somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুপচর্চা ও অন্তরালের কথা

২৭ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুধু ঢাকা শহরটাতেই নয় বাংলাদেশের অনেক জেলা উপজেলা ও মফস্বল শহরগুলোতেও পথে যেতে যেতে আমার চোখে পড়েছে রুপসী , ক্লিওপেট্রা, সাজঘর, বঁধু, মোনালিসা নানান বাহারী নাম ও সাজে নানান রকম ও ধরনের সুসজ্জিত দোকান ঘর।
বেশী ভাগ দোকানঘরের চিত্র বিচিত্রিত গ্লাস ডোরের সামনে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে শুধু মাত্র মহিলাদের জন্য, সাথে একটি অন্কিত বা নারীমুখের রিয়েল ছবি।। আহা কে বলে নারীদের কথা নাকি কেউ ভাবেনা? সব খানেই নাকি পুরুষের জয় জয়কার? হাহ্‌ ! অন্তত এইস্থানে পুরুষের প্রবেশ কড়াকড়ি ভাবেই নিষিদ্ধ করতে পেরেছে কিছু দুঃসাহসী নারীকূল।:D

যাইহোক, আমি তখন বেশ ছোট। মনে হয় থ্রী ফোরে পড়ি বা আরো নিচূ ক্লাসে। একদিন আমার বড় আপুদের সাথে গেলাম আমাদের পাড়ার এমনি এক দোকারঘরে। আপুরা গেলেন আমার দোহাই দিয়ে। উদ্দেশ্য হাল ফ্যাশন স্টাইলে চুল কাটিয়ে আনা। যাইহোক সেই আমার প্রথম বিউটি পার্লারের অভ্যন্তরীন আবহাওয়া পরিদর্শন।

ভেতরে ঢুকেই দেখলাম অতিশয় সাস্থ্যবতী এক মহিলা উনার অতিশয় সাস্থ্যবান পা দুখানি , এক গামলা পানিতে চুবিয়ে বসে আছেন। চেয়ারের হাতলের দুদিকে ঝুলছে দুই হাত। বিশাল বপু মহিলাটি চেয়ারে বসা কিন্তু তার মাথা নেই। মাথার জায়গায় একটা প্লাস্টিকের বলের মত কিছু একটা। আমি তো দরজা হতেই বেঁকে বসলাম সেই ভয়ংকর দর্শন ইয়া বিশাল প্লাস্টিক মাথা দেখে। সেই পলাস্টিক মাথা আবার প্লাগ ও তারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডের সাথে সংযুক্ত ছিলো আর তার মাঝ দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছিলো।

আমি তো সেটাকে রুপকথার বই থেকে উঠে আসা মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওঠা বিশাল কোনো রাক্ষসী ভেবেই বসে ছিলাম । অনেকটা সেই কলস জ্বীন বা আলাদিনের প্রদীপের জ্বীনটার মত, যে কলসটার মুখ খুললে বা প্রদীপে ঘষা দিলেই প্রথমে ধোঁয়া বের হয় আর তারপর দেখা দেয় অতিকায় ভয়াল দর্শন জ্বীনটা। আমি তো সেই দৃশ্য দেখে আ আ উ উ বিচিত্র শব্দে আমার ভেতরে প্রবেশের অমত জানিয়ে দিলাম। আসলে ভয়ে আমার ভাষা হারিয়ে গিয়েছিলো তাই আ আ ঊ উ বিচিত্র ভাষার উন্মেষ ঘটেছিলো আমার মুখে। :(আপুরা বুঝিয়ে শুনিয়ে কাছে নিয়ে গিয়ে দেখালেন ওটা কোনো প্লাস্টিক মাথা নয়। তার ভেতরে মহিলা আন্টির সত্যিকারের মাথা বিদ্যমান। উনার চুলে প্যাক লাগিয়ে স্টিম দেওয়া হচ্ছে নাকি সেই পদ্ধতিতে।:-* যাইহোক আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলোনা । তবুও আপুদের অনেক সান্তনা ও লোভনীয় বাক্যে চুপ থাকতে বাধ্য হলাম।/:)

আপুরা আমাকে অনেক আদর করে । ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দিয়ে চুল কাঁটিয়ে দিলেন। তারপর নিজেরা বসলেন রুপচর্চায়। আমার তখন কিছুই করার ছিলোনা, অপেক্ষা করা ছাড়া। আর ঐ গাবদা গোবদা প্লাস্টিকের মাথা আন্টি ততক্ষনে বিদায় নিয়েছিলেন। তাই আমি বিউটি পার্লারটা ঘুরে দেখতে মনস্থ করলাম। চুল কাঁটাকাঁটি ঘর থেকে আমি পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখতে গেলাম। আবছায়া আলো আঁধারীতে ভালো দেখা যায়না বিধায় ভেতরে ঢুকে পড়লাম। থরে থরে সজানো কত রকম অজানা অচেনা রুপচর্চা সমাগ্রী! একটা পর্দা ঘেরা জায়গায় ঢুকে গেলাম । ওমা দেখি থরে থরে হসপিটালের বেডের মত বিছানায় শুয়ে আছে সব মিশরের মমির মত বিকৃত মুখাকৃতির নারীমূর্তী।

