somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবার বসন্তে মন্তত্রম্বল্য বেড়ানো................

২৯ শে জুন, ২০১০ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এবার সামার আসার আগেই দেশ থেকে ভাইজান জানালো মে’তেই আসছে আমেরিকা।ওখান থেকে আমাদের এখানে আসবে মে এর শেষে।দেশ থেকে কেউ আসলে বেড়ানো হয় অনেক।ভাইজান গেলোবার এসেছিল যখন, নায়েগ্রা ঘোরা হয়েছে।এবার কোথায় যেতে চায় জানতে চাইলে বললো লেক দেখতে চায়।ভাইজান আসার পর গেলাম টরন্টোর ওয়াটার লু,বড় ভাই এর ওখানে।ওখানে অনেক ঘোরাঘুরি হলো।
ওখান থেকে ফিরে এক দুপুরে প্লান হলো মন্তত্রম্বল্য ( mont tremblant) যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। রাশীক এর পরীক্ষা । ও যাবেনা ,রাইয়ান ও ভাই এর সাথেই থাকবে। কি আর করা।ওরা স্কুল থেকে আসার পর খাওয়া দিয়ে রাতের খাবার রেডি করে দিয়ে আমরা রওনা দিলাম মন্তত্রম্বল্য। এবার ফেরীপথ পার হয়ে যেতে হয় যে পথে, সেই পথে যাবো। বাসা থেকে ত্রিশ মিনিট ড্রাইভের পরই সেই ফেরি পারাপারের জায়গা।



কি ভালো যে লাগছিলো। দেশের কথা মনে হচ্ছিল। সেই যে আরিচা নগরবাড়ি। কতবার যে আসা যাওয়া হয়েছে।এখন তো যমুনা হয়েছে।
গাড়ি থেকে নামলাম । দশ মিনিটেই পার হয়ে যাবো ওপারে। নেমেই কিছু ছবি তোলা। মনে হচ্ছিল ফেরীর সময়টা আরো দীর্ঘ হলে ভালো হতো!



আর একটা ফেরী পার হচ্ছিল পাশ দিয়ে।অদ্ভুত এক দৃশ্য ।বাহাদুরাবাদ থেকে যখন স্টিমারে পার হতাম অন্য স্টিমার থেকে সবাই হাত নাড়তো।এখানে তেমন কিছু হলোনা।মানুষ এত কম সবখানে।




চোখের পলকেই ওপারে পৌছে গেলাম।রাস্তার দু’পাশে তাকিয়ে বাড়িঘর দেখছি।কিছু জায়গা আছে গেলে মনেহয় আগে কখনো এসেছি।এখানেও তেমন মনে হচ্ছিল।ছোট্ট একটা শহর।মানুষ খুব কম চোখে পড়লো।





পথের পাশে কিছু খামার বাড়ি। চারিদিকে সুনসান শুন্যতা।ভাইজান আর ও কথা বলছে। দেশ থেকে কিছু মানুষ এনে এসব জায়গায় রাখা উচিত।এ ত জায়গা,অথচ মানুষ কত কম।কি জানি দেশ ছেড়ে আসা কি উচিত? এত কি সহজ অন্যদেশে পরবাসী হওয়া?



পথের দু’পাশে পাহাড় আর পাহাড়। সূর্য্যর আলোছায়া খেলা চলছিলো সেখানে। মুগ্ধ বিস্ময়ে সেই খেলা দেখছিলাম। পথটা যেখানে সোজা দূরে যাচ্ছিল। ইমারজেন্সী দিয়ে থামলাম। কিছু ছবি তোলা হলো। খোলা রাস্তায় শুধু আমরা । গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছা করছিলো। ভাইজান থাকাতে তা আর হলোনা। আস্তে আস্তে গাইলাম সামিনার সাথে গলা মিলিয়ে…………………
“তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি
আমি ডুবতে রাজি আছি আমি ডুবতে রাজি আছি “
কি অসাধারন গান।
"মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রি বেলা
ঢেউ গুলোযে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।“

