somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা ও মেয়ে(১ম পর্ব)

২২ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সন্তান মানেই মায়ের কাছে পরম স্নেহের জন। তবু মা আর মেয়ের সম্পর্কে যেন থেকে যায় বাড়তি কিছু মাত্রা, ভিন্ন কিছু স্তর। বলা হয়, ঘুমিয়ে থাকে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে। ঠিক তেমনই প্রতিটি মেয়ের অন্তরমহলে আগামী মাতৃত্বের সম্ভবনা-বীজ সযত্নে লালিত হয়। একজন মেয়ের জীবন তো আসলে একটু একটু করে মা হয়ে ওঠার ইতিহাস। আবার মা-ও যেন আরও একবার জন্মান তাঁর শিশুকন্যাটির মধ্য দিয়ে। দুজনেরই “এই হয়ে ওঠা” একই সঙ্গে চলতে থাকে সমান্তরালে। হয়তো সে কারনেই সেই চলা, সেই সম্পর্ক হয়ে ওঠে এত ওতপ্রোত।
মা মেয়ের মধে দিয়ে ফিরে পান তাঁর কিশোরীবেলা। আবার মেয়েও একটু একটু করে সাবালিকা হয়ে উঠতে গিয়ে নিজের অজান্তে অনুসরন করে চলে তার শিশুবেলায় দেখা তরুনী মা-কে। মেয়েকে জড়িয়ে মায়ের মনে ঘনিয়ে আসে অনেক না-মেটা সাধ, অনেক অপরিপুর্ন স্বপ্ন- সেসবই তো তাঁর নিজের বালিকাবেলার স্বপ্নসাধ। যে সাজে সাজা হয়নি, যা কিছু পাওয়া হয়নি, তার প্রত্যেকটাই তাঁর আত্মজা পাক, এমন কথা কোন মা না ভাবেন? কোন মা না প্রস্ততি নেন, মেয়ের জীবনে নিজের ইচ্ছের ফুলগুলিকে সার্থক করে ফুটিয়ে তোলার? আর এভাবেই মায়ের সাথে মেয়ের সম্পর্ক হয়ে ওঠে নিবিড় আর অবিচ্ছেদ্য।
একেবারেই শিশু বয়সে জীবনের প্রতিটি পল, সমস্ত অস্তিত্বেই মায়ের মুখাপেক্ষী। একটু বড় হওয়ার পর আসে প্রশিক্ষনের পর্ব। তখন মা মেয়েকে হাতে ধরে শেখান নানা সদভ্যাস ও সঠিক আচরণসমুহ। তারই মধ্য দিয়ে একটি মেয়ের জীবন-বোধ গড়ে ওঠে। মা তাকে চারপাশের বিভিন্ন সম্পর্কগুলি শেখান। বাবা, ভাই, বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, মামা-খালা, ফুফু-চাচা—ইত্যাদি নানা সম্পর্কে সেযে জড়িয়ে আছে, এটা শেখার সাথে সাথে তার চারপাশের ছোট্ট জগতটি সম্পর্কেও সে ওয়াকিবহাল হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি সম্পর্কিত মানুষের সাথে কেমন আচরন করতে হবে তার প্রথম পাঠও দেন তার মা।
স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি হওয়ার পরও দৈনন্দিন নানা বিষয়েই একটি মেয়ে নির্ভর করে মায়ের উপর। যেমন স্কুলের পড়াশুনা করা, স্কুলে মানিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া, বন্ধু-বান্ধবের ছোট্ট গোষ্ঠি তৈরি করা এ সবই মায়ের সাহায্যে শেখে সে। তৈরি হতে থাকে মায়ের প্রতি মানসিক নির্ভরতা। স্কুলে কোন টিচার কড়া ব্যাবহার করলে বা খেলার মাঠের বন্ধুদের সাথে মনমালিন্য হলে তার প্রান খুলে কাঁদবার জন্যেও যেমন চাই মা-কে, তেমনি ক্লাসে নতুন বন্ধু তৈরি হলে বা টিচার প্রশংসা করলে, সে সবও মন খুলে বলার জন্য মাকে ছাড়া তার চলেনা। ছোট থেকে সে যতই বড় হতে থাকে ততই চারপাশের দুনিয়াটাকে নিজের মত করে আবিস্কার করতে থাকে। কোথাও সে ভয় পায়, কোথাও কৌ্তুহল বোধ করে, কোথাও অনন্ত ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে যায়। তখন মায়ের কাছেই সে পেতে চায় নিশ্ছিদ্র দুর্গের নিরাপত্তা। মায়ের কাছেই খোঁজে কৌ্তুহলের নিবৃত্তি, অসংখ্য না-জানা প্রশ্নের উত্তর।

