somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্জেন্টিনা রুপকথার মহানায়কদের দল। পুরোনো স্মৃতি এখনো মনেপড়ে।ভালো থেকো টিম আর্জেন্টিনা, ভালো থেকো ম্যারাডোনা

১৯ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৬ সালে আমি খুব ছোট ছিলাম।চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনীতে থাকতাম।দিয়াগো ম্যারাডোনার বিস্ময়কর খেলা এখন স্মৃতিতে এখনো অক্ষয়। তার দুর্দান্ত খেলায় আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করে। সেই থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত।আমার পাড়াপ্রতিবেশী চন্দনা আপা,তারিকভাই, শামিম ভাই, পারভেজ, পান্না, জাবেদ সহ অনেকে আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করতো তাদের সাথে থেকে সেই বিস্ময়কর মুগ্ধ হয়ে ম্যারাডোনার খেলা দেখতাম। তাদেরকে ছোট বেলায় রুপকথার মহানায়কদের মতন মনে হতো। আমার বাসার কাছের দোকান থেকে ১টাকা দামের ছোট ভিউ কার্ডকিনে বাসায় রেখে দিতাম। মাঝে মাঝে বেরকরে দেখতাম আর্জেন্টিনার দলটিকে। বড় পোস্টার কিনার অনেক ইচ্ছা হতো কিন্তু আমার মায়ের কাছে ১টাকার বেশী চাইলেই চোখ গড়ম করে আমার দিকে তাকাতো, আমি চুপসে যেতাম। পোস্টারের দাম ছিলো ৫ টাকা, আর সেই সময় ৫টাকার অনেক দাম। অন্যেরা পোস্টার কিনে নিয়ে গেলে আমি তাকিয়ে থাকতাম। আমাদের বাসায় তখন রঙ্গিন টিভি ছিলোনা।পুরো কলোনীতে তখন কয়েকটা বাসায় টিভি ছিলো। তারিক ভাইদের বাসা ছিলো আমাদের বাসার অপজিটে সেই খানে আমরা বন্ধুরা ভিড় করতাম। হৈ হুল্লোর করতাম। অনেক অনেক মজা হতো। একে একে সময় চলে যায়। কলোনী ছেড়ে আস্তে আস্তে অনেকে চলে যায়। আমার আব্বাও বগুড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়ে যায়। আমাদেরকে চলে যেতে হয় আগ্রাবাদে নিজস্ব বাড়িতে। প্রিয় সহপাঠী ও বন্ধুরা কে কোথায় চলে যায় অনেকেরি খবর নাই।সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকুরী জীবি মানুষের একে অপরের থেকে দ্রুত বিচ্ছিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝ খানে ঘটে যায় অনেক অঘটনের বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনা ডোপ পাপে নিষিদ্ধ হয়ে যায়(নাকি ষড়যন্ত্র??)। আর্জেন্টিনার পরাজয় আমাকে অনেক কস্টদিয়েছিলো। ৯৮ সালে ফ্রান্সের উত্থান, ২০০২ ব্রাজিলের রেকর্ড জয়, ২০০৬ কোথাকার ছিচকে ইটালির বিশ্বজয়, কোনো বারই আমি নিরাশ হইনি। সর্বদাই আর্জেন্টিনার পাশে ছিলাম। মাঝখানে ঘটে যায় আমার জীবনে অনেক অনেক আনন্দ বেদনার ঘটনা, আমি এস এস সি পাশ করি। এইচ এস সি পাশ করি। আমার বাবা ট্রান্সফার হয়ে চট্রগ্রামে ফিরে আসেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করি। আমার বাবা রিটায়ার্ড করেন। আমাদের বাড়িটি বিক্রয় করে ঢাকাতে স্থায়ী ভাবে চলে আসি। সহপাঠী বন্ধুরা এখন আমার থেকে অনেক অনেক দূরে সবাই একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। নতুন এখন কেন যেন কারো সাথে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়। জানিনা কেন যেন এমন হয়। পাশের ফ্লাটের ছেলেটির সাথে কথা বলে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু পারিনা। কেন যেন সংকোচবোধ কাজ করে। যদি মাইন্ড করে? সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়, আমিও আমার মতন যাতায়াত করি। আমি যেই বিল্ডিং এ থাকি, প্রায় সবাই এমন। একে অপর কে চিনে না। এ যেন এক রস কষ হীন জীবন। অফিসেও আমার কোনো বন্ধু নেই। কারন আমি বস(দুর্ভাগ্য জনক ভাবে)। যারা আমাকে স্যার ডাকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা কঠিন, আরো অনেক অফিসিয়াল বাধা আছে। কি আর করা অগ্যতা আমার বন্ধু আমার কম্পিটার। এটা দিয়েই আমার সময় কাটাই। কেমন যেন যন্ত্রের মতন জীবন। বাসায় আমার ছোট ভাই মবাইলে ফ্রেন্ড, আইপড, ইন্টারনেট ফেসবুক নিয়ে ব্যাস্ত, আমার সাথে কথা বলার সময় কম। আমার মা রান্না-বান্না আর স্টার প্লাসের সিরিয়াল নিয়ে ব্যাস্ত। আমার বাবা প্রতিঘন্টার সংবাদ এন টিভি,আরটিভি,ইটিভির সংবাদে ব্যাস্ত। আমি বাধ্য হয়ে আমার ঘরে কম্পিটারে ব্লগ, সংবাদপত্র, অন্যান্য ওয়েব সাইট নিয়ে বিজি থাকি। আগে যাখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের সংসারে কিছুটা অভাব ছিলো, মাস শেষে টাকা পয়সার টানা টানি হতো। আমাদের একটি সাদাকালো টেলিভিশন ছিলো। ডিশ ছিলো না। কিন্তু অনেক সুখী ছিলাম, পাড়া প্রতিবেশীরা আমাদের বাসায় আসতো। আমরাও তাদের বাসায় যেতাম। ঈদে চান রাতে, শবেবরাতের রাতে, রমজানে অনেক অনেক মজা করতাম। পুরো একটি পাড়া যেন একটি পরিবার ছিলো।একজনের সুখে দুঃখে আরেকজন পাশে থাকতো।আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন আমাদের পরিবারে প্রাচুর্যের ছোয়া আছে। কোনো কিছুরই অভাব নাই। কিন্তু জীবন টা কোথায় এসে যেন থেমে গেছে। সবই আছে, কিন্তু কি যেন নেই। ছোট বেলায়র সেই হাসিখুশি আর প্রানোচ্ছল জীবন টা নেই। সবাই যন্ত্র মানব হয়ে গেছে।

