উইপোকায় খাচ্ছে বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতিচিহ্ন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ন্দে আলী মিয়াকে কী আমরা ভুলে যাচ্ছি? না, ইতোমধ্যে ভুলে গেছি? আগামীকাল ২৭ জুন তার মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছরের মতো এবারও হয়তো নীরবে নিঃশব্দে পেরিয়ে যাবে দিনটি।
রাজধানী ঢাকাতে তো নয়ই, তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল রাজশাহীতেও স্মরিত হবেন না তিনি। রেডিওর সঙ্গে দীর্ঘদিন চাকরি সূত্রে জড়িত ছিলেন। সেই রেডিওর অনুষ্ঠানমালায় কী থাকবে তার স্মরণে কোন অনুষ্ঠান? নিশ্চয় নয়। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের কোথাও কী তাকে স্মরণ করে উচ্চারিত হবে একটি পঙ্ক্তি? বাংলা সাহিত্যের প্রবীণ-নবীন লেখকদের কেউ কী তাকে নিয়ে লিখবেন দুটি শব্দ? লেখাপড়া ও চাকরির সুবাদে কিছুদিন কলকাতায়ও ছিলেন। সেখানেও কি হবে তাকে উদ্দীষ্ট করে কোন আয়োজন। না, হবে না, কোথাও কিছু হবে না। হওয়ার প্রত্যাশাও বাতুলতা মাত্র।
বন্দে আলী মিয়া ১৯৬২ সালে শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমী কি মনে রেখেছে তাকে। হ্যাঁ, জীবনীগ্রন্থ ও রচনাবলি প্রকাশ করেছে। কিন্তু তারপর? তারপর নটে গাছটি মুড়ালো, আমার গল্প ফুরালো। এভাবেই বুঝি দায়িত্ব-কর্তব্যের সমাপ্তি রেখা টেনেছে সবাই!
বন্দে আলী মিয়া লিখেছেন : আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,/আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।/মাঠ ভরা ধান আর জলভরা দীঘি,/চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।/আমগাছ জামগাছ বাঁশ ঝাড় যেন,/মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন।
আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় প্রকৃতিতে এখনও নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধনে যুক্ত আছে। কিন্তু আমরা হোমো সেপিয়ানরা মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো সেপিয়ান। (মানুষ, বানর ও শিম্পাঞ্জি এ গোত্রভুক্ত প্রাণী)
ছিন্ন করেছি সব বন্ধন। আমরা ক্রমেই হয়ে পড়ছি বৃস্তুচ্যুত। এক ছাদের নিচে বসবাস করলেও পাশাপাশি টেবিলে বসলেও আমাদের মাঝে যেন সহস্র মাইলের ব্যবধান রচিত হচ্ছে। আমরা অতীত ভুলে যাচ্ছি। অতীত বিস্মৃত হচ্ছি। বর্তমান বলে কিছু নেই। কেননা, বর্তমান মুহূর্তেই অতীত। আর ভবিষ্যৎ তো অজানা, অধরা এক আধার। সুতরাং, অতীতই সত্যি। অতীতই মহার্ঘ্য। অতীতই পূজনীয় স্মরণীয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত অতীত বিস্মৃত হচ্ছি। অতীত ভুলে যাওয়ার কালব্যধিতে আমরা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। অন্য যে দু'একটি অতীত আমরা স্মরণে রাখি, তাদের প্রতি আমাদের থাকে মাত্রাতিরিক্ত প্রেম-ভালবাসা। যা যুক্তিযুক্ত নয়। অতীত ভুলে যায় বলেই বন্দে আলী মিয়া স্মরিত হন না। সংরক্ষণ করা হয় না। তার বসতভিটা। তার প্রিয় আবাসস্থল কবিকুঞ্জ। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি তিনি জন্মেছিলেন যেথায়। পাবনার বাধারগরের কবির বসতভিটা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রে এখন ইঁদুর, বিড়াল আর আরশোলাদের বসবাস। তার ব্যবহৃত খাট এখন উইপোকার খাদ্য। সঙ্গে কী তার পা-ুলিপিও আছে? কবিকুঞ্জ, কবি বন্দে আলী মিয়ার বসতবাড়ির স্মৃতিচিহ্ন হয়ে এখনও তার অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। নিজ হাতে কবির লাগানো আম গাছ, জাম গাছ, নারিকেল গাছ এখনও রয়েছে। উঠোন সংলগ্ন জায়গায় রয়েছে বড় একটি পুকুর। যার শান বাঁধানো ঘাট এখনও ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেমন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে কবির ব্যবহৃত ইদারাসহ আরও অনেক কিছু। সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কেননা, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এসব রক্ষার কোন বিকল্প নেই। বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনও যেসব জিনিস রয়েছে তা সংরক্ষণ করা জরুরি।
এখানে স্থাপন করা যেতে পারে বন্দে আলী মিয়া স্মৃতি জাদুঘর। এ ধরনের জাদুঘর নির্মাণে শুধু যে কেন্দ্র ভূমিকা পালন করবে, এমন নয়। পাবনার স্থানীয় প্রশাসন জনগণ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ ব্যাপারে একটি যুৎসই উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে। পাশাপাশি, বন্দে আলী মিয়া স্মৃতি জাদুঘর শুধু যে তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করবে, তা নয়। এখানে পাবনার অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতিচিহ্নও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যা হতে পারে পাবনাবাসীর জন্য যেমন গর্ব ও অহঙ্কারের তেমনি জাতীয়ভাবে হতে পারে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি নিদর্শন সংরক্ষণশালা। যা দর্শনে উদ্বুদ্ধ হতে পারে দেশ-বিদেশের অনেকেই।
উল্লেখ্য, বন্দে আলী মিয়া ১৯৮৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদক ও ১৯৯০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। আগামীকাল ২৭ জুন বন্দে আলী মিয়ার ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এদিনে যদি কোথাও তার স্মরণে কিছু হয় এবং তাদের দৃষ্টিতে যদি এ লেখা পড়ে। তাহলে সবাই যেন সোচ্চার হন। এ দাবিতে যুথবদ্ধ হন বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ করা হোক। বন্দে আলী মিয়ার জীবনীকার গোলাম সাকলায়েন এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, কবির সন্তানদের কাছে অপ্রকাশিত পা-ুলিপিসহ অনেক কিছু সংগ্রহে আছে। যা উদ্ধার করা প্রয়োজন। কেননা, সেগুলো ব্যক্তির সম্পদ হয়েও তা জাতীয় সম্পদ। যা প্রকাশ ও প্রদর্শন হওয়া জরুরি।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন সেখানে এ ধরনের স্মৃতিচিহ্নগুলো কতটা যত্নে ও নিষ্ঠায় সংরক্ষণ করা হয়। প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। অথচ আমাদের দেশের বরেণ্য শিশুসাহিত্যিক, কবি বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের কোন ব্যবস্থা তো নেই। উপরন্তু অনাদর-অবহেলায় তা কালের গ্রাসে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের এ কূপম-ুতা দূর হবে কবে?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়
১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷
চলুন গল্পটা শুনে আসি৷
বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই
রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।
ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন