somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইল ফোনে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ

২৬ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, প্রাণের ভাষা। এ ভাষার জন্য আমাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা সকলেরই জানা। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়ে আমরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছি। আমাদের ভাষা আন্দোলনের সম্মানে ইউনিসেফ ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালিত হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহারের দিক থেকে বাংলা ভাষার অবস্থান পৃথিবীতে ষষ্ঠ (উইকিপিডিয়া)। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কার্যে ও ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারিক জীবনে আমরা বাংলা ভাষার যথোপযুক্ত প্রয়োগে সক্ষম হচ্ছি না। এখানে আমি সবগুলো সমস্যা/বিষয় উল্লেখ না করে শুধু মোবাইল ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করব।

১. বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৮,৩৬০,০০০ (মে ২০১০, http://www.btrc.gov.bd)। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ Multimedia সুবিধা সম্বলিত উচ্চমানের মোবাইল সেট ব্যবহার করে। কিন্তু উচ্চমানের হওয়া সত্ত্বেও এসব মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। উদাহরণ হিসেবে নকিয়া এন-সিরিজ, ই-সিরিজ ও অন্যান্য স্মার্ট ফোন এবং স্যামসাং, সনি-এরিকসন, মটোরোলা, এলজি ইত্যাদি কোম্পানির মোবাইল ফোনের কথা উল্লেখ করা যায়। ইন্টারনেট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা এসব মোবাইল ফোন দিয়ে বাংলা ওয়েবসাইট বিশেষ করে বাংলা পত্রিকা, বাংলা ব্লগ, ইমেইল, ফেসবুক, উইকিপিডিয়া, গুগল ইত্যাদি বাংলা ভাষায় ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছি না। কিন্তু আমাদের তরুণ প্রজন্ম মোবাইল ও ইন্টারনেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে চায়। উদাহরণ হিসেবে আমার ফেসবুক বন্ধুদের কয়েকটি মন্তব্য / বক্তব্য (status) এখানে উল্লেখ করলাম: Brazil ba Argentina kono doler e ebar final khela hobena/ Jodi notun kono jonmo thaka, pabo dujon dujonaka/ shanti chai/ Kal dka jachsi ইত্যাদি। এ বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে চায়, কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে পারেনা। ফলে তারা ইংরেজিতে অদ্ভুত এক বাংলার চর্চা করে। তারা হয়তো একদিন শুদ্ধ বাংলা ভুলে যাবে এবং এটাকেই “বাংলা ভাষা” বলে ভুল করবে। সুতরাং “মোবাইল এবং ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে” একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সব মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিরই সাধারণমানের কিছু মোবাইল সেট বাংলা ভাষা সাপোর্ট করে যেগুলো দিয়ে শুধু ফোন করা ও গ্রহণ করা যায়। কিন্তু এসব সেট ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মোটেও উপযোগী নয় (দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া)। শুধুমাত্র সাধারণমানের মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে প্রকারান্তরে মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বাংলা ভাষাকে অপমান করছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে রেডিও-টেলিভিশনে এবং দৈনিক পত্রিকায় পূ্র্ণ-পৃষ্ঠা রঙ্গীন বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বাঙ্গালি সাজার চেষ্টা করে, বাংলা ভাষার জন্য তাদের দরদ প্রদর্শন করে; কিন্তু অন্তরে তারা মোটেও বাঙ্গালি নয়। সুতরাং সচেতন সমাজের কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন, পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যদের সাথে আলোচনা করবেন, পত্রিকায় লিখবেন এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করবেন যাতে মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তুতকৃত সকল শ্রেণীর মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। কিছু মোবাইল সেটে বাংলা ভাষার যে ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি নিম্নমানের, অপ্রচলিত ও হাস্যকর শব্দে ভরপুর। এগুলো সংশোধন করে প্রমিত বাংলা (বাংলা একাডেমী কর্তৃক অনুমোদিত বাংলা) ব্যবহার করতে হবে।

২. কাগজে-কলমে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি হলেও ধারনা করা হয় সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। অর্থাৎ বাংলাদেশে তিন কোটি মোবাইল সেট ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং বিদেশ থেকে মোবাইল সেট আমদানি না করে আমাদের বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত মোবাইল সেট ব্যবহারের সময় হয়েছে। নকিয়া, স্যামসাং, সনি-এরিকসন ইত্যাদি কোম্পানি চীন, ভারত, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে তাদের নিজস্ব মোবাইল কারখানা/প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশেও যদি অনুরূপ কারখানা স্থাপিত হয়, বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তির কর্ম-সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামণা করছি।


৩. প্রায় সবকটি বাংলা পত্রিকা ওয়েব সংস্করণ বের করে। কিন্তু সবাই ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্ট ব্যবহার না করায় বাংলা সমর্থিত মোবাইল ফোনেও ঐগুলো পড়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্ট ব্যবহৃত না হলে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ সমস্যার সমাধানে পত্রিকা-সম্পাদকবৃন্দের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

৪. বর্তমান দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কম্পিউটার বা তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে সাধারণত একটি অংশ বরাদ্দ থাকে। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল দিক। কিন্তু এখানে মাঝেমাঝে ইংরেজি শব্দের কিছু বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা হয় যা অনেক সময় শ্রুতিমধুর হয় না (উদাহরণ: download এর পরিবর্তে নামিয়ে নিন, touch screen এর পরিবর্তে স্পর্শকাতর পর্দা ইত্যাদি)। আমরা মেডিকেলে পড়তে গিয়ে দেখেছি কিছু মূল শব্দের বাংলা পরিভাষা এতটাই জটিল যে, মূল শব্দটা ব্যবহার করা তার চেয়ে অনেক সহজ (উদাহরণ: সুষুম্নাকাণ্ড, জঙ্ঘাস্থি ইত্যাদি)। সুতরাং সব শব্দের পরিভাষা করার চেষ্টা না করে কোন্ কোন্ শব্দ অবিকৃত অবস্থায় ব্যবহৃত হবে এবং বেশি প্রচলিত শব্দগুলোর গ্রহণযোগ্য পরিভাষা কী হবে তা ঠিক করলে ভাষার মাধূর্য বজায় থাকবে এবং বিভ্রান্তি দূর হবে। এ ক্ষেত্রে একটা সার্বজনীন নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

আশাকরি, উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে বাংলা ভাষাকে এবং বাংলাদেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-বান্ধব বর্তমান সরকার, তথ্য-প্রযুক্তিবিদ, সংবাদ-কর্মী, সাংস্কৃতিক-কর্মী এবং সর্বোপরি সচেতন সমাজ যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। যেহেতু এ বিষয়গুলোতে কথা বলার মতো যথেষ্ঠ জ্ঞান এবং সুযোগ আপনাদের আছে, সেহেতু এটা করা আপনাদের একটা দায়িত্ব, আপনাদের কাছে নতুন প্রজন্মের অধিকার এবং বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা সুযোগ।
আমরা ফেসবুকে "Establish BANGLA Language in Mobile Phones" নামে একটা সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করেছি। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এতে যোগ দিয়ে বাংলা ভাষার সম্মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। Link: Click This Link
সকলের মঙ্গল কামনা করে এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার সুন্দর ব্যবহারের প্রত্যাশায় শেষ করছি। ভাল থাকবেন।

ডাঃ মোবাশ্বেরুল ইসলাম (সোহাগ),
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
[email protected]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×