নিয়ম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আরো কতগুলো রাত কেটে গেছে,এরপর দিন,তারপর আবার রাত,রাতের পর রাত,দিনের পর দিন। নিঝুম রাতে কোন এক অজানা পাখির ডাকে হয়তো আবারো ঘুম ভেঙ্গে গেছে ছোট্ট কোন শিশুর। তার কান্না হয়তো কেড়ে নিয়েছে তার মায়ের ঘুম। হয়তো তারাদের মেলা এখনো অনেক যুবক-যুবতীর রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। দুজন দুজনাকে জড়িয়ে সারাটি রাত হয়তো তারা এখনো জেগে থাকে চাতক পাখির মতই স্বাধীন হয়ে। ওসব দিন আমি পার করে এসেছি সেই কবে ! তারপর শুধু একে একে হারিয়ে গেছে আমার সব চেনা মুখ,আর জমাট বাধা টুকরো অভিমানগুলো। নীরবে হারিয়ে গেছে আমার মলিন হয়ে যাওয়া চাদরটাও যে ছেড়া চাদরে আমি জন্মেছিলাম একা। বসন্তভরা সোনালী বিকেলগুলোর অতীত খাতায় হালকা ধূলো জমে লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেছে। গাছের পাতার মড়মড় শব্দে কিসের যেন গুঞ্জন! কখন যে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছি টেরই পাইনি। হিসেবের খাতাটা আজ বড় বেশী নির্বাক। সিন্ধ সকালের সূ্র্যটার রক্তিম আভা যেন আমায় আরো একটিবার মনে করিয়ে দেয় যে “এরপর আমার পালা আসছে” । না, আজ আর আমার কোন ভয় নেই,নেই কোন চাপা কান্নাও। মৃত্যুকে কিসের ভয়? এর আগেও আমি বহুবার মরেছি,নিজ চোখ দিয়ে দেখেছি নিজের মৃত্যুকে। যেদিন আমার সামনে দিয়ে আমার আপনজনেরা একে একে চলে গিয়েছিল সেদিনও তো আমার মৃত্যু হয়েছিল। আমার বাবা,আমার মা, আমার ভালোবাসার মানুষটি, আমি তো কিছুই করতে পারিনি। শুধু রয়ে গিয়েছিলাম আমি একা। যেদিন আমারই পাশে থেকে একমুঠো খাদ্যের অভাবে অনাহারে মারা গিয়েছিল কিছু নিস্পাপ মুখ সেদিন তো আমারও মৃত্যু হয়েছিল তাদের সাথে। তবে আজ মৃত্যুকে কিসের ভয়?
শুকিয়ে যাওয়া পাতাগুলো পায়ের স্পর্শ রেখে দেয়, বেচে থাকা মানুষগুলোই আবার সেই স্পর্শকে মুছে দেয়। ক্ষণিকে বদলে যায় পৃথিবীটা। অতীতের খাতাটা অতীতেই পড়ে থাকে অবহেলায়। অতীতের মানুষটা অতীতেই রয়ে যায়। আজকের এই আমি দুদিন পরেই হয়তো স্মৃতির পাতায় স্থান পাবো কিন্তু সেই খাতাটা কেউই খুলে দেখবেনা। আমার স্মৃতিগুলোকে হয়তো ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে কিন্তু একসময় তা অদৃশ্য হবে ঠিকই। আমার মুখটা আস্তে আস্তে আবছা হতে থাকবে সবার চোখে এবং একসময় মিলিয়ে যাবে। ডায়েরির লেখাগুলো হলদে হতে হতে একসময় পড়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। আমার “জন রাসেল ”নামের র এর ফোটাটা মুছে যাবে। আর কোন প্রমানই থাকবেনা যে একদিন আমি ছিলাম এই পৃথিবীতে। কিন্তু আগের সেই নিয়মগুলো ঠিকই থাকবে। আবারো মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে আবার মানুষ মানুষকে খুনও করবে। নিয়মগুলো এতটুকু বদলাবে না। শুধু মানুসষগুলো বদলাবে। একজনের জায়গা নেবে অন্য আরেকজন এসে। আকাশ জুড়ে মেঘগুলো ভেসে বেড়াবে, একসময় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে কিন্তু যে মানুষগুলো বৃষ্টিতে সিক্ত হত তারা আর থাকবে না। কারণ এটাই নিয়ম।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
অপরূপের সাথে হলো দেখা
আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন