই একথা জানি।অতীত এবং ভবিষ্যতের এই পার্থক্যের উৎস কি ? কেন আমরা অতীতকে মনে রাখি কিন্তু ভবিষ্যৎ কে মনে রাখি না?
বিঞ্জানের বিধিগুলো অতীত এবং ভবিষ্যতের ভিতর কোন পার্থক্য স্বীকার করে না।আরও সঠিকভাবে বলা যায় সি,পি এবং টি সমন্বয় ক্রিয়াতে বিঞ্জানের বিধিগুলো অপরিবর্তিত থাকে।সি এর অর্থ কনিকার বিপরিত কনিকায় পরিবর্তন,পি এর অর্থ প্রতিবিম্ব গ্রহন । অর্থাৎ ডান এবং বামের পাষ্পারিক পরিবর্তন এবং টি এর অর্থ সমস্ত কনিকার অভিমুখ বিপরীত করা; কার্যত কনিকার গতিকে পশ্চাৎমুখি করা।একটি গ্রহের অধিবাসিরা যদি আমাদের দর্পন প্রতিবিম্ব হয়(পি) এবং যদি পদার্থ দিয়ে গঠিত না হয়ে বিপরীত পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়(সি) তাহলেও তাদের জীবন একই রকম হবে।
সি এবং পি ক্রিয়া আর সিপি এবং টি ক্রিয়ার সমন্বয়ে যদি বিঞ্জানের বিধিগুলো অপরিবর্তিত থাকে তাহলে শুধুমাত্র টি ক্রিয়ার ক্ষেত্রেও সেগুলো অপরিবর্তিত থাকবে । তবুও সাধারন জীবনে বাস্তব কালের ক্ষেত্রে অগ্র পশ্চাৎ অভিমুখে একটি বিরাট পার্থক্য থাকে।কল্পনা করুন টেবিল থেকে একটি জলের পেয়ালা মেঝেতে পড়ে গিয়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেল।এর একটি আলোক চিত্র নিয়ে অতীতের দিকে চালনা করলে ডেখবেন টুকরোগুলো মেঝে থেকে হটাৎ একত্র হয়ে লাফিয়ে টেবিলের উপর উঠে একটি সম্পূর্ণ পেয়ালা হয়ে গেছেআপনি বলতে পারবেন আলোকচিত্রটি পশ্চাৎগামী,কারন এরকম আচরন সাধারন জীবনে কখনোই দেখা যায় না।এরকম হলে যারা চীনামাটির বাসনপত্র তৈরি করে তাদের ব্যাবসা উঠে যেত।
উপরের উল্টো ঘটনা কখনই ঘটে না,তার কারন সাধারনত দেখানো হয়:তাপগতিবিদ্যার ২য় বিধি অনুসারে এটি নিষিদ্ধ।এই বিধি অনুসারে যে কোন বদ্ধ তন্ত্রে কালের সঙ্গে সঙ্গে বিশৃঙ্খলা (এনট্রপি) সবসময়ই বৃদ্ধি পায়।
তথাকথিত কালের তীরের একটি উদাহরন হল কালের সঙ্গে বিশৃঙ্খলা (এনট্রপি) বৃদ্ধি।এই কালের তির অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য আনে,কাল কে একটি অভিমুখ দান করে।অন্ততপক্ষে তিনটি বিভিন্ন কালের তীর রয়েছে।প্রথমটি হল তাপগতিয় কালের তীর।অর্থাৎ কালের যে অভিমুখে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়।তাছাড়া রয়েছে মনস্তাত্বিক কালের তীর।এটা হল সেই অভিমুখ,যে অভিমুখে আমরা কালের স্রোত বোধ করি।যে অভিমুখে অতীত কে স্মরণ করি কিন্তু ভবিষ্যৎ স্মরন করি না। আর অন্তিমে রয়েছে মহাবিশ্বতত্ত্বভিত্তিক কালের তীর।মহাবিশ্ব সঙ্কুচিত না হয়ে যে অভিমুখে সম্প্রসারিত হচ্ছে এটা হচ্ছে সেই অভিমুখ।
( সময়ের তীরগুলোর বাখ্যা এবং এদের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারটি পরেরবার দেওয়ার চেষ্টা করব।)
কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস(২য় পর্ব)-স্টিফেন হকিন্স এর প্রবন্ধ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১০ দুপুর ১:২৪