somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকে খুব মনে পড়ে রেজা ঘটক

৩১ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাকে খুব মনে পড়ে রেজা ঘটক

গত বছর ২৭ জানুয়ারি আমার মা মারা গেল। পৃথিবীতে কারো যদি মা মারা যায় আমার ধারণা ওই দুঃসংবাদটি প্রত্যেক মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন দুঃসংবাদ। পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় আর কোনো দুঃসংবাদ আছে বলে আমার জানা নেই। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর যখন আমার বাবা মারা যায় তখন আমরা ভাইবোনেরা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই শোককে ধীরে ধীরে কাটানোর চেস্টা করেছি। আমাদের পরিবারটি ছিল পিতৃতান্ত্রিক। বাবাই পরিবারের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতেন। একজন বাঙালি মা বলতে এককথায় যা বুঝায় আমার মা ছিল ঠিক তেমনি সহজ সরল একজন বাঙালি মা। বাবা যা বলতেন মা মুখ বুজে সব মেনে নিতেন। কারণ আমার মা’র ধারণা ছিল বাবা পরিবারের জন্য সব সময় সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিতে জানেন। আমার মা’র যখন বিয়ে হয় তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। আর বাবার ১৬ বছর। আমার চেয়ে মা ৩৩ বছর আর বাবা ৪০ বছরের বড়। আমার দাদী তার বড় পুত্রের এই ছোট্ট বউটিকে নিজের মতো করে সংসারের সবকিছুতে প্রশিক্ষণ দিলেন। সংসারের যাবতীয় কাজে মায়ের হাতেখড়ি আমার দাদীর কাছে। মা তার ছোট্টবেলার সেইসব গল্প বলার সময় দাদীকে খুব শ্রদ্ধা দেখাতেন। কারণ, মা যেসব কাজ পারেন তার সবকিছুইরই গুরু যে আমার দাদী।
এমনিতে আমাদের বিশাল পরিবার। আমার দাদুভাইর ছিল দুই দুটো সুন্দরী বউ। আর চার ছেলে আট মেয়ে। আমার বাবা সবার বড়। দাদুর বড় বউ মানে আমার আসল দাদী আর ছোট বউ মানে আমার স্টেপ-দাদী। আমরা ডাকতাম বড়বু আর ছোটবু। আমরা ভাইবোনেরা অবশ্য বড়বুকে দেখিনি। কিন্তু তার অনেক গল্প শুনেছি কাকাদের কাছে, ফুফুদের কাছে, মা’র কাছে, বাবার কাছে। এমনকি দাদুর কাছেও বড়বু’র অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু তা এখন আর মনে নেই। কারণ, আমার বয়স যখন ৬ বছর তখন আমার দাদু মারা যায়। আমরা নয় ভাইবোন। পাঁচ ভাই চার বোন। আমার দাদুর আবার চার ছেলে আট মেয়ে। দাদুর দুই বউই ছিল ফর্সা আর সুন্দরী। আমার বাবা, কাকা, ফুফুরা সবাই ফর্সা। আমাদের নয় ভাইবোনদের মধ্যে শুধু আমার গায়ের রং কালো। এছাড়া আমার চেহারা, গায়ের রং আর বদ মেজাজ তিনটাই নাকি হুবহু আমার দাদুভাইয়ের মতো। তাই আমার ফুফুরা ছোট্টবেলা থেকেই আমাকে বাবা ডাকে। ফুফাদের আমরা জামাই ডাকি। জামাইরা আবার আমাকে ডাকে শ্বশুর।
