somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকটি বৃষ্টির দিনে

০১ লা জুন, ২০১০ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টি শেষ হয়েছে সে দুপুরে। লিখতে বসলাম রাত ১১.৪৫ মিনিটে। ৩১.০৫.১০

আজ তুমুল বর্ষণ হয়েছে। দুপুররে দিকে সেরকম বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু হলো। প্রথমে তুমুল বাতাস। গাছ পালা উড়ে যাওয়ার অবস্থা। অনেক গাছের ডাল ভেঙে গেছে। এরি মধ্যে ইচ্ছা হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ছোট বেলায় অনেক ভিজেছি। স্কুল থেকে ফিরার সময় বৃষ্টি এলে কে দেখে আমায়। অন্যরা অপেক্ষা করত বৃষ্টি থামার জন্য। আর আমি দৌড় লাগাতাম। যদি বৃষ্টি থেমে যায়। এই জন্য বৃষ্টির মধ্যে ঘরে ফিরতাম। যদিও বাসায় এসে বকা খেতে হতো। যেদিন আম্মু থাকতেন সেদিন বকা কে দেখে। কি দরকার এ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আসার। মাথা মুছিয়ে দিতে তোয়ালে দিয়ে। আর কিছুক্ষণ থাকলেই তো হতো বৃষ্টি থামতো।
তাড়াতাড়ি শুকনা কাপড় এনে দিতেন। সেগুলো পড়ে ফেলতে বলতেন।

আজ যখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছিলো তখন আগের কথাগুলো মনে পড়ছে। এখন বড় হয়ে গেছি। কয়েকবার বৃষ্টি দেখে এলাম। ইচ্ছা হচ্ছিলো ভিজতে। কিন্তু সাহস হলো না। এখন ভিজতে লাগলেই বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের জানালা থেকে অনেক চোখ বড় করে করে তাকাবে। বলবে ছেলেমানুষী করছে এই বয়সে।
তা কি করা। এদিকে দেখি জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির ছিটা পড়ছে। সেখানে কেথা রাখা ছিল। সেটা কিছুটা ভিজেছে। জানালা বন্ধ করলাম। সে ভিজা ক্যাথা গায়ে জড়িয়ে শুইয়ে পড়লাম। টিনে বৃষ্টির অনবরত শব্দ। একটু পর পর মেঘের আর্তনাদ। বুক ফাটা গর্জন। মেঘ বোধ হয় আজ অনেক কষ্টে আছে। মেঘের গর্জন গুলো কে মনে হয় ক্রোধ। কি ভয়ংকর। মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। তার উপর আজ একটা দৈনিকে দেখলাম, চলতি মাসে মাত্র চারদিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। বলা হচ্ছে বজ্রপাতের তাপ ৩০ থেকে ৬০ হাজার ডিগ্রী ফরেনহাইট হয়। একটি বজ্রপাতে প্রায় ৫০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুত থাকে। বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ চলে ১৫ হাজার বায়ুতে অ্যাম্পিয়ারে। একটি বজ্র কখন কখনও ৩০ মিলিয়ন বিদ্যুৎ ভোল নিয়ে আকাশে উঠে। বায়ুতে আলোর বেগ ঘন্টায় ৩ কোটি মিটার, সেখানে শব্দের বেগ ৩৩০ মিটার।

এসব তথ্য পড়ে অনেক ভয় পেলাম। প্রতিবার বিদ্যুতের গর্জন শুনি। আর ভাবি কারো ক্ষতি হয় নাই। তো। আমাদের বাসার কাছেই রেস্ট হাউস। সেখানে একবার বজ্রপাত হয়েছিল। ভাগ্যিস তা কোন মানুষের উপর পড়ে নাই। একটা গাছের উপর পড়েছিল। সে বড় গাছটা দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। আর যেখানে স্পর্ষ লেগেছে সেখানে কটকটে কালো হয়ে গেছে।

তা বৃষ্টির পানিতে আধা ভেজা ক্যাথাটি গায়ে জড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজার আমেজ খুঁজছি। আর মাথার মধ্যে বৃষ্টি নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা হচ্ছে। এই তীব্র বৃষ্টিতে কিছু লিখতে মন আনচান করে। কিন্তু নিরুপায়। বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে বিদ্যুত চলে গেছে। কী বোর্ডে লেখা শুরুর পর থেকে এখন আর কাগজ কলমে লিখতে ইচ্ছা করে না। বাজে অভ্যাস হয়েছে একটা। সেজন্য বিদ্যুত না থাকলে লেখালেখিও বন্ধ থাকে। শুয়ে শুয়ে কল্পনা করছি সুন্দর কিছু। কল্পনা করতে ভাল লাগে। আর বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করছি। বৃষ্টি অনেক জোরে হচ্ছে। যেজন্য ছন্দটাও অনেক বেশি দ্রুত।

এসময় কল এলো। দেখি আহাদ ফোন করেছে। একসাথে পড়ি। ঘনিষ্ঠ বন্ধু। চট্টগ্রামে থাকলে খুব ভাল সময় কাটে ওর সাথে।

জানলাম চিটাগাংয়েও খুব বৃষ্টি হচ্ছে। এত বৃষ্টি যে তাকে তৎক্ষণাৎ ছাতা কিনতে হয়েছে। সে মেডিকেলে গেছে। ওর এক খালু সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন আজ। তার সাথে দেখা করে কম্পিউটার কোর্স ক্লাসে যাচ্ছে।

একটা কাজের কথা বললাম। ও বলল দেখি। আমি বললাম, তোর মন তো অনেক ভাল। বৃষ্টির পানির মত পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। আমি জানি তুই করবিই।

ও বলল পাম্প দেছ না?

