somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কথা-৩৪

২২ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছে...
রানা মাঝে মাঝে চারুকলায় যাওয়া শুরু করলো, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম
সবাই দেখে অবাক হলো আমার চেয়ে বয়সে এতো বড়! কি করে আমার ভালো লাগলো।
ওদের সাথে দুষ্টুমি করে সেদিন গানের লাইন বলেছিলাম-’প্রিয়ার কি রূপ সেই জানে যে কখোনো ভালোবাসে’।
সবাই হেসেছিল আমার কথা শুনে।
কিন্তু আমার জীবনেও যে মেঘ জমতে শুরু করেছে তা কেউ জানলো না।
মন যত খারাপই থাক, চারুকলায় গেলে প্রাণ খুঁজে পেতাম কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যেতাম সব।
পড়াশোনাটা করতে পারছি এটা একটা বড় পাওয়া মনে হতো আমার কাছে।
যেহেতু কম সময় চারুকলায় থাকতাম তাই ফ্রেন্ড সার্কেল খুব বড় ছিলো না আমার, এমনি বন্ধুত্ব ছিলো সবার সাথে তবে ক্লোজ তেমন কেউ ছিলো না নাসরিন আর কাওসার ছাড়া।
কাওসারের সাথেও একটু কম কথা বলার চেষ্টা করি কারণ বুঝতে পারছি তার ভালোলাগাটা কমছে না বরং বাড়ছে।
সেদিন তিনজনে মাঠে বসে আছি থিওরী ক্লাসের অপেক্ষায়, নাসরিন বললো চলে যাই আজ ক্লাস করবো না ভালো লাগছে না, থাকতে বললাম থাকলো না। আমরা দু’জন একা বসে আছি।
দু’একটা কথা হচ্ছে হঠাৎ করেই মনে হলো কায়সার একটু ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে, আমাকে বললো -তোমার শরীরের গন্ধে একটা মাদকতা আছে, তুমি কি সেটা জানো?
অবাক হয়ে তাকালাম, কি বলছো! মাদকতা মানে কি?
নেশা আছে প্রচন্ড নেশা। যা শুধু কাছে টানে।
কেমন যেনো অসস্তি লাগলো, আবেগপ্রবণ হয়ে বলে ফেললো ঠিকই কিন্তু কথাটা বলে ও নিজেও অসস্তি বোধ করলো বলে মনে হলো আমার। এপ্রসঙ্গে আর কিছু বললো না তাড়াতাড়ি অন্য প্রসঙ্গ টেনে পরিবেশটা নরমাল করার চেষ্টা করলো।
তারপর আবার সব স্বাভাবিক,
দু’তিন মাস পর একদিন নাসরিন কারো সাথে দেখা করার জন্য জাহাঙ্গীর নগর যাবে বললো,
আমাকে বললো তুই আমার সাথে চল আমি একা যাবো!
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যেতে হবে তবু রাজী হলাম, কখোনো যাইনি তাই দেখার ইচ্ছা ছিলো।
হঠাৎ করে কাওসার বললো তোমরা দু’জন একা যাবে কেনো আমিও তোমাদের সাথে যাবো। ওখানে আমার অনেক বন্ধু আছে, আমি সব চিনি তোমাদের অনেক কিছু দেখবো। নাসরিন রাজী হলো। আমিও কিছু বললাম না।
পরদিন তিনজন রওনা দিলাম, পৌঁছালাম। সারাদিন অনেক বেড়ালাম আমার দু’একটা স্কুলফেন্ডদের সাথে দেখা হলো, সারাদিন ভালোই কাটলো। এবার ফেরার পালা জাহাঙ্গীর নগরের বাসে উঠে পড়লাম, তিনজনই বসলাম পাশাপাশি, রাস্তার মাঝামাঝি প্রায় সন্ধ্যা আমি আর নাসরিন কথা বলছি কাওসার চুপচাপ।
হঠাৎ ও বললো আমি একটা কথা বলতে চাই কিছু যদি মনে না করো
বললাম কি এমন কথা বলে ফেলো
তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো এই প্রথম এবং এই শেষ কিন্তু তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না, প্লিজ! প্লিজ!
ভুল বুঝবো কিনা সেটা পরের বিষয়, বলতে চেয়েছো বলে ফেলো, নাসরিনও শুনছে আমাদের কথা।
ও বললো আমি তোমার হাতে একটা কিস্ করতে চাই। শুধু একটা এটাই আমার সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আমি অবাক হলাম, কি করে নির্দ্বিধায় এমন কথা বলতে পারলো- কি বলছো তুমি, বুঝে বলছো?
হঠাৎ নাসরীনও বলে বসলো দেনা হাতেইতো একটা কিস্ করতে চেয়েছে দিলে কি এমন হবে এমনতো কিছু না।
বললাম হয়তো কিছুই না আবার অনেককিছু। আমিওতো মানুষ তাতে আমারওতো সমস্যা হতে পারে, আমি কিভাবে নিচ্ছি সেটাও একটা ব্যাপার, এমন দু’একটা কথা হচ্ছিলো,
হঠাৎ করে কাওসারের কি হলো জানি না আমার হাতটা জোর করে ধরেই আমার হাতে একটা কিস্ করলো।
কি জানি থমকে গেলাম...
তারপর সবাই চুপ আমিও কোন কথা বলিনি কাওসারও না। ঢাকা পৌঁছালাম।
পরদিন চারুকলায় গেলাম ও অপরাধির মত আমার সামনে দাড়ালো আমি কিছু বললাম না, কোনো কথা হলো না।
রাগ বা ঘৃণা কোনটাই ওর উপর আমার হয়নি কিন্ত কেনো কথা বলতে পারছি না, ইচ্ছাও করছে না।
নাসরিন শামছুন্নাহার হলে থাকতো, অসুস্থ থাকায় কদিন চারুকলায় আসছে না। কাওসার প্রতিদিন ওর হলে যেয়ে বসে থাকতো আর ওকে বলতো, প্লিজ তুমি ওকে একটু বুঝিয়ে বলো আমাকে যেনো ও ভুল না বোঝে, যেভাবে পারো ওকে একটু বুঝাও, আমার ভুল হয়েছে, কিজে হয়েছিলো আমার আমি জানি না, মাথা ঠিক ছিলো না।
স্থির ছেলেটা খুব অস্থির হয়ে উঠলো। খারাপ লাগছিলো ওর জন্য কিন্তু কেনো যেনো মন থেকে মানতে পারছিলাম না।
ওর কথামত নাসরিন অনেক বুঝিয়ে বলেছিলো আমাকে, আমি বললাম রাগ করিনি আমি ওকে ভুলও বুঝিনি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
কেনো যেনো ওকে আর স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলাম না আমি। ফ্রি ভাবে কথা বলতে পারছি না। দরকারের কথা ছাড়া কথা হতো না।
ভালোবাসার পরিমাণটা হয়তো অনেক বেশী ছিলো ওর সেদিন বুঝেছিলাম,
হয়তো বুঝেছিলাম বলেই অবচেতনভাবে ওকে দুরে ঠেলেছিলাম। ওকে আরো কষ্ট দিতে চাইনি বলে।

ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা শেষ সবাই বললো পিকনিকে যাবে। কিন্তু আমি কি করে যাবো! রানাতো আমাকে যেতে দেবে না কিন্তু সবাই ধরলো যেতে হবে, আম্মার বাসায় থাকলাম পিকনিকে গেলাম রানাকে কিছু বললাম না।
বয়সতো কম ছিলো মনটাও ছোট মানুষের মত ছিলো অনেক কিছুই ইচ্ছা করতো,
বিয়ের আগে ভাবতাম আম্মা অনেক শাসন করে বিয়ে হলে আমি হয়তো অনেক স্বাধীন জীবন পাবো। কিন্তু না ঘটনা ঘটলো তার উল্টো যতটুকু স্বাধীন ছিলাম তার চেয়ে বেশী পরাধীন হয়ে গেলাম।
পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমারা শালবন যাবে, রাস্তায় সবাই খুব মজা করলো,
হঠাৎ দেখলাম একটা ছেলে মাথায় একটা লাল ক্যাপ দেখতে খুব সুন্দর স্মার্ট বেশ লম্বা।
নাসরিনকে বললাম কে ছেলেটা, ও বললো চিনিস না! আমাদের ক্লাসেরইতো ওর নাম ঝন্টু।
আমাদের ক্লাসের ছেলে আমি গত এক বছরে দেখিনি তাকে- অবাক হলাম! পরিচয় হলো পিক্নিকে যেয়ে ওকে ঘটনাটা বললাম ও হাসলো ও বললো তুমি না চিনলেও আমি তো তোমাকে চিনি।
দেখতে খুবই ইনোসেন্ট ছেলেটা বেশ ফর্সা ওকে দেখে কেনো যেন অরণ্যর কথা মনে হলো।
ঝন্টুর সাথে ভালো একটা ফ্রেন্ডশীপ হয়ে গেলো।
আউটডোরে কাজ থাকলে ঝন্টু আমার পাশেই বসতো সব সময়,
ওকে আমি সবসময় একটু ছোট ভাবতাম বলতাম তুমি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হবে,
ভীষণ রাগ করতো ও, বলতো কক্ষোনো না। আমিই তোমার চেয়ে বড়ই হবো।
আমি বলতাম নিজেকে এতো বড় ভাবার চেষ্টা কেনো করো। বিয়ে করবে মেয়ে দেখবো ? ও রেগে যেতো।
বেশিরভাগ সময় নাসরিনও থাকতো আমাদের সাথে। আমার বন্ধু মানে ওরও বন্ধু। কারণ ও সব সময় আমার সাথেই থাকতো।
কাওসারের সাথে যে ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হয়ে গেলো তা না, যদিও কথা একটু কম হতো। তবে বন্ধু হিসাবে আমি কখোনো ওকে ভুলিনি।

চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:৪১
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×