somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় ইতালি, বিদায় বিশ্বকাপ ২০১০ (দ্বিতীয় পর্ব)

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ববর্তী পর্ব: বিদায় ইতালি, বিদায় বিশ্বকাপ ২০১০ (প্রথম পর্ব)


ফ্রান্স ’৯৮ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমার পছন্দসই কোন দল ছিলো না। কেন জানি তখনো পর্যন্ত আমার কোন দলের খেলাই ভালো লাগতো না। এরপর যথাসম্ভব ’৯৯ তে এসে আমি প্রথমবারের মতো ইতালির সেই বিখ্যাত কাতানেসিও পদ্ধতিতে খেলার ব্যাপারে জানতে পারি। ধীরে ধীরে এই ফুটবল কৌশলটির ব্যাপারে জ্ঞাত হই কি করে নিজেদের রক্ষণদূর্গকে আগলে রেখে ক্রমাগত প্রতিপক্ষের আক্রমন প্রতিহত করে যেতে হয়, কি করে সন্তর্পনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয় যে কখন প্রতিপক্ষের গোলমুখের দুয়ার আলগা হয়ে যায় এবং সেই সাথে কি করে মোক্ষম সময়ে প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয়। এই কৌশলী ছকের ব্যাপরে প্রথম জানাতেই আমার তা ভীষনভাবে ভালো লেগে যায়। আর তখন থেকেই আমি হয়ে গেলাম ইতালিয়ান ফুটবলের এক একনিষ্ঠ ভক্ত।

অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে ফুটবল ছকে লাতিনের ছন্দ নেই, জাদুকরী আর মোহনীয় ওয়ান-টু-ওয়ান পাস নির্ভর খেলা নেই, গোল করে যাওয়ার জন্য আক্রমনের বন্যা নেই, দর্শককুলের জন্য নেই কোন আনন্দদায়ক প্রয়াস, সেই ধীরগতির আর স্থিমিত ফুটবল কৌশল ভালো লাগার কি কারণ থাকতে পারে? আছে, কোন না কোন কারণ তো অবশ্যই আছে। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে ফুটবল নিয়ে নির্মিত একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র শাওলিন সকার এর কথা। আলোচ্য চলচ্চিত্রে একজন ফুটবল কোচ তার শিষ্যকে ফুটবল খেলার কৌশল সম্পর্কে বলেন: ফুটবল খেলা হচ্ছে এক ধরনের যুদ্ধ। আসলেও যেন ঠিক তাই। এই খেলায় ১১ জন খেলোয়াড় একই সঙ্গে প্রতিপক্ষ ১১ জন খেলোয়াড়ের করা আক্রমন প্রতিহত করে, তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন রচনা করে এবং প্রতিপক্ষের সব চেয়ে সুরক্ষিত দূর্গে(গোলমুখ) আঘাত হানার প্রচেষ্টায় সর্বদা লিপ্ত থাকে। আর ফুটবল যদি কোন যুদ্ধ হয় তাহলে ইতালিয়ন কৌশল যেন সেই যুদ্ধে একজন স্নাইপারের পদকেই অলংকৃত করে। সেটা কিভাবে?

আমরা জানি যে কোন যুদ্ধে একজন স্নাইপার বন্দুক হাতে সন্তর্পনে নিরাপদ কোন স্থানে লুকিয়ে থাকে এবং শত্রুপক্ষের কাছে নিজের অবস্থানকে সনাক্তহীন রেখে মোক্ষম সময়ে সঠিক নিশানায় শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা স্থাপনায় নিখুঁতভাবে গুলি করে। সরাসরি শত্রুপক্ষের মুখোমুখি না হয়ে নিজেকে আড়ালে রেখে যুদ্ধের সময় স্নাইপারের এইভাবে শত্রুর উপর আক্রমন করার কৌশলটা হয়তো অনেকের কাছেই অবস্থাদৃষ্টে কাপুরষোচিত বলে মনে হতে পারে। তবে যুদ্ধের ক্ষেত্রে জয়/পরাজয় ভিত্তিক ফলাফলটাই হয়ে দাঁড়ায় মুখ্য, কে কতোটা বীরত্ব দেখালো সেটা কিন্তু মুখ্য হিসেবে বিবেচ্য হয় না। এ জন্যই হয়তো বলা হয়ে থাকে যে যুদ্ধ এবং ভালোবাসায় অন্যায় বলে কিছু নেই। কাজেই, ফুটবল নামক এই যুদ্ধে ইতালিয়ান কাতানেসিও পদ্ধতি অনুযায়ী আক্রমনকে আড়াল করে ক্রমাগত রক্ষণ করে যাওয়া, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এবং সুযোগ পাওয়া মাত্রই সঠিক নিশানায় লক্ষ্যভেদ করার কৌশলটা কি একজন স্নাইপারের মূলনীতিকেই মূর্ত করে তুলে না?

অনেকেরই বলে থাকেন যে ইতালিয়ান কৌশল অত্যন্ত বিরক্তিজনক এই কারণে যে তাদের খেলাতে দৃষ্টি নন্দন কোন গতি থাকে না। তবে একজন দর্শকের প্রেক্ষিতে না দেখে ফুটবলীয় কলা-কৌশলের দৃষ্টি কোণ থেকে দেখলে শ্রম সঞ্চয়ী এই কৌশল কি কাঙ্ক্ষিত জয়ের লক্ষ্যে আসলেই বুদ্ধিদীপ্ত নয়? আমরা সবাই জানি যে সারা বিশ্বের ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখার তীর্থভূমি এবং সেই সাথে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের লালনক্ষেত্র হলো ইউরোপ। শুধু তাই নয়, ইউরোপই হলো ফুটবলীয় কলা-কৌশল চর্চা ও বিশ্লেষণের এক আদর্শ গবেষণাগার। এই গবেষণাগার থেকেই যুগে যুগে নতুন নতুন সব ফুটবল-তত্ত্ব আর কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সারা বিশ্বকে উপহার দেয়া নেদারল্যান্ডের সাবেক কোচ রাইনাস মিশেলসের বিখ্যাত টোটাল ফুটবল তত্ত্ব। আর ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো ফুটবল তীর্থ হলো ইতালি। আজ হয়তো সেখানে স্পেন কিংবা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লীগের মতো আকর্ষনীয় জৌলুস নেই, কিন্তু তারপরেও এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফুটবল লীগ ছিলো ইতালিয়ান সিরি-এ। কাজেই, ফুটবলীয় কৌশল নিয়ে ইতালিয়ানদের গবেষণা, চর্চা আর বিশ্লেষণ থেকে জাত তাদের নিজস্ব ধারার এই ফুটবল কৌশলটি নিশ্চয়ই ঠুনকো কিংবা ফেলনা হবার যোগ্য নয়। আর ঠিক সেই নিরিখেই পদ্ধতিগত দক্ষতা এবং সর্বোপরি শ্রম সাশ্রয়ী এই ইতালীয় ফুটবল দর্শনের প্রতি আমার এতোটা ভালো লাগা।

( চলবে.... )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:০০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×