এসেছে ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপ আবার আমার মনে নিয়ে এসেছে শান্তির পরশ। খেলছে আমার ছোট বেলার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। আমার পরিবারেও ফিরে এসেছে রংধনুর পরশ। আমার মা আর আমি আর্জেন্টিনা, আমার ছোট ভাই অন্ধ ব্রাজিল সমর্থক। ভীষন মজা হয় একসাথে খেলা দেখতে। মনে হয় নতুন প্রান ফিরে পেয়েছি । আমার প্রিয় নায়ক ম্যারাডোনা এখন কোচ। কোরিয়াকে যখন আর্জেন্টিনা ৪-১ গোলে হারিয়ে দেয় তখন আমার উল্লাস আর ছোট ভাইয়ের বিষন্নতা ছিলো উল্লেখ করার মতন।মেসির খেলা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার কাজিন কয়েক জন আর্জেন্টিনা সমর্থন করে। ওদের সাথেও আমার ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়েগেছে।কাজিনের দু একজন বন্ধুর সাথেও আমার ফ্রেন্ডশীপ হয়েছে । আগামী আর্জেন্টিনার খেলা ওদেরকে সাথে নিয়ে দেখবো অনেক মজা হবে। এই বিশ্বকাপ যেন আমাকে ভীষন আনন্দ দিচ্ছে, সেই ছোট বেলায় বাবার সাথে ছোট ভাইকে নিয়ে চট্রগ্রামে মেলায় যাবার মতন(জব্বারের বলীখেলা ও বিজয় মেলা)।
খেলা শেষে আবার বিষন্নতায় ডুবে যাই, ভাবি আরে!!! এই বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট ১১ই জুন শেষ হয়ে যাবে। একটি স্বপ্নের মতন সময় এতো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে? আবারো সেই যন্ত্রের লাইফ।

যাই হোক আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক আর না জিতুক , আর্জেন্টিনা সর্বদাই আমার কাছে মহানায়কদের দল। যখন আমি আর্জেন্টিনার খেলা দেখি তখন আমার কাছে খেলোয়ারদের রুপকথার বীরদের মতন মনে হয়। পাশে অনুভব করি সেই সব পুরানো সাথীদের। নস্টালজিয়ায় পড়ে যাই।

টীম আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে বার বার হেরে যেতে পারে কিন্তু আমার মনের আর্জেন্টিনা কখনো হারবে না। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা আমার কাছে সর্বদাই হিরো। আস্তে আস্তে আমি বুড়ো হয়ে যাব। কিন্তু তার পরেও আমি আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করে যাবো। যতোদিন বেচে থাকি। যেই কয়টা বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ হয়।

ভালো থেকো টিম আর্জেন্টিনা ভালো থেকো ম্যারাডোনা।

১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×