আমি বললাম পাম না। আরে আশ্চর্য নতুন একটা উপামা বের হয়ে গেছে তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে। আমি আবিষ্কারের খুশীতে আত্মহারা। বিকট শব্দে হাসতে লাগলাম। বৃষ্টির আওয়াজও বোধ হয় আমার হাসিতে চাপা পড়ে। অনেক হাসছি। দোস্ত আমি তো বিশাল একটা উপামা পাইয়া গেছি। তোর সাথে কথা বলা সার্থক।

আহাদও হাসে। অনেক সরল ছেলে। ওর সমস্যা একটাই কথা পেটে রাখতে পারে না। বলে দেওয়া চাই। এরকম কথা বলতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছে। তবে ব্রাজিলের ভক্ত। এবার যখন চিটাগাং গিয়েছিলাম রিকসা করে ঘুরছি। আর পতাকার দিকে তাকাচ্ছি। দালানে রাস্তায় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা। ও একটা ব্রাজিল দেখালে আমি দুইটা আর্জেন্টিনা দেখায়। আমার ভাগ্য ভাল আর্জেন্টিনার পতাকা বেশি। তখন ও না পেরে বলল, দেখ ব্রাজিলের পতাকা বাতাসে কি সুন্দর উড়ছে, পাশে তোদের টা ঝিমায় রয়ছে। আসলে আর্জেন্টিনার পতাকাটা ঠিকমত লাগাতে না পারায় উড়ছিলো না। ইচ্ছা হচ্ছিলো রিকসা থামিয়ে ঐ ছাদের উপর উঠে এখনই পতাকা উড়িয়ে দিই ভালমত।

তা আহাদ বলল, কখন আসছিস।
আমি বললাম এই তো আসছি। ও দোস্ত একটা ভুল করছি।
কি ভুল।
তোকে না বলছি বৃষ্টির পানির মত তোর মন সাদা। আসলে সেটা সংশোধন হবে। বৃষ্টির পানির মত পুরা সাদা না। তবে হালকা সাদা।
আহাদ তা শুনে হাসতে থাকে। বলে, তুই তো এরকমই। আকাশে উঠায় আবার নামায় দেস।
কথা চলছিল অনেক ক্ষণ ধরে। ইয়ে তিয়ে নিয়ে কথা। তা হঠাৎ হেসে উঠল আহাদ।
কি হলো।
আরে আমি ছাদে উঠে গেছি তোর সাথে কথা বলতে বলতে। খেয়াল নাই। আমাদের ক্লাস তিন তলায়। অথচ ছাদে চলে আসছি। বৃষ্টির ফোটা পড়া দেখে টের পেলাম ছাদে চলে আসছি।
হাসলাম অনেক। ভাল লাগল।

অনেক ক্ষণ তীব্র বৃষ্টি বর্ষণের পর একটু কমল। হয়ত বৃষ্টি ক্লান্ত অবিরত ঝরায়। বাহির হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। যদিও বজ্রপাত সম্পর্কে পড়ে একটু একটু ভয় করছিল। তারপরও বের হলাম ছাতা নিয়ে। একটা চিঠি পাঠাতে হবে। পোস্ট অফিসে গিয়ে সেটা দিয়ে আসলাম। এরপর রওয়ানা দিলাম পাবলিক লাইব্রেরী। সে তৃতীয় শ্রেণী থেকে যে যাওয়া শুরু অনেক কিছু বদলিয়েছে এই অভ্যাস বদলায় নি।

প্রতিটা জাতীয় দৈনিকে চোখ বুলানো শুরু করলাম। একটু কষ্ট হচ্ছিলো। আকাশ ছেয়ে আছে মেঘে। বিদ্যুত না থাকায় অন্ধকার। ছাতা রাখার সময় একটা কথা মনে পড়ে গেল। স্কুলে যখন পড়ি তখন ছাতা রেখে গল্পের বই পড়া শুরু করি। পরে বের হতে যাই তখন দেখি আমার ছাতা আর নেই। কোন ভদ্র লোক নিজের মনে করে নিয়ে গেছেন।
রাখার সময় সে কথা মনে পড়ায় একটু সতর্কতায় রাখলাম। যাতে কোন ভদ্রলোকের সহজে চোখ না পড়ে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×