somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্রিম জীবনের পথে :: ভূমিকার কথা

২৭ শে মে, ২০১০ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত বছর এলএইচসি (লার্জ হেড্রন কলাইডর) পৃথিবীর মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। এবছরও কৃত্রিম প্রাণ সবার আকর্ষণের কেন্দ্র। মোটামুটি একসপ্তাহ আগে এই গবেষণার ফলাফল সবার সামনে এলো। যদিও কাজ শুরু হয়েছে ১৯৯৫ সালে, শেষ হয়েছে এখন হতে ছয়মাস আগেই। এই মুহুর্তে, এখন প্রফেশনালদের পাশাপাশি অনেক উৎসাহীরা পড়ে আছে ইন্টারনেটে, ঘাঁটছে এ বিষয়ক তথ্য।

বাংলাতেও দেখলাম বেশ কয়েকটা ব্লগ লেখা হয়ে গেছে। দেখলাম, কয়েকটি ব্লগে বেশ বিতর্কও শুরু হয়ে গেছে - গবেষণাটার সারাংশ, উপসংহার, প্রভাব নিয়ে। ছিদ্রান্বেষণও দেখলাম। কিন্তু বেশ অভাব বোধ করছি এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা নিয়ে। ইংরেজিতেও খুব ভালোভাবে এখনও ব্যাখা নাই যে গবেষণাটা ঠিক কিভাবে হলো, পদ্ধতিটা কি ছিল। যতটুকু আছে, তা হলো গবেষণাটার রিসার্চ পেপার থেকে নেয়া।

আমি এখনো পুরাপুরি বুঝি নাই যে কিভাবে কি হলো। আসলে একদল বিজ্ঞানী ১৫ বছর গবেষণা করে একটা জিনিস আমাদের জন্য নিয়ে আসবে, আর আমরা ১৫ মিনিট ব্যায় করে সেটা বুঝে ফেলবো, এটা তো আর হয় না। তবে মোটাদাগে কিছু বলতে পারবো। যেহেতু জীববিজ্ঞান অনেকের কাছেই অজানা, তাই একটু ভেঙে ভেঙে, সহজ করে বলার চেষ্টা করবো।



বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের একটা সাধারণ সমস্যা আছে। সেটা হলো, তারা বিজ্ঞানের খবরগুলো ভালোভাবে দিতে পারে না। হয় বাড়ায়ে বলে, অথবা কমায়ে বলে। এই দুইটাই বিজ্ঞানের জন্য ক্ষতিকর। ২১ তারিখ যারা খবরের কাগজে জানলেন এই বিষয়টা নিয়ে, দেখলেন যে কৃত্রিম প্রাণ তৈরি হয়ে গেছে! তথ্যটা তারা এত ফুলিয়েছে যে খবরটা হারিয়েছে বস্তুনিষ্ঠতা।

আসলে তা না, গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে একটি ডিএনএর পূর্ণ খন্ড (জিনোম) তৈরি করা হয়েছে। এর আগেও কৃত্রিমভাবে ডিএনএ তৈরি করা হয়েছিল ( তথ্যসূত্র )। কিন্তু এই জিনোমটা একটা ব্যাক্টেরিয়ার কোষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার পর তা -

- নিজের মতো করে কাজ করেছে
- ব্যাক্টেরিয়া কোষ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচেছে
- কোষগুলো বংশবৃদ্ধি করেছে

সুতরাং, সাধু সাবধান, গুলিয়ে ফেলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।

এখন তাহলে জানা দরকার, ডিএনএ কি?


