somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেকল বেজে উঠার আগে-পরে.......অপূর্ব সাহা

২৮ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন নাক্ষত্রিক গোলযোগের কারণে তিনি এই পৃথিবীতে- এই আনত ভূমিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন তা তিনি জানেন না; তিনি জানেন না কী তাঁর আবির্ভাব-হেতু; জল-স্থল-অন্তরীক্ষ কোন পথ ধরে এসে একটা চূড়ান্ত বিকশিত শরীর নিয়ে এই জোসনা-প্রান্তরে দাঁড়িয়েছেন তা তার অজানা; তার অজানা কেন দেহখোলের মধ্যে একটা অগ্নিপেণ্ডুলাম সমতালে দোদুল্যমান: আর তিনি তাঁর অস্তিত্বশীলতার সমস্ত নির্জ্ঞান নিয়ে প্রথম চোখ তুলে তাকালেন আকাশের দিকে; আর তাকাতেই আকাশের ঈশান কোণ থেকে একটা নক্ষত্রকে ঝুপ করে পড়ে যেতে দেখলেন; এই পতন দৃশ্য দর্শনে তাঁর দেহখোলের মধ্যে কিছুটা জল অধঃগামী হল, আর তিনি ভালোবেসে এই অধঃগামীতার নাম দিলেন দুঃখ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি টের পেলেন দুঃখ নামের ব্যাপরটা বেগানা জলস্রোতের মত ঘূর্ণীপাক খেতে খেতে তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং এক পর্যায়ে তিনি দুঃখকে আলাদা অস্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন; আর শুধু স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না এবং অতঃপর তিনি দুঃখ-সত্তা থেকে নিজেকে পৃথক করে নিলেন।
এখন পৃথক্কৃত দুই সত্তা মুখোমুখি।
তিনি এবং দঃখ।
মহাবিশ্বের সর্বস্রেষ্ঠ ময়াবী জোসনা এখন আনত ভূমিতে নিপতিত; আর মায়াবী জোসনার খোয়াবী রঙে দুঃখকে অসম্ভব রমণীয় লাগল তাঁর কাছে। তিনি ছিলেন নির্বস্ত্র; গর্জন তেল লাগানো মূর্তির মত চকচকে শরীর থেকে পিছলে পিছলে নামছিল জোসনা-ধারা; আর বুকের পেশিগুচ্ছো কাঁপছিল থির থির করে; তিনি বুঝতে পারলেন অগ্নিপেণ্ডুলামের তাল কেটে গেছে- ওটা এখন উতাল-বেতাল দুলছে আর নাভিমূল থেকে ধীরে ধীরে উত্থিত হচ্ছে একটা ইলাস্ট্রেটেড পুথিবী; তাড়নাজনিত ক্ষীপ্রতা থেকে তিনি বুঝে ফেললেন কী তার করণীয়...তৎক্ষণাৎ তিনি নগ্না দুঃখকে পতঙ্গের মত টেনে আনলেন আপন অগ্নির কাছে আর তার সুদীর্ঘ দণ্ডবত পৃথিবীকে প্রবেশ করিয়ে দিলেন দুঃখের মহাকালের মত বিশাল অন্ধকারময় অগ্নিগর্ভ সূড়ঙ্গে।
এখন তাঁর দেহখোলের মধ্যে রাশি রাশি জলপিণ্ড ঊর্ধ্বগামী; দারুণ কষ্টে তিনি এই উর্ধ্বগামীতার নাম দিলেন সুখ এবং সুখকে নিমেষে নিজের থেকে বিযুক্ত করলেন; এইভাবে জন্ম হল নরম তুলতুলে এক সুখ-শিশুর; স্পষ্টত এখন আর তিনি নির্জ্ঞান নন, কারণ এখন তিনি সুখ-দুঃখের জনক; অতঃপর এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি হেঁটে যাবেন এই জোসনা-প্রান্তর ধরে আর খুঁজে বের করবেন আকাশ থেকে পতিত সেই নক্ষত্রকে যা কিনা বিশ্ব-সত্তার মধ্যে কোথাও বিলীন হয়ে আছে।
তিনি অতীব নির্ভরতায় দুঃখের একখানা দুগ্ধফেনীল বাহু মুঠোবন্দী করে এবং সুখ-শিশুকে কাঁধে তুলে নিয়ে হেঁটে চললেন সামনের দিকে; আর এতক্ষণ প্রাথমিক নির্জ্ঞানতার অন্ধকার ঘোচাতে এতটাই কেন্দ্রীভূত ছিলেন যে তাকে পলে পলে অনুসরণ করে আসা একটা লৌহ শেকলের
অস্তিত্ব তিনি টের পান নি।
এখর ইন্দ্রিয়ে একটুখানি ঢিল পড়তেই তিনি শুনতে পেলেন পেছনে শেকলের সরোষ স্বনন; মুহূর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন একটা জোসনা রঙের লৌহশেকল ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে; শেকলের পেছনে মানুষের মত কিছু অবয়ব; তিনি কিছুতেই বুঝতে পারলেন না যে, মানুষগুলো শেকলটাকে টেনে নিয়ে আসছে নাকি শেকলটা মানুষগুলোকে...
ভোঁ দৌড় দিলেন তিনি; আকস্মিকতার ধাক্কায় মুঠি থেকে দুঃখের হাত গেল বিচ্ছিন্ন হয়ে আর সুখ-শিশু ছিটকে গিয়ে পড়ল দূরে; সেদিকে তাকানোর অবকাশ নেই, ঊর্ধশ্বাসে ছুটছেন তিনি, কিছুতেই ধরা দেবেন না ঔ জোসনা রঙের শেকলের কাছে। মানুষগুলোও কম যায় না এবং যেহেতু তাদের হাতে শেকল অথবা শেকলের হাতে তারা তথাপি গতির একটা সরল সমীকরণ রচিত হবার কারণে তারাও যথেষ্ট গতি পেয়ে গেল এবং রাতকে ত্রস্ত বিধ্বস্ত করে দিয়ে দু’পক্ষ কেবল ছুটতে থাকল...এবং এক সময় মানুষেরা জিতে গেল; তিনি মুখ থুবড়ে পড়লেন শ্যামল বালুরাশির উপর; শেকল এসে জড়িয়ে ধরল পতিত শরীর; কী ভীষণ ঠাণ্ডা শেকল!
‘পাগলডারে ধইরা ফালাইছি, কুদ্দুস...’ মানুষদের চোখেমুখে বিজয়ের নিষ্ঠুরতা এবং ঊর্ধ্বতনতার নিষ্পাপ দ্যুতি খেলা করে গেলে পর তিনি প্রলম্বিত কণ্ঠে এক চীৎকার ছাড়লেন: আয়রে আমার দুক্কু আয়রে আমার সুক, আসমান থেইকা তারা খইসা গেছে, চল খুইজা লইয়া আহি...
# গল্পটি ২০০২ সালে প্রকাশিত “হ্রেষাধ্বনি ও অন্যান্য কণ্ঠস্বর” গ্রন্থভুক্ত
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×