সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তীব্র সমালোচনার মধ্যেই রাজধানীর মতিঝিলসহ দেশের সব বাণিজ্যিক এলাকায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
Published : 21 May 2013, 12:09 PM
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ৪৬তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, “বাণিজ্যিক এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
কমিটির যুক্তি, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হওয়ায় সেখানে এ ধরনের সমাবেশ নিরাপদ নয়।
“বিএনপি-জামাতের প্ররোচনায় হেফাজতে ইসলাম গত ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ পল্টন এলাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়। তারা স্বর্ণের দোকানে আগুন দিয়েছে, কোরআন-হাদিস পুড়িয়েছে। এদের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
আবুল কাসেম বলেন, হেফাজতে ইসলামকে সরকার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও ‘বিএনপি-জামায়েতের প্ররোচনায়’ হেফাজতকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হেফাজতকর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়।
এর আগে ৪ মে একই স্থানে সমাবেশ করে বিএনপি।
গত রোববার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “যারা সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশকে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেয়, জনসাধারণের ওপর অত্যাচার করে, সভা-সমাবেশের নামে গাড়ি ভাংচুর করে, দোকানপাটে আগুন দেয়- তাদের বা কোনো দলকে একমাস সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।”
পরে রাতে মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, কোনো দলের কর্মসূচিতে জানমালের ক্ষতি বা নাশকতার আশঙ্কা থাকলে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেবে না সরকার। তবে ‘সাধারণ’ সভা-সমাবেশে সরকারের আপত্তি নেই।
মন্ত্রীর ওই বক্তব্য ও সরকারি সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক নেতারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও এর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সভা-সমাবেশ বন্ধ করে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো অটোক্রেটিক সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। এটা তো আমাদের জন্যও ভাল হবে না।”
মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাথা ব্যথার জন্য আপনি কি মাথা কেটে ফেলবেন? কারা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তারা তো চিহ্নিত। তাদের ধরুক।”
এ বি এম আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য তহুরা আলী, টিপু মুনশী, রুমানা মাহমুদ, এম. আবদুল লতিফ ও শেখ আফিল উদ্দিন অংশ নেন।