somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঙ্গার কুৎসিত মানসিকতা এবং কাকার বাটপারি

২৫ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাংবাদিককে বিদ্রূপ: তোপের মুখে দুঙ্গা কাকার সঙ্গে কেইতার অভিনয় !
Wednesday, 23 June 2010
মতিউর রহমান চৌধুরী, জোহানেসবার্গ থেকে: সাংবাদিককে বিদ্রূপ করে তোপের মুখে দুঙ্গা। অন্যদিকে গতকালই খবর পেলাম, কাকার লাল কার্ড বিষয়টি ফিফা তদন্ত করে দেখতে পারে। কারণ খালি চোখে দেখা গেছে কাকা আইভরি কোস্টের কাদের কেইতাকে খামোখা গুঁতো দিয়েছেন।
আর কেইতা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠেন। এই ঘটনা জিদানের সেই বিখ্যাত ঢুঁসকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। বলের দেখা নেই। অথচ হঠাৎ ঢুঁস জিদানের। অন্যদিকে রোববারেও বল ছিল অন্যত্র। কাকার ভঙ্গিতে দৃশ্যত আক্রমণের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু কেইতা ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠেন। এখন ইঙ্গিত মিলছে, কেইতা সেটা অভিনয় করেছিলেন কিনা। কাকা মনে করেন তিনি নির্দোষ। ফিফার কমিটি বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারে। তবে ফিফার এক মুখপাত্র বলেন, কোন টিমের কাছ থেকে তারা এ বিষয়ে কোন অনুরোধ পাননি। এমনকি ব্রাজিলের সাংবাদিকরাও কাকার লাল কার্ড নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। ফিফা আইনেও অবশ্য রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
ওদিকে দুঙ্গাকে নিয়ে ব্রাজিলের মিডিয়ায় তুফান চলছে। ব্রাজিলের সাংবাদিক ইউনিয়ন গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, দুঙ্গার আচরণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি এবং তার পদমর্যাদার সঙ্গে বেমানান। তার মনে রাখা উচিত সাংবাদিকরা শুধু ফুটবল কভার করেন না, সমাজের প্রতিও দায়িত্ব পালন করেন। দুঙ্গা আরও কোণঠাসা। কারণ সাবেক জাতীয় কোচ লুইস স্কলারিও দুঙ্গার সমালোচনা করেছেন।
ফিফা যদিও গতকাল বলে দিয়েছে তারা দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে দুঙ্গার রোববারের আচরণের তুলনা করতে চান না। তারা তাই এ বিষয়ে কোন তদন্ত চালাবেন না। কিন্তু ব্রাজিলীয় সাংবাদিকরা দারুণ রুষ্ট। তারা গতকাল বলা শুরু করেছেন, দুঙ্গা আইভরি কোস্টের সঙ্গে খেলার দিন ফরাসি রেফারি স্টিফেনকে ‘চোর’ বলেছিলেন। ফিফার আইনমতে এর একটা বিহিত হতে পারে। শাস্তি না হোক অন্তত তাকে একটা সতর্কপত্র বা জরিমানা করা হোক। ঘটনার সূচনা আইভরি কোস্টের সঙ্গে খেলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে।
কাকা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন দুঙ্গা। সে সময় ব্রাজিলের গ্লোব টিভির সাংবাদিক অ্যালেক্স এস্কোবার নেতিবাচকভাবে মাথা নাড়ান। ওই সময় অ্যালেক্সের মোবাইল ফোনে একটি কলও আসে। অ্যালেক্স সেটি রিসিভ করেন।
দুঙ্গা এ সময় অন্য এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি কথা থামিয়ে দেন। মুহূর্তেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। সবাই দুঙ্গার দিকে তাকান। এরপরের কথোপকথন এরকম:
দুঙ্গা: কোন সমস্যা?
অ্যালেক্স: আমাকে বলছেন?
দুঙ্গা: ইয়াহ
অ্যালেক্স: আমি আপনার দিকে তাকাইনি। আমি তো এদিকটায় নজর রাখছিলাম।
দুঙ্গা: ওহ! তাই নাকি। আমি ভাবলাম আমার দিকেই!