আমাদের শরীরটা যদি একটা দালান হয়, কোষ হচ্ছে সেই দালানের ইটের মতন। আমরা তো অনেক উন্নত প্রাণি। ব্যক্টেরিয়ার মতো অনেক প্রাচীন জীব আছে যারা মাত্র একটা কোষ দিয়েই দিন আনে, দিন খায়। তাদের কোষ অনেক সরল।

কোষকে চলার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। খাবার যোগাড়, শক্তি তৈরি, বড় হওয়া, কোষ বিভাজন করতে নানা রকম কাজ করতে হয়। একটা কোষ কিভাবে কি করবে, কি করবে না তার যাবতীয় নির্দেশ থাকে একটা এনসাইক্লোপিডিয়ার মধ্যে। এই বিশ্বকোষটা হলো তার ডিএনএ। ডিএনএ কে আমরা কম্পিউটার প্রোগ্রামের সোর্সকোডের সাথে তুলনা করতে পারি।

ডিএনএ নামের যেই বইটা, এইটা চারটা অক্ষর দিয়ে লেখf। এগুলো হলো এ, টি, জি, সি। ডিএনএ-র এক একটা অংশকে বলা হয় জিন। এক একটা জিন, কোষের এক একটা বৈশিষ্ট্য বা কাজের জন্য দায়ী।

ডিএনএ কে একটা বিশাল ফুলের মালাও বলা যায়, যেই মালাটা মাত্র চারধরণের ফুল দিয়ে তৈরি।

তো বুঝাই যাচ্ছে, ডিএনএ খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তাইতো একে আদর করে বলা হয় Code of Life।


মনে করেন, বিজ্ঞানী আরণ্যক একটা নতুন গ্যাস আবিষ্কার করলেন। ধরেন গ্যাসটা কার্বন ডাই অক্সাইড। তিনি প্রথমে গবেষণা করে দেখবেন যে গ্যাসটা কোন কোন মৌল দিয়ে তৈরি। তারপর দেখবেন যে মৌলগুলো কিভাবে একটা আরেকটার সাথে বন্ধনীর মাধ্যমে যুক্ত আছে। তিনি দেখলেন যে এই গ্যাসটা কার্বন আর অক্সিজেনের পরমাণু দিয়ে গঠিত। এবং এর গঠন হলো:

O--C--O

তারপর তার কাজ কি হবে? তারপর তিনি চেষ্টা করবেন কিভাবে গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে এই গ্যাসটা তৈরি করা যায়। পরবর্তীতে তিনি আবিষ্কার করলেন যে কার্বন আর অক্সিজেনের বিক্রিয়া করে গবেষণাগারে কার্বন ডাই অক্সাইড কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব।


পৃথিবীতে প্রায় ষোল লক্ষ প্রজাতি। এক প্রজাতি হতে আরেক প্রজাতির পার্থক্য মূলত জেনেটিক কোডে। ডিএনএ-র লেখা তথ্যই ঠিক করে দেয় নতুন তৈরি কোষ কোন প্রজাতির জীবের।

এতদিন ধরে জীববিজ্ঞানে বিজ্ঞানী আরণ্যকের প্রথম কাজটাই হয়ে আসছিল। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জীবের ডিএনএ-র চারধরণের "ফুল" (আসলে বেস-পেয়ার, ক্ষারক-জোড়) কোন ধারবাহিকতায় সাজানো আছে সেটাই লিপিবদ্ধ করছিলেন কম্পিউটারে।

এখন যেটা হলো, জীববিজ্ঞান একটা বিশাল লাফ দিল! বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারে সংরক্ষিত জেনেটিক সিকুয়েন্স (ডিএনএ-র তথ্যের ধারা) অনুযায়ী গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ। অন্য একটি কোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার পর যেটা কিনা স্বাভাবিকভাবেই কাজ করা শুরু করলো।

তার মানে, মানুষ এখন আর কেবল ডিএনএ-র বই পড়তে পারে না। এখন সে সংকেত অনুযায়ী কৃত্রিমভাবে ডিএনএ-র বই লিখতেও পারে! এটা মানুষের লক্ষ বছরের ইতিহাসে একটা বিরাট মাইলফলক। এই ঐতিহাসিক ঘটনা অন্যদের জানাতে আমি অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি।

এই বেলা তবে যাই? পরশু একটা পরীক্ষা আছে, তারপর না হয় বাকিটা লিখবো?

প্রথমে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১০ রাত ১২:০৫
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×