১৯৭৬ সালের ১৫ জুলাই শুক্রবার আমার দাদু মারা যায়। দাদু মারা যাবার ঘটনাটা এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে। কারণ, ওই রাতে আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরিবারের অন্য কেউ ছাড়া ওটাই ছিল আমার একাকী অন্য কোন বাড়িতে রাতে থাকার প্রথম ঘটনা। বড় খালার বাড়িতে গেছি বেড়াতে। আমার বড় খালার বাড়ি আর চতুর্থ ফুফুর বাড়ি একই বাড়ি। আমার দুই খালাতো ভাই আর দুই ফুফাতো ভাই আবার আমার বয়সি। তাই ওই বয়সে বলেশ্বরের ওপারে শিকদার বাড়ি বেড়াতে গেলে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম। একসাথে আমরা অনেক খেলাধুলা করতে পারতাম। মামা বাড়িতে গিয়েও আমি ছোটবেলায় অতো আনন্দ পেতাম না যেটা পেতাম শিকদার বাড়ি গেলে। বড় খালাদের রান্নাঘর আর ফুফুদের রান্নাঘর একেবারে গায়েগায়ে ঘেঁষা। আমরা কখন যে কোন ঘরে খাচ্ছি সেই হিসাবই মনে থাকতো না। খুব মজা করতাম বেড়াতে গিয়ে।
শুক্রবার আর সোমবার তারাবুনিয়ার হাট। হাটের দিন সাধারণত কোন মেহমান বাড়ি থেকে যায় না। আমাদের ওদিকে এমনটিই চল। কারণ, হাটের দিন ভালো বাজার হবে, খাওয়া দাওয়া একটু ভালো হবে। পরের দিন মেহমানদের যাবার নিয়ম। শুক্রবার খুব সকাল বেলা। আমার মেঝোভাই খালাবাড়িতে হাজির। বড়খালুকে রান্নাঘরে ডেকে নিয়ে কিছু একটা কানাঘুশা করলেন। কিন্তু সেই কানাকানি অল্প সময়ের মধ্যে বড়খালা, খালাতো ভাইবোন হয়ে মুহূর্তে কীভাবে যেনো ফুফুর কানে গিয়ে পৌঁছালো। তারপর ফুফুর সেই যে উথালি পাথালি আজও আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ফুফু আমার দাদু মারা যবার পর কীভাবে কেঁদেছিল। দাদুর মৃত্যু ছিল আমার জীবনে প্রথম শোনা কোনো বড় দুঃসংবাদ। তখন আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে দাদু আর কোনো দিনও আমাকে আর তার সুঠাম ঘাড়ে বসিয়ে বাজারে নিয়ে যাবেন না। কোনো দিন আর জিজ্ঞাসা করবে না সদ্য গাভীর ওলান থেকে নামানো কাঁচা দুধ খাবো কীনা? কোনো দিন আর কেউ ডেকে বলবে না বিচি কলা খাবি কীনা? কিংম্বা কেউ আর কোনো দিন আদরের সুরে কাছে ডেকে বলবে না- কোনো কাজই তো পারিস না, নে আমার আঙুল গুলো মটকে দে? পরের বছর থেকে আমাদের বাড়িতে একটা নিয়ম চালু হল- ঠিক ১৫ জুলাই দাদু আর দাদীর মৃত্যুবার্ষিকী একসাথে পালন করা। ওই দিন আমার আট ফুফুর মধ্যে জীবিত ছয় ফুফু-জামাই আর তাদের ছেলেমেয়েরা এবং আমার তিন চাচা-চাচী আর তাদের ছেলেমেয়েরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। আমাদের অন্যান্য অনেক আত্মীয়ও সেদিন আসতো। গ্রামের অনেক গন্যমান্য লোকজনও আসতেন। কুরআন খতম মিলাদ আর ভালো খাওয়া-দাওয়া হতো সেদিন। আমরা ছোটরা আবার পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতাম। কারণ, ওইদিন আমাদের সারা বাড়িতে বিশেষ করে আমাদের ছোটদের জন্য একটা উৎসব উৎসব ব্যাপার ছিল। সেই উৎসবের মধ্যেও দেখতাম ফুফুরা কান্নাকাটি করছেন। কারণটা বড় হতে হতে কীভাবে যেনো বুঝে গেছি।
২০০০ সালে আমাদের বংশের মৃত্যু রহস্য নিয়ে আমি একা একা একটা গবেষণা করেছিলাম। সেই গবেষণা থেকে আমি একটা জিনিস আবিস্কার করলাম। প্রতি ১০ বছর অন্তর আমাদের পরিবারে একজন করে মানুষ মারা যায়। যেমন ১৯৫৬ সালে মারা যায় আমার বড়বু। মানে আমার দাদী। ১৯৬৬ সালে মারা যায় দাদুর বোন মানে আমার বাবার বড় ফুফু, আমাদের ধলাবু। দাদুভাইর এই বোনটি ছিল ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা। ঠিক আমার বাবার সমান লম্বা। গায়ের রং ছিল ব্রিটিশদের মতো একেবারে শাদা। তাই আমরা