(বাংলাদেশের কূটনীতিবিদদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তেমন কিছু জানেনা। তবে যারা বিদেশে পেটের দায়ে থাকেন থাকে তারা জানেন এরা কি জিনিস! পত্রিকায় একটি খবর পড়লাম। তাতে তাদের সামান্য স্বরূপ ফুটে ওঠেছে। তবে আরো কত কিছু ঘটে যা সাধারণ মানুষ কোন দিনই জানতে পারে না। আসুন, আমরা খবরটি সবাই মিলে পড়ে দেখি ঘটনাটা কী? কারা বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, কিভাবে করছেন? কেন করছেন? )
তলব করলেও ঢাকায় আসেননি উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হাসিব
অনুমোদন ছাড়াই বিয়ে
খুররম জামান: উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসিব আজিজকে ঢাকায় গত এপ্রিলে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৩ এপ্রিল হাসিব আজিজের দ্বিতীয় স্ত্রী ফারিম হাসিব বেবীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৮২ সালের পররাষ্ট্র ক্যাডার এ কর্মকর্তাকে তলব করা হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু এরই মাঝে হাসিব আজিজ গত ১০ জুন আইগুল নামে এক উজবেক নারীকে বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসিবের দ্বিতীয় স্ত্রী ফারিম হাসিব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঐ রাষ্ট্রদূতের প্রতি কঠোর মনোভাব ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এবং তাকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ অমান্য করার কারণ জানতে চেয়েছেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন কর্মকর্তা হাসিব আজিজকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার বদলে অন্য কোনো দূতাবাসে বদলি করার চেষ্টা করছে। তিনি জানান কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় সরকারের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে তো বটেই দেশও বিয়ে করতে পারেন না। তিনি জানান, হাসিবের বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী প্রতারণা অভিযোগ করেছেন।
হাসিব আজিজের প্রথম স্ত্রী ছিলেন সাবেক খাদ্য ও তথ্য সচিব নূরুন্নবীর মেয়ে নেহেরি চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে তাদের বিয়ে হয় এবং ২০০৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
হাসিব আজিজের দ্বিতীয় স্ত্রী ফারিম পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিযোগের জানিয়েছেন ‘উনি আমাকে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। প্রতিবাদ করলে আমাকে ছেড়ে দেবার হুমকি দিতেন। এ ব্যাপারে পারিবারিক আদালতে মামলাও করেছি।’
অভিযোগ শুনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার ব্যাপারে ফারিমকে একটি চিঠি দিতে বলেন। মন্ত্রী এর বিচার করে দেবেন বলেও জানান। কিন্তু এর মাঝে হাসিব আজিজ না ফিরে আর একটি বিয়ে করায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফারিম অভিযোগ করেন, তাদের ৭ বছরের একটি ছেলে ও ৫ বছরের একটি মেয়ে আছে। হাসিব আজিজ তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন না। ভরণ-পোষণও দেন না। স্ত্রী ও সন্তানদের গত আট মাস ধরে বাংলাদেশে রেখেছেন। ফারিম বলেন, তার বাবা একজন সাধারণ কৃষক। তিনি বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাটে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। পারিবারিক আদালতে তার ও তার সন্তানদের ভরণ-পোষণ চেয়ে মামলা করেছেন; তবে তালাকের কোনো মামলা করেননি।
তিনি বলেন, তার স্বামী হাসিব বিভিন্ন জায়গায় বলছেন তাকে তালাক দিয়েছে। তবে এ সম্পর্কে কোনো চিঠি তিনি পাননি। ২০০২ সালে তাকে প্রথম সার্ভেন্ট সাজিয়ে লন্ডন নিয়ে যায়। তার আগে ঢাকায় মৌখিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের ঘটনাটি গোপন রাখতে বলে। ২০০৭ সালে উজবেকিস্তানে যাবার আগে লন্ডনে হাসিব বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলো। আমাকে সে বলেছিল বিদেশে আমার ভাল চাকরি জোগাড় করে দেবে। তখন তার আগের স্ত্রী ছিল। লন্ডনে গিয়ে আমাকে অনেক খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়। আমি লন্ডন থেকে চলে আসতে চেষ্টা করি সে আমাকে আসতে দেয় না। এ ঘটনা তার আগের স্ত্রী জানতে পারে। ২০০৩ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়।
(কৃতজ্ঞতা: দৈনিক আমাদের সময়, ১৭ জুন ২০১০)