চারিদিকে পোড়া-আধাপোড়া বস্তুর স্তুপ আর আগুনে পোড়া দেয়ালের কালো দাগ। সেই কালো দেয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে, আগুনে পোড়া ও পানিতে ভেজা স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে। সদ্য ছিটানো ব্লিচিং পাউডারের কড়া গন্ধ এড়িয়েও নাকে আসছিলো পোড়া গন্ধ। এখনো অনেক জায়গায় পড়ে আছে পোড়া মাংস ও হাড়ের টুকরা। তার মধ্যেই আবারো জীবনের তাগিদায় মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে পুরোনো ঢাকার চাঁনখারপুলের নবাবকাটরা এলাকার নিমতলীতে।
আজ মঙ্গলবার সকালে নিমতলীতে গিয়ে এমনই অবস্থা দেখা যায়। ঘটনাস্থলের আশেপাশের কিছু দোকান গতকাল থেকে খুললেও আজই মোটামুটি প্রায় সব দোকানই খুলে যায়। কিন্তু প্রতিটি দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা। এসব দোকানীদের অনেকেই হারিয়েছেন বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তান-ভাই-বোনের মত আপনজনকে। কিন্তু সেই শোককেই শক্তিতে পরিণত করে যে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে তারও উপায় নেই। দোকানের ভিতর যা ছিলো তার সবই পুড়ে গেছে। দোকানগুলোর কোন জিনিসই আর ব্যবহারের যোগ্য নেই। প্রায় সকল ব্যবসায়ীদেরই দেখা যায় ক্ষয়তির হিসাব কসতে।
তাদেরই একজন মোহাম্মদ শহিদুল। ঘটনার দিন তিনি হারিয়েছে তার আপন ভাইকে। ঐদিনের কথা জানতে গেলে অশ্রুসজ্বল চোখে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে তিনি জানান, রাতে নয়টার দিকে তিনি তার ভাইয়ের দোকানের দুই কর্মচারীকে নিয়ে এশার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। নামাজ চলাকালীন হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখেন তার ভাইয়ের দোকানসহ আশেপাশের সবখানে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, সারা রাত আমার ভাইরে খুঁজছি, কিন্তু তারে আর পাই নাই। সকালে দোকানের পাশের ড্রেনে তার লাশ পইড়া আছিলো।
কত কি ক্ষতি হয়ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, দোকানের যা ছিলো তার সবই পুইড়া শ্যাষ। এইডার তো আর আসল হিসাব জানিনা, তবে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে অয়।
তার দোকানের দুই বাড়ি পড়েই ওয়াসিমের ভাঙ্গারীর দোকান। বিষন্ন মনে বসে থাকা ওয়াসিমের সাথে কথা বলতে গেলেই তিনি বলেন, এখন আর কথা কইয়া কি হইবো? যা ছিলো তার সবই তো আগুনে লইয়া গ্যাছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে তিনি জানান, নগদ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা, এছাড়াও প্রায় ২-৩ লাখ টাকার কাগজ ও লোহা লক্কর ছিলো দোকানে।
এসবের পাশে অনেককেই পোড়া বাড়ি থেকে কিছুটা হলেও জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আবার কেউবা পোড়া ঘরের মধ্যেই যেন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন হারানো স্বজনদের সাথে কাটনো সুখকর কোন স্মৃতি। সবকিছুর সাথে মিল ছিলো একটাই। আর তা হলো সকলের চোখের কোণে লেগে ছিলো পানি। শতচেষ্টা করেও যেন ভোলা যাচ্ছিলো না ভয়াবহ সেই স্মৃতি।
ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা নিমতলীতে (রি-পোষ্ট)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।
আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন