somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকাল প্রয়াত প্রতিভাবান শিল্পী ক্যারেন কারপেন্টার সুমিষ্ট কন্ঠের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

২০ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে থেকেই টুকটাক ইংরেজী গান শুনলেও মূলত বাংলাদেশের অন্যতম পিয়ানো বাদক কাইসার মোহাম্মদ ইসলামের হাত ধরেই আমার ইংরেজী গান শোনা শুরু। "চিরহরিৎ" নামের অডিও রেকর্ডিং ষ্টুডিওতে তখন আমি প্রধান শব্দ প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত। তখন থেকেই কাজের ফাঁকে ইংরেজী গান শোনার পোঁকা মাথায় ঢুকে পড়ে। পশ্চাত্যের নামী দামি অনেক গায়কের গান শুনতে শুনতে একসময় ক্যারেন কারপেন্টারের গাওয়া "Top of The World" গানটা শোনে আমি আত্মহারা হয়ে যাই। কালক্রমে অনেক শিল্পীর কন্ঠ আমি শুনে বারবার মুগ্ধ হয়েছি কিন্তু ক্যারেন কারপেন্টারের কোন সমতুল্য আমি আজো খুঁজে পাইনি। ক্যারেন কারপেন্টারের জাদুকরী সুমিষ্ট কন্ঠ শুনে তাঁর প্রেমে পড়া লোকের সংখ্যা কম নয়। সত্তর দশকের দিকে সবাই যখন হার্ড রকের দিকে ঝুঁকছে তখন কারপেন্টারসরা তাদের নিজস্ব ধারায় এক নতুন ধরনের মিউজিক উপস্থাপন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। রিচার্ডের সুনিপুন ব্যবস্থাপনায় এবং ক্যারেনের সুমধুর কন্ঠের বলে উৎকৃষ্ট হয়ে আছে তাদের ভালোবাসার সঙ্গীত ভান্ডার। আমেরিকার কানেক্টিকাট নিউ হেভেনে ক্যারেনের জন্ম। তাঁর শৈশব কালে তাঁর পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। যখন ক্যারেনের আগ্রহ ছিলো বেইসবল খেলায় তখন তাঁর ভাই রিচার্ডের আগ্রহ ছিলে সঙ্গীতে এবং রিচার্ড তা নিয়মিত অনুশীলনও করতো। তবে ভাই রিচার্ডের পথে পা ফেলতে দেরী করেনি ক্যারেন এবং খুব তাড়াতাড়ি সঙ্গীতের জগতে প্রবেশ করলো একজন কন্ঠ শিল্পী হিসেবে নয় বরং একজন ড্রামার হিসাবে। ১৯৬৫ সালে রিচার্ডের বন্ধু ওয়েস জ্যাকবসকে নিয়ে ক্যারেন ও রিচার্ড একটি ইন্সট্রুমেন্টাল ট্রিও গঠন করেন। ওয়েস সেখানে বেজ বাজাতো। ১৯৬৬ সালে "The Hollywood Bull Battle of The Band" প্রতিযোগিতায় ট্রিও প্রথম স্থান অধিকার করে। পরে অবশ্য জ্যাকবস একটি অর্কেস্ট্রাতে ঢুকার জন্য ট্রিও ত্যাগ করে। ১৯৬৭ ক্যারেন ও রিচার্ড তাদের আরোও চারজন ভার্সিটির বন্ধুদের নিয়ে নতুন একটি ব্যান্ড দল গঠন করে নাম দেয় "স্পেকট্রাম"। স্পেকট্রাম খুব কম সাফল্য পায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যান্ডটি বিলুপ্ত হয়। এরপরই ক্যারেন ও রিচার্ডের জুটি "The Carpentars" নামে নতুন ব্যান্ড দল গঠন করে। এবারের বেলায় ক্যারেন ড্রামে যতখানি গুরুত্ব দিয়েছে, ততখানি গুরুত্ব দিয়েছে গান গাওয়ার দিকে এবং রিচার্ডও সফট ও আপবিট সুরের মাল্টিট্র্যাক রেকর্ডিং এর উপযোগী গান তৈরী করে। এই নতুন মিউজিক গুলো তৈরী করা হতো তাদের মিউজিশিয়ান বন্ধু জোই অসর্বনের গ্যারেজে। অবশেষে তাদের ব্রেক আসে বহু প্রতীক্ষার পর যখন A&M Records এর কো-ফাউন্ডার হার্ব এ্যালপার্ট তাদের গান গুলো শোনে। সে রিচার্ডের ব্যবস্থাপনা ও ক্যারেনের স্বতন্ত্র কন্ঠ শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে যে ১৯৬৯ সালের ২২শে এপ্রিল সে কার্পেন্টারসদের সাথে A&M Records এর চুক্তি সম্পাদন করে ফেলে আর এর মধ্য দিয়ে কারপেন্টারসদের ক্যারিয়ার শুরু হয়। তারা তাদের প্রথম গোল্ড এ্যালবাম উপহার দেন ১৯৭০ সালে "Close To You" এ্যালবামের মধ্য দিয়ে। এটি জাতীয় পর্যায়ে সকল চার্টের শীর্ষে ছিলো। এটি ছিলো শুধু মাত্র শুরু এরপর একে একে দশটি গোল্ড এ্যালবাম এবং প্রচুর হিট গান উপহার দেয়। সেগুলোর মধ্যে "We have only just begun", "Rainy days and mondays", "Good bye to love", এবং "Top of the world" উল্লেখযোগ্য। সেই সময় হতাশাবাদীরা কারপেন্টারসদের বলেছিলো Unfasionable তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী। অবশ্য মন্তব্যগুলো ভুলবশতই করা হয়েছে কেননা কারপেন্টারসদের হার্ড রকারদের সাথে মোটেও তুলনা করা চলেনা। তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক মন্তব্য করেছিলো কারপেন্টারসদের মিউজিক সহজ ও জটিল গোছের নয়। শ্রেষ্ঠ মিউজিকের ক্ষেত্রে যা সবসময়ই হয়ে থাকে। ১৯৮০ সালে যখন "Made in America" এ্যালবামের কাজ চলছিলো সেই সময় ক্যারেন প্রেমে পড়ে যায় এবং বিয়ে করে ফেলে। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে রিচার্ড ও জন বেটিস যৌথ ভাবে "Because we are in love" গানটি উপহার দেয়। গানটি পরে "Made in America" এ্যালবামে যুক্ত করা হয়। অনেকেই বলে থাকেন ভালো কোন কিছু খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। কথাটি সত্য না মিথ্যা কে জানে, কিন্তু ক্যারেনের ক্ষেত্রে তা সত্য হয়েছে। মাত্র ৩২ বছর বয়সে আমরা হারিয়েছি এই সুরেলাকন্ঠী গায়িকাকে। অনেক দিন থেকে ক্ষুধাহীনতার মানসিক রোগে ভোগে অবশেষে ১৯৮৩ সালের ৪ঠা অক্টোবর সকাল ১০টা'য় একটি হাসপাতালে ক্যারেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জোর করে ডায়েট করার জন্যই এমনটি হয়েছিলো। ক্যারেনের উচ্চতা ছিলো ৫ফুট ৪ইঞ্চি অথচ ওজন ছিলো মাত্র ১০৮ পাউন্ড !!! তবে অনেকের ধারণা তার মৃত্যুর কারণ ছিলো হৃদরোগ। কারণ ডাক্তাররা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাঁর মা তাকে মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়ে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাঃস নিতে সহায়তা করেছিলো। ক্যারেনের মা সাংবাদিকদের বলেছিলো "আমরা তাকে হার্ট এ্যাটাকড অবস্থায় পেয়েছিলাম"। ক্যারেন যে একজন প্রতিভাবান শিল্পী তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার কন্ঠের অভাব প্রতি পরতে পরতে টের পেলাম কারপেন্টারসদের মিউজিক নিয়ে "The London symphonic orchestra plays the music of The Carpentars." এর ট্র্যাকগুলো শুনে। তবে ক্যারেন পৃথিবীতে অল্প সময়ের জন্য থাকুক না কেন তার সঙ্গীত ও তার সুমধুর কন্ঠের মায়া আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল সবুজ হয়ে।

ক্যারেন কার্পেন্টারসদের এ্যালবাম সমুহঃ
* Ticket to Ride (Offering) - 1969
* Close to You - 1970
* Carpentars - 1971
* A Song For You - 1972
* Now And Then - 1973
* Horizon - 1975
* A Kind of Hush - 1976
* Passage - 1977
* Christmas Portrait - 1978
* Made In America - 1981
* Voice of The Heart - 1983
* An Old Fasioned Christmas - 1984
* Lovelines - 1989

ক্যারেনের কন্ঠে গাওয়া আমার অতি পছন্দের কয়েকটি গান ডাউনলোড করে শুনে নিন।
Top of The World
Close to You
We Have Only Just Begun
A Song For You
Will You Love Me Tomorrow
Good Bye to Love
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×