somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্রিম জিনোম কিভাবে তৈরি হলো?

০৩ রা জুন, ২০১০ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পোস্ট ছিল একটা ভূমিকা। আমার আগ্রহের জায়গাটা ছিলো গবেষণায়। ক্রেগ ভেন্টর আর তার দলবল কিভাবে একটা কৃত্রিম জিনোম তৈরি করলেন?

যে কোন কোষের অনেকগুলো অঙ্গানু থাকে। যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষঝিল্লী, রাইবোজোম, প্লাজমিড ইত্যাদি। কোষের পাওয়ার হাউজ হলো মাইটোকন্ড্রিয়া। কোষঝিল্লী কোষের আবরণ। রাইবোজম প্রোটিন তৈরি করে। এদের মাঝে ডিএনএ-র গঠন অনেক সরল। ফসফেট, সুগার (খাবার চিনি নয় কিন্তু) আর চারধরণের ক্ষারক (বেস) দিয়ে তৈরি ডিএনএ।


এটা ভেন্টরের বানানো কৃত্রিম জিনোম। মাঝখানে লেখা আছে কিভাবে এইটা তৈরি হলো।

একটা কাগজের পাতাতে হয়তো একটা চিঠি আমরা লিখতে পারি। পাতাটা কিন্তু চিঠি না। বর্ণমালার ৫০টি বর্ণ কে কিভাবে সাজানো আছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পাতাটা অক্ষরগুলোকে ধারণ করছে। ঠিক তেমনই সুগার আর ফসফেটের শেকল ধারণ করে ক্ষারক সংকেত, যারা ডিএনএ-র বার্তা। কোষের অন্যান্য অঙ্গাণুর তুলনায় তাই ডিএনএ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা তুলনামূলক সহজই বলা যায়। তাই বলে অবশ্য কৃত্রিম ডিএনএ-র গুরুত্ব কমে যায় না। ডিএনএ-ই তো জীবনের বার্তা!

গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করা হচ্ছিল। তবে পুরোটা না, খুব ছোট অংশ হতে একটু বড় ডিএনএ-র দিকে। বোঝাই যাচ্ছিল কোন জীবের সম্পূর্ণ জিনোম তৈরি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আবারো বলি, কোন জীবের সম্পূর্ণ ডিএনএ-র সেটকে বলে জিনোম। নিচে এই অগ্রগতির একটা চিত্র ফুটে উঠে :


কৃত্রিম ডিএনএ গবেষণা অগ্রগতি

ক্রেইগ ভেন্টর তার দলবল নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন জীবের জিনোম কৃত্রিমভাবে তৈরি করলেন, হোক না সেটা কোন ক্ষুদ্র ব্যাক্টেরিয়া।

হঠাৎ করে একেবারে কিন্তু এই জিনোমটা তৈরি করা হয় নি। প্রথমে তারা একটা জিনোমের নকশা তৈরি করেছেন। জিনব্যাঙ্ক (GenBank) বলে একটা জিনিস আছে। সেখানে আপনি বিভিন্ন জীবের জিনোমের সজ্জা (জেনেটিক সিকোয়েন্স) পাবেন। এটা হলো বিভিন্ন জীবের ডিএনএ-র ‍’ডিজিটাইজড ফর্ম’। সেখান থেকে প্রথমে বিজ্ঞানীরা মাইকোপ্লাজমা মাইকয়েড নামের এক ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমের দুইটি আলাদা সজ্জা নেন। দুইটি সজ্জার মধ্যে যেটা সবচেয়ে ভালো সেটার উপরে তারা কৃত্রিম জিনোমের নকশা তৈরি করেন। কৃত্রিম জিনোমের নকশা আসলে ঐ ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমের সজ্জাতে কিছু পরিবর্তন আনা।

বিজ্ঞানীরা ঐ নকশার চার জায়গায় ‘জলছাপ’-এর ব্যবস্থা করেন। জলছাপটা একরকমের প্রমাণ হিসেবে পরে ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও মূল জিনোম সজ্জার সাথে কৃত্রিম জিনোমের নকশার উনিশটি জায়গায় ক্ষতিবিহীন পরিবর্তন রেখে দেয়া হয়। এভাবেই তৈরি হলো কৃত্রিম জিনোমের (ডিজিটাইজড) সজ্জা নকশা। এই নকশাটা আবার বিজ্ঞানীরা জিনব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করেন।

একটা ডিএনএ কত বড় সেটা মাপা হয় ক্ষারক-জোড় (বেস-পেয়ার বা বিপি) হিসেবে। ডিএনএ-র দুইটি বিপরীত সূত্রে বিপরীত দুইটি ক্ষারক কে একত্রে বলে এক বিপি। এই তথ্যটা মনে রাখতে হবে।

বিজ্ঞানীরা চারটি বোতলে ধরণের ক্ষারক নেন (এ, টি, জি, সি)। কম্পিউটারে ডিজিটাইজড কৃত্রিম জিনোমের সজ্জা নকশা অনুযায়ী খুব ছোট ছোট, ৩ থেকে ৮টি ক্ষারকজোড়ের ডিএনএ-র খন্ড (অলিগো-নিউক্লিওটাইড) তারা তৈরি করেন। তারপর এই ছোট ছোট ডিএনএ খন্ড জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করেন তারা। এই জোড়া লাগানো হয় ই. কলি নামক ব্যাক্টেরিয়া আর স্যাকারোমাইসিস নমের ছত্রাকের মধ্যখানে। এভাবে জোড়া লাগিয়ে তারা ১ কিলো বেসপেয়ারের অনেকগুলো জিন ক্যাসেট তৈরি করেন। এই ক্যাসেটগুলো তারা আবার ছত্রাক ব্যবহার করে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করেন 10 কিলো বেসের অংশ। একই ভাবে আবার এদেরকে ছত্রাক কোষের মাঝে জোড়া লাগান। তৈরি হয় 100 কিলো বেসে অংশ। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্র্ক্ষণ! 100 কিলো বেসের অংশগুলো জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয় কৃত্রিম জিনোম।

এই কৃত্রিম জিনোমকে তারা প্রতিস্থাপন করেন কাছাকাছি প্রজাতির মাইকোব্যাকটেরিয়াম ক্যাপ্রিকোলামের গ্রাহক কোষে। এটা যেন ঠিক একটা কম্পিউটারে পুরাতন “অপারেটিং সিস্টেম”-এর জায়গায় নতুন অপারেটিং সিস্টম প্রতিস্থাপন করা (উইন্ডোজের জায়গায় লিনাক্স :-) )। দেখা গেল, নতুন কোষটা “রিবুট” করে নতুন ডিএনএ-র নির্দেশ মতো কাজ করছে!

আজ এখানে থামি। সামনে আরো একটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে রইলো।

[পোস্টটা চেক করতে হবে। কিছু তথ্য ভূল থাকতে পারে।]
পূর্বে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত

গত পোস্ট : কৃত্রিম জীবনের পথে :: ভূমিকার কথা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১০ সকাল ৮:৩৯
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×