somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যারাডোনা, ম্যারাডোনা এবং ম্যারাডোনা!

০৪ ঠা জুন, ২০১০ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের জন্য ফিফার প্রথম পছন্দের দেশ ছিল লাতিন আমেরিকার কলম্বিয়া। এটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের পর পরই। কিন্তু ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর পরই কলম্বিয়া হঠাত্ জানিয়ে দেয়—অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তাদের পক্ষে বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব নয়। কলম্বিয়ার এই অপারগতায় ভাগ্য খুলে যায় মেক্সিকোর। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরল সম্মান অর্জন করে উত্তর আমেরিকার এ দেশটি।
তবে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার মাত্র নয় মাস আগে ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটির অনেক ক্ষতি হয়। এ ভূমিকম্পে মেক্সিকোয় প্রায় ২৫ হাজার লোক নিহত হন, দেড় লাখের মতো লোক হন গৃহহারা। আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের।
এরকম একটি সময়ে বিশ্বকাপের মতো একটি বিশাল আয়োজনের চাপ নেওয়ার মতো ক্ষমতা মেক্সিকোর রয়েছে কি না তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সৌভাগ্যবশত এ ভূমিকম্পে বিশ্বকাপের কোনো ভেন্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। মেক্সিকো বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, শেষ পর্যন্ত সব ধরনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনে সক্ষম হয়।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আবার ফরম্যাটে পরিবর্তন আসে। ১৯৮২ সালের মতো এবারও ২৪টি দলকে ছয়টি গ্রুপে ফেলা হয়। প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি করে দলসহ আরও চারটি সেরা তৃতীয়স্থান অধিকারী দলকে নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আটটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল।
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপকে যদি পেলের বিশ্বকাপ, ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ যদি মারিও কেম্পেসের বিশ্বকাপ অথবা ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপকে যদি পাওলো রসির বিশ্বকাপ হিসেবে অভিহিত করা হয়, তবে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ হবে অবশ্যই ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা ’৮২-এর বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে দেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী নৈপুণ্যের মাধ্যমে। একাই আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত করেন। নিজেকে নিয়ে যান ফুটবল ইতিহাসের কিংবদন্তিসম উচ্চতায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ছয় ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নয়নজোড়ানো এক গোল করেন। সেই গোলটিকে সবাই ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। একই ম্যাচে অসম্ভব ধূর্ততার সঙ্গে হাত দিয়ে করা একটি গোলকে তো ‘হ্যান্ড অব গড’ অভিধায় চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে ফুটবল ইতিহাসে।
এই বিশ্বকাপের আরও একটি ম্যাচকে ফুটবল ক্ল্যাসিকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স ও জিকো-সক্রেটিসের ব্রাজিলের মধ্যকার খেলাটি ফুটবল রোমান্টিকদের আনন্দ ও রোমাঞ্চের এক অফুরান উত্স। ১২০ মিনিটের গতিশীল আর শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর ফ্রান্স টাইব্রেকারে সে ম্যাচে ব্রাজিলকে পরাজিত করে ২-১ ব্যবধানে। নির্ধারিত সময়ে ব্রাজিলের পক্ষে পেনাল্টি মিস করেন জিকো, আর টাইব্রেকারে মিস করেন সক্রেটিস। অথচ জিকো আর সক্রেটিস ছিলেন ব্রাজিলের দুজন পেনাল্টি বিশারদ।
’৮৬-এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে সম্ভাব্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেক ফুটবল বোদ্ধাই। এর একমাত্র কারণ ছিল ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা ’৮৬-এর বিশ্বকাপে যে ধরনের খেলা খেলেছেন, তাকে অতিমানবীয় বলা যেতেই পারে। ম্যারাডোনার ফুটবল শৈলীতে রুমেনিগে, প্লাতিনি কিংবা জিকো, শিফোদের মতো খেলোয়াড়েরাও দৃষ্টির আড়ালে চলে যান। ম্যারাডোনা মাতাল করে রাখেন গোটা ফুটবল বিশ্বকে।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানির। সেই ম্যাচে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। জোসে লুইস ব্রাউন, জর্জ বুরুচাগা, জর্জ ভালদানো আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল তিনটি করেন। জার্মানির পক্ষে গোল করেন রুডি ফোলার ও কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে।
ফাইনাল খেলায় ডিয়েগো ম্যারাডোনার ক্যারিশমা ঠেকাতে জার্মান কোচ ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার লোথার ম্যাথিয়াসকে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ করেন। ম্যাথিয়াসের এই দায়িত্বের কারণে জার্মানির মাঝমাঠ একেবারেই ফাঁকা হয়ে পড়ে। এই সুযোগে আর্জেন্টিনা মাঝমাঠে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে। এর পাশাপাশি মেক্সিকোর জুন মাসের উত্তপ্ত আবহাওয়া জার্মানিকে ফাইনালে প্রথম থেকেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। ম্যারাডোনা, ম্যাথিয়াসের কড়া পাহারা সত্ত্বেও ফাইনালে নিজেকে আবার প্রমাণ করেন। আসলে মেক্সিকো বিশ্বকাপের পুরো মঞ্চটাই ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর আর্জেন্টিনা দলের।
এই বিশ্বকাপের দুটি বিস্ময়কর দল ছিল ডেনমার্ক ও বেলজিয়াম। ডেনমার্ক কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে সবাইকে চমকে দেয়। এনজো শিফোর নেতৃত্বে বেলজিয়াম চলে যায় সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে বেলজিয়াম পরাজিত হয় আর্জেন্টিনা ও ম্যারাডোনার কাছেই। এই বিশ্বকাপেই মরক্কো প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার গৌরব অর্জন করে। ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার ৬ গোল করে ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপ ছিল উপভোগ্য ও আলোচিত। ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ও ‘হ্যান্ড অব গড’—ম্যারাডোনার এ দুটি কীর্তিই ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্যই স্মরনীয় হয়ে থাকবে ছিয়াশির বিশ্বকাপ

সুত্র : প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ০৪-০৬-২০১০
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১০ দুপুর ১২:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×