somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার চোখে চায়না:)B-)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চায়না........এ দেশটার প্রতি আমার মুগ্ধতা ছোটবেলা থেকেই।এদেশের মানুষের পোশাকআশাক সংস্কৃতি প্রায় সব কিছুই পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা,যা আমাকে সবসময় আকৃষ্ট করে।“দ্যা গ্রেট ওয়াল” এই একটা নিদর্শন ই বুঝা যায় এই জাতির অতীত গৌরব।তাই চায়নাতে লেখাপড়া করার সুযোগ আসতেই তা আর হাত ছাড়া করিনি।
চায়নাতে এসেছি বেশ কয়েকমাস হলো।পড়ি হুবেই প্রদেশের একটি ইউনিভার্সিটিতে।এদের ভাষাটা ও রপ্ত করতে শুরু করেছি।দিন যত গড়াচ্ছে এই দেশটার প্রতি আকর্ষণ তত বাড়ছে।
ছোটখাট গঠনের মানুষ গুলো এত কাজ করতে এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না।পুরুষ মহিলা কোন বেধাবেদ নাই, সবাই কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষের চেয়েও এগিয়ে। যেমন এখানে পুরুষ দোকানদার নাই বললে চলে।আর অধিকাংশ গাড়ির ড্রাইভারও মহিলা।এখানে গাড়ির ভাড়াটা উদ্ভুদ ধরনের,১০০ মিটার গেলে ১ টাকা আবার পুরো শহর ঘুরলেও ১ টাকা।
চায়নিজদের ইংরেজী ভাষার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ নাই,যারা ইংরেজী জানে তাদেরও অনেক ইংরেজী শব্দ উচ্চারন করতে সমস্যা যেমন... th এর উচ্চারণ “থ”না করে 'ছ' এর মত করে। thank কে ছ্যাঙ্ক, think কে ছিঙ্ক আর three কে বলে শ্রী। চায়নিজরা এমন অনেক ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করে যার সাথে আমরা অভ্যস্ত নই ।যেমন আমরা বলি তুমি কোন department এ পড় কিন্তু চায়নিজরা বলে তোমার major কি? ওরা university/ varsity না বলে school শব্দই বেশি ব্যবহার করে,আর dustbin না বলে শুধু bin বলে.

বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিজ ছাত্রছাত্রীরা বন্ধের আগে রাস্তার দুপাশে ফুটপাতে বসে তাদের ব্যাবহার করা অপ্রয়োজনীয় সব জিনিস বিক্রি করে দেয়, যেমন জামা-কাপড় থেকে শুরু করে চুলের ব্যান্ড,টেবিল ল্যাম্প,বই-খাতা,চুলের ক্লিপস,ছাতা,ব্যাগ,এমন কি ব্যাবহার করা জুতা পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়।
ঠিকানা লেখতে গেলে আমরা প্রথমে শহরের নাম তারপর জেলা এবং শেষে দেশের নাম লিখি কিন্তু চায়নিজরা লেখে উল্টো থেকে।তারিখের ক্ষেত্রেও উল্টো প্রথমে বছর তারপর মাস আর সবার শেষে তারিখ।
চায়নাতে এসে প্রথম দিকে যে জিনিসটা কটকা লাগে তা হল ছেলেরা মেয়েদের ব্যানিটিব্যাগ বহন করা,পরে জানতে পারি এখানে এটাই নাকি নিয়ম আর এটাই নাকি এদের ভালবাসার প্রকাশ।আর সন্ধ্যার দিকে প্রায় দেখা যায় প্রেমিকা তার প্রেমিকের কাঁধে চড়ে দিব্যি ঘুরতেছে।আমরা অবাক হয়ে তাকালে ছেলেগুলো আবার মিটমিটি হাসে, এটা কষ্টের হাসি না ভাল লাগার হাসি বুঝতে পারি না।
ভাত ছাড়া যে মানুষ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে তা এখানে এসে চাক্ষুস প্রমান পেলাম।এরা একই সময় বেশী খায় না কিন্তু অল্প অল্প করে সারা দিন খায়, হাটতে হাটতে খায়।হাটতে হাটতে খায় কারণ সময় বাঁচানোর জন্য।ন্যুডলস এদের প্রিয় খাবার। কি সকাল কি বিকাল সব সময়ই ন্যুডলস খায়।এরা ন্যুডলস শুধু মাত্র গরম পানিতে সেদ্ধ করে খায়,আমাদের মত তেলে ভেজে খায় না।আর প্রায় এক ফুট লম্বা ন্যুডলস গুলো প্রস্থেও প্রায় আধ ইঞ্ছি।এরা খুব একটা প্রয়োজন না হলে ঠান্ডা খাবার খায় না, ধোঁয়া উঠে এমন গরম খাবার এদের পছন্দ।এমনকি পানি ও খায় গরম গরম।সারা দিন রাস্তার দুপাশ খালি থাকলেও সন্ধ্যা হলে হাজার রকমের খাবারের পশরা সাজিয়ে বসে দোকানদাররা।চায়নিজ খাবার যে কত রকমের কত স্বাদের হতে পারে তা এখানে না আসলে বুঝা যায় না।
