somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াহু ৩৬০, এবং বকলম ডট কম

২৮ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারনেটে আমার ব্লগিংয়ের শুরুটা হয় ইয়াহু ৩৬০ দিয়ে। প্রথম দিকে ব্লগ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলো না। ইন্টারনেটে কোথাও নিজের কবিতাগুলো টুকে রাখার সুযোগ পেয়েই খুশি ছিলাম। তবে ব্লগ যে শুধুমাত্র নিজের লেখা প্রকাশেরই জায়গা না, বরং মূলতঃ একে অপরের সাথে ভাবের আদান প্রদানের এক কেন্দ্রবিন্দু, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হবার পাশাপাশি মতামত/আলোচনায় নিজের যুক্তিগুলোও যেখানে উপস্থাপন করা যায়, এটা বুঝতেও তখন খুব বেশি সময় লাগেনি। এদিক দিয়ে ইয়াহু ৩৬০ ছিলো অনন্য। ব্লগিংয়ের পাশাপাশি সেখানে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করা, শুধুমাত্র বন্ধুদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের আপডেট দেখতে পারা, সর্বোপরি সমমনা অনেকেরই এক হয়ে একসাথে আড্ডা মারার মতো একটা পরিবেশ ছিলো সেখানে, যা পরে অন্য কোন ব্লগিং সাইটেই পাইনি। ইয়াহু ৩৬০-এর নিজস্ব একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ছিলো, যদিও সেটাকে আমি ফেসবুক বা অন্য কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সাথে তুলনা করবো না। একে আমি বরং ব্লগভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক হিসাবেই আখ্যায়িত করবো। এখানে ব্লগ লেখাটাই ছিলো মূল বিষয়। বাকী সব নেটওয়ার্কিং এই ব্লগকে কেন্দ্র করেই। আমাদের আড্ডাও হতো ব্লগের কমেন্ট সেকশনে একের পর এক মন্তব্য করার মাধ্যমে।

কিন্তু ইয়াহুর মতো এতো বড় একটা কোম্পানী এই সাইটের পিছনে এতো লোক খাটিয়েও একে ধরে রাখতে পারলো না। এটা কি বানিজ্যিক কোন কারণে, নাকি টেকনিক্যাল আরও কারণ আছে এর পিছনে, তা জানা হয়নি। তবে শেষদিকে ইয়াহু ৩৬০ বেশ স্লো হয়ে গিয়েছিলো। অনেক ফিচার ঠিকমতো কাজ করতো না। আমার ধারণা ইয়াহু কর্তৃপক্ষের ধারণার চেয়েও বেশি ব্যবহারকারী নিয়মিত ৩৬০ ব্যবহার করায় এতোজনের চাপ সাইটটি নিতে পারছিলো না। ইয়াহু ৩৬০-কে সেভাবে ডিজাইন করা হয়নি। ফলস্রুতিতে ৩৬০ কে বন্ধ করে এর চেয়েও আরও ভাল সাইট চালু করার ঘোষনা দেয়াই ইয়াহু কর্তৃপক্ষের কাছে সঙ্গত মনে হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিস্রুত সেই নতুন সাইট, যা কিনা প্রথমে ইয়াহু প্রোফাইল এবং পরবর্তীতে পালস নামে আত্মপ্রকাশ করে, কোন দিক দিয়েই ইয়াহু ৩৬০-র সেই অভাবটা আর পূরণ করতে পারেনি।

