ছোটবেলায় যে আমি খালি রাগারাগি করতাম সেটা ঠিক না। অন্য কাজো করতাম। আমি খুব চঞ্চল ছিলাম না আবার খুব শান্ত ও না। আমার বেশীরভাগ দুষ্টামির পার্টনার ছিল আমার মামাতো ভাই।
একবার আমাদের শখ হলো চুল কাটার এখন নিজেদের চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাটা ঠিক হবে না, তাই বেছে নিলাম আমাদের ছোটো মামাতো বোনকে। ওকে বুঝালাম যে আমরা খুব সুন্দর করে ওর চুল কেটে দিব ও রাজি। ওর তখন তিন কি চার বছর, কানের লতি অনেক পাতলা। চুল কাটতে গিয়ে কানের কিনার দিয়ে গেল কেটে, ওতো সাথে সাথে কান্না। আমরা কেচি, চুল তাড়াতাড়ি লুকায় নিজেরাই মামির কাছে যেয়ে বলা শুরু করলাম যে খাটের সাথে পেরেক বের করা ছিল সেটাতে লেগে কান কেটে গেছে। সবাই আমাদের কথা বিশ্বাস করল।আমার মামাতো বোনো জানি কি মনে করে সত্যি কথাটা আর বলে নাই।
আরেকবার টিভিতে মোমবাতি বানানো দেখে আমারও শখ হলো মোমবাতি বানানোর, কিছুই না মোম গলায় সেটা অন্য ছাচে ফেলতে হবে। দুপুরে যখন আম্মু ঘুমাচ্ছে তখন আমি আর আমাদের কাজের মেয়ে মিলে চুলায় মোম গলাতে দিয়েছি, হঠাৎ চামচ দিয়ে নাড়তে গিয়ে হাড়ি উল্টায় সব মোম পড়ল চুলার উপর সাথে সাথে চুলার উপর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। আমিতো ভয়ে কি করব দিলাম পানি ঢেলে তাতে ধোয়া টোয়া হয়ে অবস্থা আরো খারাপ। ততক্ষনে আম্মু উঠে আসছে তাড়াতাড়ি আমাদের রান্না ঘর থেকে বের করে চুলা বন্ধ করে দিল। পরে আস্তে আস্তে মোম পুড়ে পুড়ে আগুন নিভে গিয়েছিল।
জীবনে আরেকটা কান্ড করেছিলাম যেটা চিন্তা করলে এখন আমার নিজেরি ভয় লাগে। নান্নুর বাসায় একটা দারোয়ান ছিল সে আমাদের বুঝিয়েছিল যে ছাদের রেলিং উপর হাটা কোন ব্যাপার না। সে নিজেও হাটত আমাদের কেউ বলত হাটতে। আমি আর আমার মামাতো ভাই যে কতবার বিকাল বেলা সেই তিন তলার ছাদের রেলিং উপর হেটেছি কিছু চিন্তা না করেই। একদিন মামা দেখে ফেলে যে আমরা রেলিং এর উপর হাটছি। আমরা খেয়াল করি নাই। ছাদে নামার সাথে সাথে মামা আমাদের নিচে নিয়ে যায়। পরে আব্বু আম্মু মিলে আমাকে বুঝায় যে ব্যাপারটা কত ভয়ংকর হতে পারে। এর পরে আর কখনো হাটি নাই।
ছোটবেলায় আমি অনেক ক্রিকেট খেলতাম।আমার একটা ব্যাট ও ছিল। খেলার সময় বল গিয়ে পড়ত পাশের বাড়িতে তখন দেয়াল টপকায় বল নিয়ে আসতে হত। ছোটবেলায় সেই দেয়ালটাকে অনেক উঁচু মনে হত। এখন যখন দেয়ালটার সামনে দাড়াই তখন দেয়ালটা অনেক ছোট মনে হয়। ফুটবলও খেলতাম তবে কম, আমি সবসময় গোলকিপার হতাম। আমি পুতুলো খেলতাম আমার বারবি পুতুলদের ঘটা করে তরমুজের কেক কমলার কেক দিয়ে জন্মদিন করতাম। রোজার ঈদের আগে যখন বন্ধ থাকতো তখন পুতুলের জামা বানাতাম। আমার এই পুতুল গুলা এখনো আছে কাউকে দেই না।
আরেকটা কাজ ছিল কুরবানি ঈদের সময় পাড়ার গরু দেখা। বিজ্ঞের মত গরু দেখতাম দাম জিজ্ঞেস করতাম তারপর নিজেরা যাচাই করতাম কার গরুটা সবচেয়ে ভাল হল। এখন ঈদে নিজেদের গরুটা দেখারই সময় পাই না।
এরকম ভাবে দিন পার করতে করতে হঠাৎ দেখি বড় হয়ে গিয়েছি। আমার ছোটবেলাটা অনেক মজায় কেটেছে, সারাক্ষন হইচই। এখনতো সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:৪২