আমি হারিয়ে যাই সেই সুরে। মহাবিশ্বের কাছে অতি তুচ্ছ আমি ভাবতে ভাবতে বিশাল আকাশের টুকরো মেঘ হয়ে যাই। একটা অপার্থিব বোধ এসে ভর করে মনে। আমি আর আমি থাকিনা। আমি ঘাস হয়ে যাই। কখন ঘাসফুল।আমি চুপ হয়ে যাই। আমাকে কেউ ডাক দেয়না তখন ।আমি নিঃশ্বাস নেই। প্রতিটা নিঃশ্বাসে বন্দনা করি স্রষ্টার।




বিকালটা এত সুন্দর।গাছে গাছে পাতায় পাতায় সোনালী রোদের ঝিলিক।একটা জায়গায় পাথর কেটে রাস্তা বাড়ানো হচ্ছিল।



মন্তত্রম্বল্য শহরে ঢুকলাম যখন মনে হচ্ছিল ,এ শহর মায়া জানে। টানতে জানে। নাহলে বারবার শুধু এর কাছে ফিরে আসা। কিছু শহরের প্রাণ থাকে। এ শহর আমার সাথে কথা বলে। তাই বারবার ফিরে আসি কিসের এক অমোঘ টানে। পাহাড় নাকি লেক…………………নাকি সেই mont tremblant village!
লেকের ধারে যখন পৌছুলাম,ভাইজান সোজা নেমে গেলো পানির ধারে।এখনো বেশি নৌকা চলছেনা। বেশির ভাগ নৌকাই বেঁধে রাখা হয়েছে। কিছু পানিতে ভাসছিলো দুরে। সেখানে কোন মানুষ আছে কি না তা দেখা যাচ্ছিল না।আমাদের ফটোসেশন চললো কিছুক্ষন।





শান্ত লেকটার চারিদিকে নীরব ।গতবার যখন এসেছিলাম।অনেকে একসাথে এসেছিলাম।চারিদিকে এত মানুষ ছিলো।এত ভালো লেগেছিলো।অনেকক্ষন বসেছিলাম এই পানির ধারেই।




সন্ধ্যা নেমে আসছিলো। মন্তত্রম্বল্য ভিলেজের কাছে যখন গেলাম,অবাক লাগলো। এখানেও মানুষ তেমন নেই বলা যায়। ক্যাবল কার এখনো চলা শুরু করেনি। হেটে হেটে অনেকদুর উঠলাম আমরা। ভাইজান বলছিল দার্জিলিং এর মত লাগছে। আমি ছবি তুলতে তুলতে অনেক দূর চলে গেছিলাম। ইট বিছানো পথ। কত কথা মনে আসছিল। ভাবনাগুলোকে ছবির মত তুলে রাখা গেলে বেশ হতো। এতদিন পর লিখতে বসে ,ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে শুধু মুগ্ধতার কথাই মনে আসছিলো।






এক একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে চেয়ার বিছানো। প্রস্তুতি চলছে সামারের উৎসবের।আবার আসবো। মনে মনে বললাম।দেশ থেকে ফিরি যখন প্রতিবার,প্রার্থনা করি ।আবার যেনো আসতে পারি। এখানেও তাই করলাম।



শহর ছেড়ে আমরা যখন আর এক প্রিয় শহর মন্ট্রিয়ল যাচ্ছি। সূর্য্য তখন প্রায় ডুবে গেছে। পাহাড়ী পথ দিয়ে ফিরতে ফিরতে কত গল্প হচ্ছিল। ভাইজান এবার দেশে ফিরে যখন বেড়ানোর গল্প লিখবে। আমি নিশ্চিত এই শহরটা নিয়ে লিখতে বসে মন কেমন করবে। মানুষের মায়ার সাথে,প্রকৃতির মায়া,শহরের মায়াও জড়িয়ে যায়। মন্ট্রিয়ল থেকে ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে গেছিলো।

নায়েগ্রা অন দ্য লেকের বেড়ানোর গল্প আগামীতে কখনো। আজকের কথায় ছবিতে যারা সাথে ছিলেন,সবার জন্য আমার শুভেচ্ছা। আর যারা চা কফি ভালবাসেন তাদের জন্য রেখে গেলাম গরম চা আর কফি। সাথে হট চকলেট আর কিছু ডোনাট ও মন্দ না!





আগের লেখা :
এক
Click This Link
দুই
Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১০ সকাল ৭:২২
৫৩টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×