ডাকতাম ধলাবু। মা’র কাছে ধলাবুর অনেক গল্প শুনেছি। আমার দাদুভাই ছিল সাড়ে ছয় ফুট লম্বা কালো তাগড়া জোয়ান। দাদুভাইর বাবা ছিলেন সাত ফুট। ধলাবু মারা যাবার ঠিক দশ বছর পর ১৯৭৬ সালের ১৫ জুলাই মারা যায় আমার দাদুভাই। আবার ১৯৮৬ সালের ৫ মার্চ মারা যায় আমার সেজো কাকা। পরের দিন আমার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মারা যায় আমার বাবা। ২০০০ সালে করা আমি সেই গবেষণার শেষে প্রশ্ন রেখেছিলাম ২০০৬ সালে কে? ২০০৬ সালের এই কে হতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর আমার মাথায় নানান দুঃচিন্তা কাজ করেছে। ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর মারা যায় আমার ছোটবু মানে আমার ছোট দাদী। এরপর আমি আবার ২০১৬ সালের জন্য ভীতরে ভীতরে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক তখন ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার যখন আমার মা মারা যায়। তখন মৃত্যু সম্পর্কিত আমার গবেষণাটি কীভাবে যেনো মাটি হয়ে গেল। এখন আর আমার ওই বিদঘুটে গবেষণাটির ফলাফল মাথার মধ্যে উল্টাপাল্টা রিপোর্ট করে না। এখন আমার কাছে মৃত্যু মানে একটা অনিশ্চিত ব্যাপার বলে মনে হয়। যেখানে এক সেকেন্ডেরও নেই কোনো ভরসা। যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ মারা যেতে পারে। আর মৃত্যু একটি অনিবার্য কারণ। জন্মগ্রহণ করা যে কোনো প্রাণীর বেলায় তা সত্য। আর তা প্রাণী মাত্রই বরণ করতে হবে। আমার ধারণা মৃত্যু হল জীবদ্দশায় কোনো প্রাণীর জীবনে সর্বাপেক্ষা চরম বা পরম সুখ। যা প্রাণী মাত্রই একবার মাত্র উপভোগ করার সুযোগ পায়। এরপর তার আর পুনরায় জীবদ্দশার কোনো ভূমিকা পালনে ফিরে আসার সুযোগ নেই। অর্থাৎ জীবদ্দশায় প্রাণী মাত্রই একবার মাত্র ওই চরম বা পরম সুখ ভোগ করার সুযোগ পায়। আর তা ভোগ করার পর তার শারীরিক কাজকর্ম থেমে যায়। আর ধীরে ধীরে সে পৃথিবীতে পুরাতন হতে থাকে।
জন্ম আর মৃত্যু দুটোই বড় বিচিত্র বিষয়। একটায় অস্তিত্ব প্রমাণের বিষয়। আর আরেকটায় অস্তিত্ব বিলীন ঘোষণা করে। কোত্থেকে সে এলো কোথায় আবার সে চলে যাচ্ছে আমরা কেউ এই রহস্যের মর্ম জানি কী? আমরা কেউ জানি না মৃত্যুর পরে মানুষ বা অন্য প্রাণীর মনটা কোথায় যায়? মন ভ্রমরটা কী তখন মহাশূন্যের গহীন শূন্যতার মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়? যে স্বাধীনতার জন্য আসলে তার জন্ম আর পরবর্তীতে চরম বা পরম সুখ ভোগ বা মৃত্যুর মাধ্যমে তার সমাপ্তি। জন্মের চেয়ে মৃত্যু রহস্য অনেকটা বেশি জটিল। কারণ, আজ পর্যন্ত মৃত কোনো প্রাণী পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে এসে আমাদের কোনো তথ্য প্রদান করেনি। করলে বিষয়টার রহস্য হয়তো কিছুটা হলেও উদ্ঘাটন করা যেতো। আমরা আসলে মরার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করি আর আমরা এই কাজটা খুব সঠিকভাবে করি। এই কাজটায় আজ পর্যন্ত কোনো প্রাণী ভুল করেনি। আমরা যারা এখনো জীবিত আছি আমরাও হয়তো এই বিষয়ে কোনো ভুল করব না। অর্থাৎ আমাদের জন্যও নিশ্চিত মৃত্যু তা সে যতোই কঠিন হোক অপেক্ষা করছে। আর আমরা সেই চরম বা পরম সুখ উপভোগ করার জন্য আমাদের বয়স কেবল বাড়িয়ে চলছি।
