somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের অগোচরে নারায়ণগঞ্জে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতঃ ভারতীয় হাই কমিশনারকে এখনই তলব করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করা হোক

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারের গোচরে ভারত যা যা করছে তাতেই এদেশের জনগণ অতিষ্ঠ, এখন আবার সরকারের অগোচরে বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে অন্ধকারে রেখে(?) ভারত কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি কিভাবে নেয় সেটাই ভেবে পাই না, ভারত কি তবে এদেশকে তার নয়া উপনিবেশ ভাবছে? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই কেন? আমাদের অনুমতি নেয় নাই বলেই ক্ষান্তি দেয়ার মানে কি? ভারতীয় হাই কমিশনারকে এখনই তলব করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করা হোক। ভারতের এই আধিপত্যবাদী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ আশা করছি সরকারের তরফ থেকেই!

আজ বনিক বার্তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় "সরকারের অগোচরে নারায়ণগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। এরই মধ্যে দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে কারিগরি ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দরপত্রও আহ্বান করেছে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ও বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন নেয়নি ভারত সরকার"Click This Link
Click This Link

বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি না নিয়ে কিংবা তাদের সাথে যোগাযোগ না রেখে বিদেশী কোন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের ৪৪ একর জমির উপর টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্র আহবান করা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই না! সমস্ত কূটনৈতিক নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ভারত এই দরপত্র আহবান করল কিভাবে? আর যদি গোপন চুক্তির ভিত্তিতে সরকারের উচ্চপদস্থ লোকজন ভারতকে এই দরপত্র আহবানে গ্রিন সিগনাল দিয়ে থাকে তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জনগণকে ধোঁকা দিয়ে অন্ধকারে রাখার শামিল যা সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা!

ভারতের প্রতি একটা স্বাধীন দেশের সরকার ও কর্মকর্তাদের এই নতজানু নীতির মানে কি? ভারত নির্বিচারে সীমান্তে পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশীদের হতাহত করে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার প্রতিবাদ করে না,

ভারত আমাদের ন্যায্য পানি সম্পদ লুণ্ঠন করে ৫৪ টি অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে, এই রাষ্ট্র তার প্রতিবাদ করতে পারে না! বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার উজানে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আয়োজন চলছে বহুদিন থেকেই। নদীর উজানে এই বাঁধ দেয়া হলে মেঘনা নদী পরিণত হবে একটি মৃত ও শুষ্ক নদীতে, ভাটি অঞ্চলের দেশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতি-জলজ সম্পদ। কিন্তু এদেশের সরকার ও শাসক শ্রেণী এর প্রতিবাদ করতে অক্ষম!

ভারতের সাথে গোপন চুক্তি করে এই রাষ্ট্র ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের ২৪৪ একর জমি উপহার দিয়ে আসে, আমরা নীরবে তা মেনে নেই!

ভারতের ৭ টি অঙ্গরাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ বিনা মাশুলে ট্রানজিট, ট্র্যান্সশিপমেন্ট দিয়ে দেয়, ভারতের ভারী যানবাহন পরিবহনের জন্য এদেশের অবকাঠামো মেরামত করে দিতে হয় আমাদের, তা বাবদ যে খরচ তার জন্য ভারতের ব্যাংক থেকেই সুদের ভিত্তিতে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিতে হয় আমাদের [১], এই ভারতীয় ভারী বাহন এর যাতায়াতের জন্য এদেশের তিতাস নদীর বুক চিরে রাস্তা প্রস্তুত করে দিতে হয় আমাদের!

আমাদের সমুদ্র বন্দর বিনা মাশুলে ভারতকে ব্যাবহার করতে দিতে হয় আমাদের! আমাদের নৌপথ দিয়ে লাইটারেজ বা উপকূলীয় জাহাজের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহন করবে ভারত। এসব জাহাজের জ্বালানিও স্থানীয় মূল্যে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ। যার অর্থ দাঁড়ায়, জ্বালানি তেলে বাংলাদেশের দেয়া ভর্তুকির সুবিধা নেবে ভারত। আর এজন্য ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশকে ভর্তুকি দিতে হবে ৯৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা [২]।

রামপালে সুন্দরবন বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির মুনাফার ওপর ভারতীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনকে (এনটিপিসি) ১০ বছরের করমুক্তি সুবিধা দিয়ে চুক্তি করল সরকার।

গোচরে অগোচরে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠী ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে যেভাবে মাথা নত করে দেশের যাবতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে তা সত্যিই হতাশাজনক। নতজানু হওয়ারও একটা সীমা আছে, আধিপত্যবাদী শক্তির সেবাদাসত্ব করারও একটা সীমা আছে , বর্তমান সরকার সেই সীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের জনগণের সর্বপ্রকার স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যেভাবে ভারতীয় স্বার্থ দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে তা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুস্পষ্ট বরখেলাপ। যে চেতনা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির অধীনস্ততা মেনে নেয়, যে চেতনা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী ভারতের নয়া-উপনিবেশবাদী শোষণ-নিপীড়নকে স্বাগত জানায়, যে চেতনা ভারতীয় পুঁজির করপোরেট আগ্রাসন এবং অবাধ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে উল্টো তার এজেন্সির দায়িত্ব পালন করে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।

[১] ভারতকে করিডোর প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থলপথ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। আর এই স্থলপথ নির্মাণের জন্য ভারতেরই কাছ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ, যা ব্যবহৃত হবে সাম্রাজ্যবাদী ভারত রাষ্ট্রের বড় পুঁজির স্বার্থের বিকাশে। এই অর্থ দিয়ে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি অঙ্গরাজ্যের যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য মহাসড়ক নির্মিত হবে। এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করবে ভারতের বড় বড় লরি-ট্রাক-ভ্যান, বহন করবে তারা ভারতীয় পণ্যদ্রব্য।

[২] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ছোট জাহাজে গড়ে দেড় হাজার টন পণ্য পরিবহন করা সম্ভব। এ হিসাবে ১ কোটি ২০ লাখ টন পণ্য পরিবহনে জাহাজগুলোর মোট ৮ হাজার ট্রিপ লাগবে। প্রতি ট্রিপে জাহাজগুলোর জ্বালানি (ডিজেল) প্রয়োজন হবে সাড়ে ৫ হাজার লিটার। ৮ হাজার ট্রিপে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ কোটি ৪০ লাখ লিটার। অর্থাৎ ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশকে ভর্তুকি দিতে হবে ৯৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কারণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেলে ২২ টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।











সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×