অ্যালেক্স: না। না।
এরপরে আসলে পুরো কক্ষের পরিবেশ বদলে যায়। একটু থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। ঘটনা এখানেই চুকেবুকে যায়নি। দুঙ্গা হয়তো খেয়াল করেননি, প্রেস কনফারেন্স রুমের মাইক্রোফোন ছিল তীব্র। মাইক্রোফোনে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দও এড়ায় না। দুঙ্গা আপন মনে গজগজ করছিলেন। কিন্তু তার প্রতিটি শব্দ সবার কানে ভেসে আসে।
দুবার তিনি অ্যালেক্সকে উদ্দেশ্য করে ‘চিকেনশিট’ এবং তিন বার ‘হিজ শিট’ কথাটি উচ্চারণ করেন। ব্রাজিলের সাংবাদিকরা আরও তথ্য দিলেন, দুঙ্গা আইভরি কোস্টের খ্যাতিমান তারকা দ্রগবাকেও মাঠে একবার ‘শিট’ বলেছেন। এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। এটা গত বছরের নভেম্বরের ঘটনা। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ যোগ্যতা নির্ধারণী খেলার পরে সংবাদ সম্মেলনে মারাদোনা সাংবাদিকদের নিন্দা করেছিলেন। তার বিস্ফোরক উক্তি ছিল : ‘তারা (সাংবাদিকরা) সব সময়...চুষতে থাকে। এখনও তারা চুষেই চলেছে।’ এই মন্তব্যের পর ফিফা তদন্ত চালায়। তিনি শাস্তি পান। তাকে ৪১ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। আর দু’মাসের জন্য তাকে সাসপেন্ড করা হয়। সে কারণে কেপটাউনে যোগ্যতা নির্ধারণী চূড়ান্ত খেলায় মারাদোনা অংশ নিতে পারেননি।
ব্রাজিলীয় অনেক সাংবাদিক ফিফাকে প্রায় তাড়া করেন। বিশেষ করে গ্লোব পত্রিকার বড় নেটওয়ার্ক আছে। তাদের প্রকাশনাগুলো দুঙ্গাকে নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। গ্লোব-এর পাঠক জরিপ বলেছে অধিকাংশ ব্রাজিলীয় মনে করেন অসদাচরণের জন্য দুঙ্গার শাস্তি হোক। তারা যুক্তি দিচ্ছে: ফিফার শৃঙ্খলা কোডের ৫৭ অনুচ্ছেদ যদি মারাদোনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে দুঙ্গা পার পাবেন কেন? দুঙ্গার এরকম মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এবারই প্রথম নয়। গত বছর কনফেডারেশন কাপের সময় দুঙ্গা একজন মিসরীয় রিপোর্টারের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। ওই রিপোর্টার রাগ করে সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন। পরে তিনি দুঙ্গার বিরুদ্ধে নালিশ জানান ফিফার কাছে।
গতকাল জোহানেসবার্গে ফিফার মুখপাত্র বলেছেন, আমি মারাদোনা ও দুঙ্গার ঘটনার মধ্যে তুলনা করতে পারবো না। দুঙ্গা যা বলেছেন সে সম্পর্কে আমি কোন মন্তব্যও করতে চাই না। তবে তিনি যা বলেছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা যায় না। ২১শে জুন ফিফার আরেক কর্মকর্তা নিকোলাস মেইনগট অবশ্য বলেছিলেন, তিনি এসব বিষয়ে অবগত নন। তবে অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখবেন। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলন করা বাধ্যতামূলক। দুঙ্গা সেদিন ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারাই ফুটবল পছন্দ করেন তাদের দেখার মতো সুন্দর চোখ থাকা চাই। কিন্তু যারা খেলা পরিচালনা করেন তাদের জানা থাকা উচিত ফুটবল কি? দুঙ্গা গতকাল কাকার লালকার্ডকে পুরোপুরি অন্যায্য হিসেবে বর্ণনা করেন।
কাকা রোববার কোন মন্তব্য করেননি। তার কথা ছিল, ‘আমি এবিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। আমি এমন কিছু করিনি যাতে এই শাস্তি আমি পেতে পারি। ইমেজ তো ধারণা করাই আছে। ফিফার কমিটি ও জাজদের প্রতি আমার আস্থা আছে।’ অবশ্য মিডফিল্ডার ফিলিপ মেলো অকপট: কাকা সেদিন কিছুই করেনি। রেফারি একটা অবস্থার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু গতকাল মন্তব্য করেছেন কাকা। তনি বলেন, তার বহিষ্কারকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছেন। তিনি নিজকে আরও প্রস্তুত করতে সময়টা কাজে লাগাবেন।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×