গত ১৪ মে ২০১০ আমার বন্ধু আলফ্রেড খোকনের মা চলে গেলেন। কোথায় গেলেন তিনি? আমাদের এভাবে নিসঙ্গ করে রেখে কোথায় গেলেন তিনি? তাঁর কী ওই দিন চলে যাবার কথা ছিল? মহাশূন্যের এতোবড় অজানা অচেনা জায়গার মধ্যে কোথায় গেলেন তিনি? পৃথিবীতে চরম বা পরম সুখ উপভোগ করার জন্য তিনি কী ওই ১৪ মে ২০১০ কে পছন্দ করলেন? কেনো করলেন? আমরা কেউ কী সেই রহস্য জানি? ছেলেমেয়ে সংসার ফেলে কোথায় নিরুদ্দেশ হলেন তিনি? একজন মা এভাবে কেনো নিরুদ্দেশ হন? আমার মা কেনো গত বছর নিরুদ্দেশ হল? খোকনের মা কেনো সেদিন ওভাবে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হলেন? নিরুদ্দেশ হয়ে এঁরা সবাই কোথায় যায়? কেনো যায়? কীসের সন্ধানে যায়? আমরা কেউ কী সেই প্রশ্নের জবাব জানি? নাকি জানার জন্য আমরাও একদিন নিজের নিজের পছন্দের দিনে ওই একই নিরুদ্দেশ পথে রওনা হব? কেনো আমরাও তাই করব? আমরা কেউ জানি না? বরিশাল থেকে ফিরে খোকন আমাকে ফোন করল। কারণ, খোকন ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছে এই দুঃসংবাদটি আমি শুনিনি। শুনলে আমি খবর নিতাম। অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক একটা ফোন মনে করে আমি খোকনের ফোন রিসিপ করি। আমি কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই খোকন শুধু আস্তে করে বলল- মা তো চলে গেল রে!!! মা চলে গেল!!! কোথায় গেল মা??? কেনো গেল? আমি খোকনের এই কথার কী জবাব দেব? আমি সেদিন খোকনের সাথে আর স্বাভাবিক কথাও বলতে পারিনি। কেনো পারিনি জানি না! ঠিক গত বছর এমনিভাবে আমার মা যখন ২৭ জানুয়ারি নিরুদ্দেশ হল। আমি তখনও কিছু বলতে পারিনি। ঢাকায় ফিরে বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বই মেলায় খোকন যখন আমার ঘাড়ে শক্ত করে হাত রেখে আমাকে শান্তনা দেবার চেস্টা করেছিল, আমি তখনো কিছু বলতে পারিনি। কারণ, মা চলে গেলে সেই দুঃসংবাদিটি পৃথিবীতে সবচেয়ে কস্টের। হয়তো আমরা এই অভিজ্ঞতা নিচ্ছি কারণ একদিন আমরাও নিরুদ্দেশ হব। তখন আর এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না। আমরা স্বাধীন হয়ে যাবো। আমরা তখন ইচ্ছে মতো মহাশূন্যের গোটা রহস্য নিয়ে বিচরণ করতে পারবো।
মায়ের মৃত্যু যে কতো বড় দুঃসংবাদ এটি যার অভিজ্ঞতা নেই তাকে বোঝানো যাবে না। আর এটা বোঝানোর বিষয়ও নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে আপন মানুষটি চলে গেলে একজন মানুষের কেমন লাগতে পারে তা হয়তো এখন আমি বা খোকন অনুভব করতে পারি। আর আমরা শুধু নিজেদের মনকে শক্ত করার জন্য প্রলাপ করতে পারি অথবা আমরা চুপচাপ কিছু না বলে বসে থাকতে পারি। খোকন তোকে শান্তনা দেবার শক্তি আমার নেই। তুই শুধু মনে কর গত বছর তুই যেভাবে আমাকে মন শক্ত করার জন্য বলেছিলি, আমার কিছু বলার যদি থাকে হয়তো তোর কথাকেই নিজের মুখে আবার বলব তোকে। এর বেশি কিছু নয়। আমি এখন মাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার কথা ভাবি। হয়তো এমন ভাবনা তোর মাথায়ও উঁকি দেবে। যদি এমন কোনো উঁকি থেকেও আরেকবার মাকে দেখা যায় ক্ষতি কী?