আর আমাদের দেশের চায়নিজ রেস্টুরেন্ট গুলো সব দেশি মসলা আর দেশি উপাদান ব্যাবহার করেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এতদিন জানতাম চায়নাতে ১ সন্তান নীতি আছে,তার মানে কারও কোটি কোটি টাকা থাকলেও ১ জনের বেশী সন্তান নিতে পারবেনা।কিন্তু বর্তমানে এই নিয়মটা শিথিল করা হয়েছে।কেননা এই নীতির ফলে তরুনের তুলনায় বৃদ্ধদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।যার ফলে কর্মশীল জনগণের অভাব দেখা দিতে পারে।এখন যেকোন কেউ চাইলে ২ টা সন্তান নিতে পারে,অবশ্য কৃষক পরিবার এবং জনবিরল এলাকার লোকজন দুইয়ের অধিক সন্তান নিতে পারে।
চায়নিজরা সব কিছু চায়নিজ ভাষায় লেখে।এমনকি আমাদেরও একটা করে চায়নিজ নাম দিয়েছে। তবে সংখ্যা লেখে ইংরেজিতে,কেননা সংখ্যা চায়নিজে লেখা অনেক ঝামেলা বিশেষ করে লিং বা শূন্য 零।সংখ্যা ইংরেজিতে লেখলেও উচ্চারন কিন্তু চায়নিজেই করে।
চায়নিজদের যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে তা হল তাদের সময়নুবর্তিতা।এরা যে সময় আসবে বলবে ঠিক সে সময়ই আসবে।এরা এতটাই নিয়ম মেনে চলে যে এক বছরের ক্লাস রুটিন বছরের শুরুতে করে রাখে,এবং সব ক্লাস বা পরীক্ষা ঠিক সময়ই হয়।তাই বছরের শুরুতেই বলে দেয়া সম্ভব কোন দিন কয়টায় ক্লাস,পরীক্ষা।
এবার আসি এদের পোশাকআশাকে।দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে চায়নিজ মুভিতে তাদের যে ধরনের পোশাক পড়তে দেখা যায় এমন পোশাক পড়া কাউকে এখনও পর্যন্ত দেখলাম না।এখানে ছেলেরা টি শার্ট-জিন্স,আর মেয়েরা টি শার্ট আর হাফ প্যান্ট।তবে কি গরম কি শীত ছেলেরা কেডস পরবেই।কাঁধে বা বুকে থাকে ব্যাগ।আর অবশ্যই সাথে থাকবে পানি।
বিদেশীদের মুখ থেকে চায়নিজ শব্দ শুনলেই খুশিতে গদগদ করে, আর বলতে থাকে ‘হেন হাও’ অর্থাৎ “খুব ভাল”।তাই মাঝে মাঝে আমার জানা চায়নিজ শব্দ গুলো ব্যাবহার করে বাহবা নেয়।
এবার আসি এদের সততার কথায়।আমাদের কোলকাতার এক সিনিয়র ভাই আছে যে সব সময় বলে... “চায়নিজদের ২০০% বিশ্বাস করতে পারবি”।এরা কথার ক্ষেত্রে যেমন সৎ কাজের ক্ষেত্রেও তেমনি।আমাদের বিকেলে ক্লাস থাকলে ব্যাগ ভার্সিটিতেই রেখে আসি,কিন্তু কারো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না এই কথা কোন দিন শুনিনি।তাছাড়া তাদের গাড়ি পারকিং করানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নাই,রাস্তার পাশেই রেখে দেয়।কিন্তু কোন গাড়ি থেকে কিছু খোয়া যায় না।
এইখানে আর একটি জিনিস অবাক লাগে।যে রাস্তার পাশে দেখি কোন গাছ নেই পরদিন সকালে উঠে দেখি সেই জায়গায় বেশ লম্বা লম্বা গাছ।এই গাছগুলো অন্য কোথাও থেকে তুলে নিয়ে আসে।আমাদের দেশে যেভাবে নির্বিশেষে গাছ কাটা হয় এইখানে সেটা কখনো দেখিনি।গাছগুলো নিরাপদে তুলে অন্য জায়গায় রোপণ করে।
চায়নার ৮০% মানুষ কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না।তাদের মতে দুনিয়া হল খাওয়া,কাজ করা,ঘুমানো,আর জীবনকে উপভোগ করা।বাকি ২০% এর মধ্যে বোদ্ধ আর অল্প পরিমাণ মুসলিম।আমি যে শহরে থাকি সেইখানে পুরো শহরে একটা মাত্র মসজিদ।
আমদের দেশের মত এইখানেও অবশ্য কিছু খারাপ মানুষ আছে,যারা বিদেশিদের কাছে আসল মোবাইল বলে নকল মোবাইল বিক্রি করে।তবে এদের সংখ্যা অতীব নগণ্য।
সবশেষে বলতে পারি এই দেশটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রযুক্তি,রীতিনীতি,কর্মঠ মানুষ সবমিলিয়ে একটি স্বপ্নের দেশ।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×