সারা দুনিয়া জুড়ে এখন ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি। আমাদের দেশও কম যাচ্ছেনা। ঘর থেকে বের হলেই অথবা ছাদে উঠলেই দেখা যায় হাজার হাজার পতাকা পতপত উড়ছে। প্রজেক্টর দিয়ে কোথাও খেলা দেখানো হচ্ছে। প্রিয় দল জিতলে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে। সেদিন পত্রিকায় তো পড়লাম নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তি তার বাড়িটিকে ব্রাজিলের পতাকার রংয়ে রাঙ্গিয়েছেন। সবার কাছেই ব্যাপারটা অনেক মজার এমনকি আমার কাছেতো অবশ্যই। আমি ব্রাজিলের অন্ধভক্ত। প্রতিবারই আমাদের দেশে ব্রাজিলের পতাকা কম দেখা যায়। এবারও তাই। চারিদিকে শুধু আর্জেন্টিনা আর আর্জেন্টিনা। তাই ভাবলাম আমিও একটা পতাকা কিনব। যেই কথা সেই কাজ।
বাসার সামনেই পেয়ে গেলাম এক ফেরিওয়ালা। ৩০০ টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম ব্রাজিলের এক বিশাল পতাকা। আমিতো পতাকা কিনে খুশিতে গদগদ। এখন লাগানোর পালা। অস্থির হয়ে গিয়েছি কখন পতাকা লাগাবো। ভাবছি কোথায় লাগানো যায়? রাস্তার একটা টোকাই ছেলেকে নিয়ে আসলাম নাম জাকির। ঠিক করলাম ওকে দিয়ে বাসার গেইটের উপরে লাগাবো যাতে পুরো গেইট জুড়ে পতাকা দেখা যায়। জাকিরকে উঠিয়ে দিলাম গেইটের উপরে। উঠতে উঠতে জাকির বলল
-মামা কত লইছে এইডা?
আমি দাম বললাম।
জাকির- খেলা শেষ হইলে এইডা খুইল্লালাইবেন?
আমি- কেন?
জাকির- আমারে এইডা দেওন যাইবো?
আমি- খেলা শেষ হয়ে গেলে তুই এটা দিয়ে কি করবি?
জাকির- বেনরাইতে(মাঝরাত) অনেক শীত করে, গাও দেওনের কিসু নাই। এইডা দিলে আমি গাও দিতাম।
কিছুক্ষনের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হল। ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আমরা আসলে কি করছি? কি হবে এত কিছু করে? আমাদের দেশের হাজারো জাকির আজ খালিগায়ে হাঁটছে। জামাকাপড়তো অনেক পরের ব্যাপার ওদের তিনবেলা খাবারই জুটছেনা। শীতে, বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর এদিকে আমরা অযথাই টাকা খরচ করছি। কি দরকার এত মাতামাতি করার। ওদের জন্য কিছু করি আমরা। পতাকা লাগালেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হবেনা। অথচ পতাকা কেনার টাকা দিয়ে ওদেরকে সাহায্য করলে ওদের মুখের হাসিটা দেখা যাবে। এই একটু হাসি বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে কম কিসে?
পতাকাটা আমি খুলিনি। জাকিরকে দিয়ে লাগিয়েছি। আর আমি বাসা থেকে জাকিরের জন্য একটা কাঁথা, কিছু খাবার এনে ওকে দিলাম আর বললাম “খেলা শেষ হলে তুই এসে পতাকাটা নিয়ে যাস”। ও খুব সুন্দর একটা হাসি দিল আর সালাম দিয়ে চলে গেলো। ওর হাসিটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। অসাধারণ একটা হাসি।
আমি জানিনা জাকিরের জন্য আমি কতটুকু করতে পেরেছি। আমি একাও পারবোনা সব জাকিরের মুখে হাসি ফোটাতে। তবে আমরা সবাই পারি ওদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:২১