somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন বিজয় দেখছি আমি?

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা যখন বাজারে কিংবা স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাতাম তখন অন্য ধরনের একটা অনুভুতি ভিতরে কাজ করত। ভাষা আন্দোলন কি তা জানলেও, তখন বুঝতাম না। সাররাত ভরে শহীদ মিনার তৈরি করা, আবার সকালবেলা ফুল শহীদ বেদিতে দেয়া; সে অন্য এক অনুভূতি। শহীদ মিনারের বেদি তৈরি হত ইট কিংবা বাঁশের চেরা দিয়ে। কলাগাছ মাথায় একটু কেটে মাথা নত করে দেয় হত।

শহীদ বেদিতে ফুল দিতে হবে, তাই তিন চারদিন ‍আগ থেকে প্রস্তুতি নিতাম ফূল যোগার করতে। দুই চার এলাকায় ঘুরে দেখতাম কার বাড়িতে ভাল গাদা ফূল হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারীর দু এক দিন আগে গভীর রাতে সেগুলো চুরি করতাম। চুরি করে রাতে সেই ফুল টিনের চালায় রেখে দিতাম, যাতে ফুল নষ্ট না হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে কিংবা বাজারে চলে যেতাম শহীদ বেদিতে ফুল দেবার জন্য। আগের দিন রাত থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ফেব্রুয়ারীর গান ভেসে আসত। কি ভাল লাগত তা এখন অনুভব করলে সত্যিই ভাল লাগে। সকাল বেলা বাবা কিংবা শিক্ষকের সাথে শহীদ বেদিতে ফুল দিতাম। তখন মনে হত শহীদের ওই বেদিতে কিছু পবিত্র মানুষের আত্মা আছে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিচ্ছি। যখন শহীদ বেদির খুব কাছে যেতাম, ফূল দিতাম তখন, মনে হত আরেকটু সময় থকতে পারলে বোধয় আরো ভাল লাগত। পিছনে দীর্ঘ লাইন। তাই বেশিক্ষণ থাকতে পারতাম না। সেই যে ভাল লাগা, এখনও মাঝে মাঝে টের পাই।

কিন্তু এখনকার ভাললাগাটাকে কেন জানি উপভোগ করতে পারি না। একুশের রাতে যখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই তখন সেইরকম অনুভুতি আর মনে আসে না। মনে ভেসে আসে কেবল; আমরা যেন শহীদের অসম্মান করছি। আমার ভায়েরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সেই বাসনা আজ পদদলিত। যখন ফুল দিতে যাই তখন চোখের সামনে যখন দেখি দেশকে যারা সবচাইতে বেশি অসম্মান করছে তারাই সামনের সারিতে দাড়িয়ে ফুল দিচ্ছে। যখন দেখি জুতা পায়ে কিংবা ক্ষমাতার চক্রা হাতে পেয়ে শহীদদের স্বপ্নের দেশটাকে বেচেঁ খাচ্ছে, তারা শহীদ বেদিতে ফুল দিচ্ছে তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। ধীক্কার দেই মানে মনে নিজে নিজে।

শহীদের প্রতি সম্মান জানাতে লাখো জনাতরা ঢল নামে শহীদ মিনারে। এই লাখো মানুষ দেখে আমি খুশি হতে পারি না। হয়ত অনেকেই অবাক হবেন। এত মানুষ শহীদদের সম্মান জানাচ্ছে সবার খুশিই তো হবার কথা। আমি তা পারি না, কারণ যারা শহীদ বেদিতে ফুল দিতে আসে তাদের অধিকাংশই কোন না কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আনেন। রাজনৈতিক ব্যানারে হাজারো মানুষ আসে, উদ্দেশ্য থাকে কে কার থেকে বেশি মানুষ দেখাতে পারে। আবার কার আগে কে যাবে তা নিয়ে মারামারি হয়। কারও প্রটোকল না মানা হলে দেশজুরে ঝড় ওঠে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে ঠিক রাত ১২ টা ০১ মিনিটেই বেদিতে ফুল দিতে হবে। তা না হলে তাদের শহীদের ভাল সম্মান দেখানো হবে না। আবার তার পর বিরোধী দলকে সমান সুযোগ না দিলে পার্লামেন্টে, রাজপথে মিছিল মিটিং শুরু হয়। ভাবতে অবাক লাগে এইসব মানুষরাই দেশ পরিচালনা করেন! তারা একবারও কিভাবেন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা আন্দোলনে রাজপত রঞ্জিত হয়েছিল?

মাঝে মাঝে ভাবি, যত কম জানা যায় ততই ভাল। যত জানছি ততই নিজের মধ্যে দন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। জানিছি এক, বাস্তবে দেখছি এক। সংবিধানে লেখা দিখি এক আর বাস্তবে তার প্রয়োগ দিখি আরেক। যখন দেখি শহীদের নিয়ে অনুষ্ঠান বানিয়ে ব্যবসার পসরা সাজানো হয় তখন সত্যিই খারপ লাগে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্হান থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮



শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে ৩য় দিন ( ১/১২/১৯৭২) দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা তাজউদ্দিন সাহেব থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন; ৯ মাস জেলের পর, উনার দরকার ছিলো কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারিয়ার কথন: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং সর্তকতা।

লিখেছেন জাদিদ, ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৪

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, পেশা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×