একটি কিশোরী মেয়েকে যৌবনে উপনিত হওয়ার আগে পার হতে হয় বয়ঃসন্ধির দিনগুলো। তখন তার চোখের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে নারীত্বের রহস্যময় বাঁকগুলি। বাইরের দুনিয়াটাকে বিস্ময়ের চোখে দেখার ও চেনার সাথে সাথে সে আবিস্কার ক্করতে শুরু করে নিজের শরীর ও সেই শরীরে ক্রমশ ফুটে ওঠা পরিবর্তনের লক্ষনগুলিকে। এখানেও সে নির্ভর করে মায়ের ওপর। মা হিসেবে তো বটেই একজন নারী হিসেবেও মা-ই তাকে শেখান পরিপুর্ন নারী হয়ে উঠতে। মেয়ের বড় হয়ে ওঠার এই প্রক্রিয়ায় মা সাক্ষী হিসেবে, সাহায্যকারী হিসেবে, সংশোধক হিসেবে পাশে থাকেন, আবার সেই প্রক্রিয়ার সাথে সাথে মা নিজেও আবর্তিত হন। মায়ের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কে নতুন নতুন মোড় এসে দাঁড়ায়, যোগ হতে থাকে নতুন নতুন মাত্রা। মা অনুভব করেন, কবে থেকে যেন তিনিও তাঁর ছোট্ট মেয়েটির উপর মানসিক ভাবে, সাংসারিকভাবে এবং ইমোশনাল দিক থেকে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। মা কোন পার্টিতে বা অনুষ্ঠানে যাবেন- তাঁর সাজসজ্জা ঠিক হল কি না, অনুমোদন করে তাঁর কিশোরী বা সদ্য কলেজ পড়ুয়া যুবতী মেয়েটি। অনেক কাজে, অনেক জায়গায় যাওয়ার সময় মা অন্য কারো উপর নয়, সঙ্গি হিসেবে মেয়ের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। বাবা মায়ের বিরোধ বা মতান্তর হলেও মা সমর্থন খোঁজেন মেয়ের কাছে। কখনো বা মেয়েই মিটিয়ে দেয় বাবা মায়ের মধ্যেকার অশান্তি। আবার পরিবারের কারো সঙ্গে মায়ের মতবিরোধ, সে ক্ষেত্রে মেয়েই মাকে সুপরামর্শ দেয়। মায়েরা একটা বয়সে পৌছানোর পর সাধারনত দেখা যায়, পার্টি থেকে শপিং, রান্নাবান্না থেকে অন্দরসজ্জা, সামাজিকতা থেকে হলিডে প্ল্যান সব কিছুতেই মেয়েকে ছাড়া মায়ের চলেনা। মেয়ের বয়স আর একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে তার গোপন কথা, বয়ফ্রেন্ড প্রসং থেকে কেরিয়ার প্ল্যানিং সবই মায়ের সাথে আলোচনা করে।
___________________________________________________যদি আমার এই লেখাটি কারো ভালো লাগে, কেউ যদি উপকৃত হন, তবে পরবর্তীতে বাকি টুকু লেখার প্রেরনা পাবো।
ঃ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাহায্য নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৩
৪৮টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×