ধসে পড়া রানা প্লাজার জমি বাজেয়াপ্ত করে ওই ঘটনায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার সুপারিশ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।
Published : 19 May 2013, 01:04 PM
ভবন মালিক সোহেল রানা এবং ওই ভবনের পাঁচ পোশাক কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ যাবজ্জীবন বা ১০ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সোহেল রানার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে বলেই আমরা আশা করছি।”
ভবন ধসের জন্য ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে’ দায়ী স্থানীয় মেয়র, কাউন্সিলর, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধেও একই সুপারিশ করা হবে বলে মাইন উদ্দিন জানান।
তিনি জানান, পোশাক খাত নিয়ে সরকারকে কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ দেবে কমিটি। আগামী বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
“ওই জমি বাজেয়াপ্ত করে তার অর্থ থেকে পঙ্গু-ক্ষতিগ্রস্ত যারা আছেন এবং যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে সহায়তা দেয়ার জন্য সুপারিশ করব।”
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ রানা প্লাজার ৫৬ শতাংশ জমিতে নতুন একটি বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণ করে সেখানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করছে বলে এর আগে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
মাইন উদ্দিন জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুধু পোশাক কারখনার জন্য একটি অধিদপ্তর করারও সুপারিশ করা হবে।
“এই অধিদপ্তর থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সব কারখানাকে সনদ দেয়ার ব্যবস্থা হবে। এই সনদ প্রত্যেক গার্মেন্টে টাঙানো থাকবে। এটা দেখে শ্রমিকরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারবে”।
গত ২৪ এপ্রিল সাভারের নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে, যার বিভিন্ন তলায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল।
গত ১৩ মে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান শেষ করার পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবন ধসে মোট এক হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভবন ধসের পরপরই গত ২৪ এপ্রিল মাইন উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি করা হয়। পরে আরো একজনকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কমিটির প্রধান মাইন উদ্দিন খন্দকার বলেন, “রানা প্লাজা বিপনীবিতান হিসাবে গড়ে তুলে সেখানে পোশাক কারখানা করা হয়। অনেক স্থায়ী শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। এছাড়া লোহার ভারী যন্ত্রপাতি, জেনারেটর বসানো হয়। এগুলো দিনের পর দিন কম্পন সৃষ্টি করে। ফলে রড সিমেন্ট কমপেকশন (আরসিসি) ভঙ্গুর হয়ে যায়।”
তদন্ত প্রতিবেদনে আর কি কি সুপারিশ থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বলব, রানা প্লাজা ধ্বংসের ঘটনা এতোটাই সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করেছে যে, সমগ্র পোশাক খাত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
“কোথাও কোনো ফাটল বা দাগ দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কারখানার শ্রমিকরা। তাদের অভয় দিতে জরুরি ভিত্তিতে জরাজীর্ণ কারখানাগুলোকে বিশেষজ্ঞ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকির মাত্রা ও গ্রেড নির্ধারণ করে সনদ দিতে হবে।”
এসব কারখানার অধিকাংশই দেশের শিল্প মালিকদের ‘প্রথম প্রজন্মের’ গড়ে তোলা মন্তব্য করে মাইন উদ্দিন বলেন, সে সময় কারখানা নির্মাণের কারিগরি ও সামাজিক জ্ঞানের ঘটতি ছিল।
মাইন উদ্দিন জানান, রানা প্লাজা ধসের সময় সেখানে কতো শ্রমিক ছিল সে বিষয়ে তারা কিছু জানতে পারেননি। তারপরও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শুনে এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।