মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে ১৫ সম্পাদকদের বিবৃতির সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সব কিছু খতিয়ে না দেখে সম্পাদকরা যেভাবে ওই বিবৃতি দিয়েছেন তা গণমাধ্যমের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
Published : 20 May 2013, 07:36 AM
ভবিষ্যতে তারা আর মাহমুদুরের পক্ষে ‘ওকালতি’ করবেন না বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণের বিপক্ষে দাঁড়ানো আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং পত্রিকাটির ছাপাখানা বন্ধ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গত শনিবার ওই বিবৃতি দেন ১৫টি দৈনিক ও একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক।
তারা মাহমুদুর রহমানের মুক্তি এবং বন্ধ আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভি খুলে দেয়ার দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে ফেইসবুকসহ সোস্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ চার সংগঠনের নেতারা রোববার এক বিবৃতিতে সম্পাদকদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার তথ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, ১৫ জন সম্পাদক এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হয়ে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই ওই বিবৃতি দিয়েছেন।
“মাহমুদুর রহমান সংবাদপত্র জগতে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে তা ব্যাক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন।”
তারা এভাবে বিবৃতি দেয়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাসদ সভাপতি ইনু।
তিনি বলেন, “না জেনে বিবৃতি দিয়ে সাফাই গাওয়া গণমাধ্যমের জন্য মঙ্গলজনক না। আশা করবো, তারা আমাদের যুক্তি গ্রহণ করবেন, ভবিষ্যতে মাহামুদুরের পক্ষে আর ওকালতি করবে না।”
আমার দেশের ছাপাখনায় তল্লাশি চালানো এবং দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধের বিষয়ে আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে সরকারের পদক্ষেপের বিশদ ব্যাখ্যা দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘হ্যাকিং করে বিকৃত তথ্য প্রচার, মিথ্যাচার, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন সব বিষয় প্রচার করার দায়ে’ আমার দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগে।
উপযুক্ত ওয়ারেন্ট নিয়েই আমার দেশের ছাপাখানায় তল্লাশি চালানো হয়েছে এবং সেখানে ‘আপত্তিকর সরঞ্জাম’ পাওয়া গেছে দাবি করে ইনু বলেন, সেখানে আরো তল্লাশি চালানো হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার দেশের ছাপাখানাও খোলা হবে না।
“আমার দেশের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়নি। তল্লাশি শেষ না হলে ছাপাখানা খুলে দিতে পারছি না। অন্য ছাপাখানা থেকে তারা পত্রিকা ছাপাতে পারে।”
ইনু বলেন, অন্য ছাপাখানা থেকে পত্রিকা ছাপাতে হলে যে পক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তা না করায় সংগ্রামের ছাপাখানার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে।
আমার দেশ ছাপাতে আইনগত কোনো বাধা নেই জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি বলেই আমার দেশের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়নি।”
অন্যদিকে ৫ মে গভীর রাতে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার ‘সাময়িকভাবে’ বন্ধ করে দেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করে তাদের কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপর তারা যে জবাব দিয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাদের উত্তরে প্রশাসন সন্তুষ্ট হলেই আবার সম্প্রচার শুরুর অনুমতি দেয়া হবে।
“তারা সম্প্রচারের শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এ শর্তের ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আশ্বস্ত হতে না পারছি না ততক্ষণ খুলে দিতে পারছি না।”
এ দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিষয়ে ১৫ সম্পাদকের উদ্বেগের জবাবে ইনু বলেন, “আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। সরকার সংবাদপত্র ও আদালতের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না, করার অবকাশও নাই।”
এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নীতিমালাটি জারি হওয়ার পর টেলিভিশনগুলো তার আলোকেই চলবে।
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম ছাড়ও পিআইডির কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।