সবার মুখে কি সব লাগানো। সাদা সাদা, হলুদ হলুদ, সবুজ সবুজ ।


আমার রঙগুলো সঠিক মনে নেই তবে সেসব দেখে আমি দিয়ে ফেললাম এক অটো আর্ত চিৎকার।

আমার এক চিৎকারেই সেসব অনড় অটল মুর্তীগুলো প্রাণ ফিরে পেলো। ধড়মড় করে সব উঠে বসলেন যার যার বিছানায়। আমি তো ভাবছিলাম এখুনি সবগুলো ভুত পেত্নী দৌড়ে আসবে আমাকে খেতে। এরি মাঝে একটি অল্পবয়সী সুশ্রী পেত্নী দেখি মেঝেতে গড়াগড়ি যাচ্ছে। মানে আমার চিৎকারে তড়িঘড়ি উঠতে গিয়ে উনি পপাৎ ধরনীতল। তার মা যেন কোথা থেকে হা হা করে ছুটে এলেন। "হায় হায় দুদিন বাদে মেয়ের বিয়ে আর তার পা বুঝি আজ ভেঙ্গে চুরে..... ..দশা...... !.. ... ..."/:)

আমার আর্ত চিৎকারে ততক্ষণে বিউটি পার্লারের সব লোকজন, কাস্টমার মহিলারা ও আমার আপুরাও ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু উনাদের দিকে তাকিয়েও আমি কাউকেই ঠিক চিনতে পারছিলাম না তখন। সবাইকেই আমার অচেনা অজানা অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দা মনে হচ্ছিলো।/:)


যাইহোক, এরপর বেশ কয়েকবছর কেটে গেছে। আমি আর বিউটি পার্লারের প্লাস্টিক মাথা দেখে তখন ভয় পাইনা। মিশরের মমি গুলো যে মিশর থেকে মৃতদেহ নিয়ে উঠে আসেনি, সেসব যে আমারি পাড়াতো মামি খালা, আপু ভাবী সেও আমি এতদিনে বেশ বুঝেছি।

সবচাইতে বড় কথাটি হলো আমি তখন নিজেই বিউটি পার্লার ছাড়াই বাড়িতে বসে রুপচর্চার নানা রকম টিপস ফলো করতে জেনে গেছি।:)
রান্নাঘরের খাদ্যসমাগ্রীই যে ত্বকের সবচাইতে ভালো খাদ্য সেও আমি ততদিনে বেশ জানি। আলু, শশা, টম্যাটো, ডিম দুধ সর আমি পেটের ভেতর চালান না করে ত্বককেই খেতে দিতে বেশী পছন্দ করি তখন।

মেহেদী দিয়ে হাত রাঙানোর বদলে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কষ্ট করে বসে থাকি। ঠান্ডা কাশী সহ্য করেও। /:) এসব জিনিস রান্নাঘর থেকে হস্তগত করতে গিয়ে মায়ের মৃদু বকাঝকা ছাড়া আর সব ভালোই চলছিলো।:)

একদিন পত্রিকায় দেখলাম। চুল বেশী সিল্কী সুন্দর ও মনোহর করে তুলতে চুলে লাগাতে হবে পাকা কলা+ মধু +পেয়াজের রস। এমনিতে আমার চুল ভালোই ছিলো কিন্তু কথায় আছে অতি লোভে তাতী নষ্ট বা লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। আমার হয়েছিলো সেই দশা। আমি চুলকে আরো মনোহর করতে পত্রিকার নির্দেশ অনুযায়ী পাকা কলা + মধু্ + পেয়াজের রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ফেললাম। সবকিছু মেশানোর পর যে বিদিকিচ্ছিরি গন্ধ আসছিলো তাতে নাড়ী ভুড়ি উল্টে আসছিলো আমার। তবুও সেসব অগ্রাহ্য করে ফেললাম আরো সুন্দর চুলের প্রত্যাশায়। মাকে ভয়ে ভয়ে অনুরোধ করলাম। " মা একটু চুলে লাগিয়ে দেবে?"
মায়ের সোজা উত্তর "পারবোনা। নিজে লাগা । যত্ত সব আজগুবী কান্ড কারখানা। চুলে তেল জল সাবান ছাড়া আর কিছু জীবনে দিতে শুনিনি। আর এই বান্দরনীটা হয়েছে হাজির পেটে পাজী। সেই দশা।:(
একটু কেশচর্চা করতে গিয়ে কত কথা শুনিয়ে দিলেন মা। :(:(

কি আর করা? নিজেই লাগালাম নাক মুখ বন্ধ করে আয়নার সামনে বসে বসে, সেই বিকট গন্ধমদন অমৃত হেয়ারপ্যাক। ।কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম । শুকানো পর্যন্ত। বিকট গন্ধটা ভুলে থাকবার জন্য টিভি চ্যানেল চেন্জ করে চললাম অনবরত।বেশ কিছুক্ষন পর বাথরুমে ঢুকে শ্যাম্পু করতে গিয়ে তো আমি থ।:-*

পাকা কলা মধু ও আমার দীঘল চুল ততক্ষণে শুকিয়ে হয়ে উঠেছেন বিশ্বখ্যাত কোনো কোম্পানীর অতি উন্নত মানের সুপার গ্লু। পৃথিবীর কোনো শক্তির সাধ্যই নেই সেই গ্লু ছুটানো, এমনি ধারনা হলো আমার।ভয়ে আবারও আমার সেই বিখ্যাত আর্ত চিৎকারটি দিলাম। মা ছুটে এলেন রান্না বান্না ফেলে। চারিদিক থেকে ছুটে এলেন দাদীমা, চাচীমা, পাড়া পড়শী। আমি তখন বাথরুমের দরজায় দাড়িয়ে কান্নাকাটি। মা আমর কথা ভালোমত শুনার আগেই দমাদম কয়েক ঘা কষালেন। তারপর মা চাচী ফুপু সবাই মিলে বসলেন আমার চুল নিয়ে। কেউ তেল আনে, কেউ জল আনে।/:)

"লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।" প্রমান মিললো। একেবারে হাতে নাতেই। আমার হাতেই।/:)
১১১টি মন্তব্য ১১৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×