somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েট মেধাবীদের তৈরি করছে ব্যবহার করতে পারছে না রাষ্ট্র (আমাদের ভাবনা)

২১ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ’৮৬-এর ব্যাচে মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৩১ জন। তাঁদের ২৫ জনই এখন বিদেশে। একই বিভাগের ’৯৪-এর ব্যাচের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ৩৫ জন পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। ’৯৮-এর ব্যাচের ৬৫ জনের মধ্যে অন্তত ৩০ জন কাজ করছেন দেশের বাইরে। ইয়াহু, গুগল, মাইক্রোসফট, আইবিএমের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে ভালো অবস্থানে আছেন তাঁদের অনেকে।
জানা যায়, শুধু ওই বিভাগ নয়, বুয়েটের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শিক্ষা শেষে পাড়ি জমান বিদেশে। উচ্চতর শিক্ষা বা চাকরি সূত্রে তাঁরা দেশ ছাড়েন। পরে সাধারণত কেউই আর ফেরেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব ও মেধার স্বীকৃতি না দেওয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে থাকছেন না। বুয়েট থেকে শুধু স্নাতক ডিগ্রি নিতে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য রাষ্ট্রের ব্যয় হয় প্রায় আট লাখ টাকা। রাষ্ট্র তাঁদের তৈরি করলেও ব্যবহার করতে পারছে না। তাঁদের মেধা ব্যবহার করছে বিভিন্ন ধনী দেশ। এর বিনিময়ে দেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই মেধাবীদের দেশের প্রযুক্তি ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো।
ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসি-২০১০ (সংশোধিত)-এ বলা হয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকার বেশ কয়েকটি কারণের একটি হচ্ছে ‘মেধা পাচার’। মেধা পাচার ও দক্ষ জনশক্তির ইমিগ্রেশন সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বারোপ করে তা বন্ধ করার কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশে বিজ্ঞান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র সীমিত। ফলে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার আগ্রহ কমছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম মোজাম্বিকে বুয়েটের মেধা পাচার নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, বুয়েট থেকে পাস করার পর শিক্ষার্থীদের ৮০ ভাগ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের ৬০ ভাগ এ ক্ষেত্রে সফল হন।
সুযোগ-সুবিধার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার অভাবকে তিনি ছাত্রদের চলে যাওয়ার জন্য দায়ী করেছেন।
ম. তামিমের ওই উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশে পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রে দক্ষ জনসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ জন্য বুয়েটে কানাডার সহায়তায় ১৯৮৬ সালে পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমআরই) বিভাগ চালু হয়। ১৯৯৫ সালে শুরু হয় শিক্ষাকার্যক্রম। যৌথ কার্যক্রমের আওতায় প্রথমবার বুয়েটের পাঁচজনকে কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় উচ্চশিক্ষার জন্য। পিএইচডি শেষে পাঁচজনের একজন দেশে ফিরে এসে তিন মাস ছিলেন, তার পর আবার পাড়ি জমান কানাডায়। দুজন দেশে ফিরে তিন বছর থেকে চলে যান কানাডায়। আর একজন দেশে ছিলেন সাত বছর। অন্য একজন নরওয়ের নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ডিগ্রি নিয়ে সেখানেই ফিরে যান।
একই প্রকল্পের আওতায় পানিসম্পদের ওপর দুজন এবং ছয়জনকে রসায়ন প্রকৌশলে প্রশিক্ষণের জন্য আলবার্টাতে পাঠানো হয়। এঁদের মধ্যে রসায়নের দুজন মাত্র দেশে ফিরে আসেন। বাকি প্রশিক্ষণার্থীরা সেখানেই থেকে যান। আর পানিসম্পদের জন্য যে দুজনকে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের একজন দেশেই ফেরেননি। অন্যজন দেশে ফিরে আড়াই বছর পর আবার পাড়ি জমান বিদেশে।
যাঁরা এসব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ হয় দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন অথবা দেশেই মোটা বেতনে বিদেশি কোম্পানিগুলোতে কাজ করছেন। ফলে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় দক্ষ জনসম্পদের অভাব রয়ে গেছে।
বুয়েটের উপাচার্য এ এম এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী ছাত্ররা দেশে উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না। তাঁদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বুয়েটের অনেক ছাত্রই এখন বিভিন্ন দেশের বিশ্বস্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। দেশেও তাঁদের কাজে লাগানো যেত। এ জন্য দরকার নীতিমালা। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। তা করতে হলে দেশের এসব মেধাকে আগে কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে এখন মেধা পাচার প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। তারা মেধাবীদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।’
২০০৬ সালে ডেনমার্ক বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের সম্ভাবনা যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে। তাঁরা আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিংয়ে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। এঁদের সস্তায় ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এ দেশে প্রতিবছর এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার উপযুক্ত লোক পাওয়া যায় না। তার বড় কারণ ‘ব্রেন ড্রেন’।
গত ১০ মার্চ জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য মেধা পাচার রোধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমছে। তার কারণ বেসরকারি পর্যায়ে কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটরগুলোতে বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীর কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।


আসুন আমরা আমাদের ভাবনাগুলো লিখি
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×