৩৬০ বন্ধ হওয়াতে স্বভাবতঃই ঝুঁকে পড়লাম ফেসবুকের দিকে। কিন্তু এখানে ব্লগিংয়ের সেই পরিবেশটাই নেই। শুধুমাত্র বন্ধু তৈরী, তাদের সাথে কথাবার্তার আদান-প্রদান, একেবারে বেশি হলে ফটো এলবাম শেয়ার করা, এই ছিলো প্রাথমিক কর্মকান্ড। তারপর ফেসবুকের বিভিন্ন এপ্লিকেশানে একেকবার ঝুঁকে পড়লেও একটানা আকর্ষণ ধরে রাখার মতো কোনটাই ছিলো না। যদিও এখন আমি ফেসবুকের একজন নিয়মিত সদস্য, স্বীকার করতেই হবে যে ফেসবুকেরও নিজস্ব জোরালো এক আবেদন আছে, তার পরেও মনের ভিতরের ব্লগার যেন এতে কোনমতেই তৃপ্ত হতে পারে না। ইতিমধ্যে বাংলা ব্লগিংয়ের বেশ কিছু সাইট স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছে। তার অনেকগুলোরই পপুলার হতেও বেশি সময় লাগেনি। এখনও নতুন নতুন আরও অনেক বাংলা ব্লগিংয়ের সাইটের উদয় হচ্ছে। সামহোয়ারইন থেকে নিয়ে আরও কিছু ব্লগিং সাইটে আমিও কমবেশি লেখালেখি শুরু করলাম। কিন্তু ৩৬০-র অতৃপ্তিটা যেন কেউই পূরণ করতে পারছিলো না। পপুলার সাইটগুলোতে একটা ব্লগ পোস্ট করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটা প্রথম পাতা থেকে অন্যান্য পাতায় গিয়ে হারিয়ে যায়। আমার পরিচিত কোন বন্ধু এক বেলা আগে কোন ব্লগ লেখলেও আমি ঢুকে যে সেটা দেখতে পাবো, বা জানবো, তেমন কোন উপায় অন্তত আমার চোখে পরেনি।

ইয়াহু ৩৬০ বন্ধ হবার প্রায় ৩ বছর পরে অবশেষে নতুন এক বাংলা ব্লগিংয়ের সাইট খুঁজে পেলাম, যেটা ইয়াহু ৩৬০-র সেই অভাব পূরণের জন্য অন্তত চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মনে হলো। সাইটটি হচ্ছে বকলম ডট কম (http://www.bokolom.com)। যাদের স্লোগান হচ্ছে "কলম নয়, কী-বোর্ড দিয়ে লেখা"। সাইটটির গঠন বিন্যাস অনেকটা ৩৬০-র মতোই। এখানে প্রতি সদস্যের জন্য আলাদা প্রোফাইল পাতা আছে, অন্য সদস্যদের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়, এবং লগইন করলে শুধু মাত্র বন্ধুদের লেখা ব্লগ এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের আপডেট দেখা যায়। ফলে পরিচিত কোন বন্ধু কবে কোন ব্লগ লেখলো সেটা দেখার জন্য প্রত্যেকের ব্লগে ব্লগে গিয়ে ঢু মেরে দেখে আসতে হয় না। আবার বন্ধুদের প্রোফাইলের আলাপচারিতা বিভাগে গিয়ে আড্ডাও মারা যায়। সাইটের নেভিগেশন লে-আউটও অনেকটা সেই ইয়াহু ৩৬০-র মতোই।

নতুন সাইট। তাই এখনও আরও অনেক ফিচার আসা বাকী আছে বলে শুনেছি। তবে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর আবার ব্লগিংয়ের নিজস্ব একটা পরিবেশ খুঁজে পেতে যাচ্ছি। সাইটটি অবশ্য এখনও যে কাউকে এর সদস্য হতে দিচ্ছে না। তবে বকলমের যোগাযোগ পাতা থেকে কেউ যদি তার অন্যান্য ব্লগের লিঙ্ক দিয়ে যোগাযোগ করে, আর সেসব লিঙ্কের লেখা পড়ে বকলম কর্তৃপক্ষের মনে হয় যে সেগুলোর ভাষা এবং বিষয় মার্জিত এবং সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক, তবে তাদের বকলমের সদস্য হিসাবে নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের এই সদস্যদের পরবর্তী সদস্যের তুলনায় সবসময়ই নাকি অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হবে।

বাংলা ব্লগিংয়ের এতো এতো সাইটের পাশাপাশি সবার মাঝে বকলমও তার নিজস্ব জায়গা করে নিতে পারে কিনা, সেটা দেখারই অপেক্ষায় রইলাম।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×