আজকের হাওয়া বাতাস টা খুব দারুণ ছিল। বিকেলের দিকে। আমার রুমের বারান্দায় বাতাসের ঝাপ্টায় দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না। মেয়েরা সারাদিন খেলাধূলা করে তখন ঘুমিয়ে, আমি বারান্দার গ্রীল ধরে খুব উপভোগ করছিলাম। এমন বাতাস, গ্রিল-ছুঁয়ে থাকা গাছের পাতা, হাল্কা বৃষ্টির পূর্বাভাস---এমনটা সেই রোকেয়া হলের পরে আর কোথাও পাইনি।
আড্ডা, রুমের হীটারে বানানো চা, গান আর গল্পের বই!!
বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে গেলো। টিভি-প্রেমিক নই বলে আমি এই স্রোতে পড়িনা। তবুও হলের সময়কার বিশ্বকাপ মানে হাওয়ায় হাওয়ায় উত্তেজনা! টিভিরুমের জটলা-পাকানো খেলা দেখা ‘সেরকম’ একটা ব্যাপার ছিল।
ভাবছিলাম, এমন পরিবেশ, একটা বারান্দা, এমন নির্ঝঞ্ঝাট উইকেন্ড যদি সে-সময়ে পেতাম! আড্ডামারার জন্য সেসময় এমন একটা জায়গা কতো খুঁজেছি! রাস্তায়, ফুটপাথে, দোকানপাটে, এর বাসায় ওর ঘরে---আজ আমার এই বারান্দা টাকে মনে হচ্ছিল বন্ধুবিহীন আড্ডাখানা।
প্রবাসে কী আছে? কেন বেছে বেছে আমার বন্ধুরা আজ প্রবাসী? একজন নয়, দু’জন নয়, একে একে সবাই? এ-ও কি হয়?? ভুতে পেয়ে বসলো আমাকে। নস্টালজিয়ার ভুত। ফোন করি। রিং হয়, তারপরে আসে ভয়েস মেসেজের রিকোয়েস্ট। নাহ্ বিদেশি ফোনগুলা হুদাই একমিনিটের টাকা কাটে এই ভয়েস রেকর্ডের ধান্দায়। ফোনবুক খুঁজে বের করলাম আরেকজন। তার ওখানে রাত নয়টা বাজার কথা। ফিসফিস স্বরে সে বল্লো তার ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছে। কাল সে আমাকে ফোন করবে। হঠাৎ খেয়াল হলো একজনের গতকাল দেশে আসার কথা। চিটাগাং এর নাম্বারে ডায়াল করলাম। মনটা ভীষণ খুশী লাগছিল। কতদিন পরে আবার আগের মত আড্ডা দেবো ফোনে!! ওহ্ না, তার ছোটবোন বল্লো জেট-ল্যাগের কারণে সে দিনে ঘুমায় রাতে জেগে থাকে।
আড্ডার তৃষ্ণা মেটেনা আমার। সেই বের হলো কালো ব্যাগের ভেতর থেকে ল্যাপ্টপ। ইন্টারনেট। তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেতে বের করলাম একজন-কে। অনলাইন। মুখ ভরে গেল হাসিতে। মন জুড়ে আনন্দ।
বারান্দায় আমি, আমার ল্যাপ্টপ, সামনে বন্ধু। ব্যাকগ্রাউন্ডে দামাল বাতাস, উড়ে আসা গাছের পাতা আর তেড়ে আসা ঘরের পর্দা এবং আমার নস্টালজিয়া।