মা। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট শব্দ। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত শব্দ মা। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ মা। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের শব্দটি মা। শব্দ নিয়ে পৃথিবীর নানা ধরণের জরীপের ফলাফল বলছেÑ মা শব্দটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ। মা শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে আপন শব্দ। প্রাণী মাত্রই মা শব্দটি তার কাছে সবচেয়ে আপন। প্রাণী মাত্রই মা শব্দটি সবচেয়ে প্রিয়। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় শব্দটিও মা। কেনো মা এতো প্রিয় তার কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। পৃথিবীতে শব্দ নিয়ে গবেষণার ফলাফল দাবী করে যে, মা শব্দটির পরে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত শব্দটি নাকি গড, খোদা, আল্লাহ, ঈশ্বর, বা ভগবান। অর্থাৎ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বেশিবার উচ্চারিত শব্দটি হল মা। পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হল মা। সেই মাকে যে হারায় তার যে কতো কষ্ট তা পৃথিবীর তাবৎ ভাষার সকল শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করলেও সেই কষ্টকে হয়তো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সেই অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তারাই শুধু তা বুঝতে পারে। বাকীরা হয়তো সহানুভূতি সহমর্মিতা ইত্যাদি দেখাতে পারে। কিন্তু মনের ভিতরের কষ্টটাকে আসলে কোনো সুনির্দিষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
খোকন তুই মাকে নিয়ে কিছু একটা কর। তাহলে হয়তো কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। আমি মাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখব। তুই তো এখন ছবিও আঁকিস। মা’য়ের ছবিটা খুব মন দিয়ে আঁক। মাকে নিয়ে পৃথিবীর সেরা কবিতাটা লেখ। মাকে নিয়ে পৃথিবীর সেরা লেখাটা লেখ। মাকে নিয়ে পৃথিবীর সেরা গানটা লেখ। মাকে নিয়ে পৃথিবীর সেরা কাজটা শুরু কর। তাহলে হয়তো কিছুটা হলে মানসিকভাবে রিলিফ পাবি। আমার তোকে শান্তনা দেবার মতো কোনো সাহস বা শক্তি নেইরে বন্ধু। যখন মা চলে যায় তখন তাকে আর কোনোভাবে প্রকাশ করলেও সেই শক্তিটা আর আমি পাই না। পৃথিবীর সবকিছু যার কাছে প্রকাশ করা যেতো, পৃথিবীর সব আবদার যার কাছে দাবী করা যেতো, সেই মা যখন চলে যায় তখন পৃথিবীতে সবকিছু কেমন শূন্য শূন্য লাগে। বিশাল এক শূন্যতা যেনো পেয়ে বসে। খোকন, এই শূন্যতা কাটানোর কোনো উপায় আমার জানা নেইরে বন্ধু। আমিও গত এক বছর ধরে এই শূন্যতা কাটানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। আমার ধারণা তুই মাকে নিয়ে যা কিছু করবি সেটাই সেরা হবে। মা, তুমি কেমন আছো মাগো। কেনো তুমি এভাবে চলে যাও, মা। তোমাকে দেখতে না পেয়ে যে আমার পৃথিবী অচল হয়ে যায়। সবকিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেমন একা একা লাগে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষটি মনে হয় নিজেকে। কেনো এমন মনে হয় আমি জানি নারে বন্ধু। খোকন, তুই কী জানিস?


রেজা ঘটক ২৬ মে ২০১০ গাবতলা মগবাজার ঢাকা
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×