somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা থেকে : স্মৃতির পাতা থেকে...

১৮ ই মে, ২০১০ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উনিশ , তিন , দুই হাজার নয় । চৈত্রের ভর দুপুর । চারদিকে খাঁ খাঁ রোদ্দুর । প্রকৃতি নিস্তব্ধ , নিঝুম হয়ে আছে । চারদিকে যেন এক শূন্যতা , এক হাহাকার । কোন কাজ নেই । অলসের মত রুমে শুয়ে আছি । চোখের সামনে ভেসে উঠছে সোনালী , রুপোলী কত স্মৃতি । মনের জানালায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছে ফেলে আসা স্বপ্নিল দিনগুলো । হাতছানি দিয়ে ডাকছে বারবার । মনে হচ্ছে পাখা লাগিয়ে উড়াল দিয়ে চলে যাই সেই স্মৃতির জগতে ।

আজ আমি সবুজে ঘেরা , পাখি ডাকা , সুষমামণ্ডিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে এল । এই তো সেদিন , খুব বেশি দূরে নয় , মায়াবী আবেশে ঘেরা , অতি আপন বলে পরিচিত ছোটবেলার স্মৃতিবিজরিত বাড়িটাকে ছেড়ে এলাম । আব্বু-আম্মুকে ছেড়ে , প্রিয় জেলা আর কত পরিচিত মুখ-সবকিছুকে ছেড়ে চলে এলাম এক অপরিচিত গণ্ডিতে । দুই বান্ধবী- আমি আর সীমা উঠলাম হোস্টেলে । পেলাম এক আপুকে । কিছুদিন পর আরেক বান্ধবী ইমা এসে যোগ দিল । ভালই কাটছিল দিনগুলো । তিনজন একসাথে ক্যাম্পাসে আসতাম আর যেতাম । জোসনারাতে নিয়নবাতির আলোগুলো হঠাৎ নিভে গেলে জানালার ধারে আমরা বসে থাকতাম । দেখতাম জোসনা-ধোয়া ব্যস্ত শহরকে । মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে জোসনা-মাখা , তারা-ভরা রূপ দেখে তন্ময় হয়ে যেতাম । ছকে বাঁধা ধারায় চলতে সেই পরিবেশ ও ছেড়ে আসতে হল । চলে এলাম অপরূপ প্রকৃতির মায়াবী আবেশে জড়ানো আমাদের ক্যাম্পাসের হলে । এখনো যেখানেই আছি । প্রকৃতির মায়াবী আবেশ আমাকে আরো উদাস করে দেয় । মাঝে মাঝে কিছুই ভাল লাগে না । মনটা আমার উড়ে চলে যায় কোন এক গহীন স্মৃতির খোঁজে ।
* * * * * * * *

মনের গহীনে হাতড়ে হাতড়ে অনেক স্মৃতিই পেয়ে যাই । ডুবে যাই স্মৃতির রাজ্যের অতলে , গহীনে । ছেড়ে এসেছি আমার অতি প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইছামতির কোল ঘেঁষা পাবনা কামিল মাদরাসাকে । যেখানে আমার জ্ঞানার্জনের প্রথম হাতে খড়ি , ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত সেই পাবনা আলিয়া । স্যাররা আমাকে খুবই আদর করতেন । বড় আপুরা , বান্ধবীরা , আমার ছোটরা সবাই আমাকে ভালবাসত । ছয় বছর বয়সে পাবনা আলিয়ায় ঢুকে সতেরো বছর বয়সে বের হয়ে এসেছি । সেই মধুমাখা দিনগুলো , পাবনা আলিয়ার কলকাকলি , লতা-পাতা সবই মনের গহীনে গাঁথা রয়ে গেছে । বারে বারে মন-পাখিটা উদাস হয়ে গেয়ে উঠে :
‌‌‌‍"আলিয়ার ঐ দিনগুলি
মিষটি মধুর দিনগুলি
সোনালী সেই দিনগুলি
হায়- অনেক দূরে । "

* * * * * * * * *

মনে পড়ে - খুব বেশি মনে পড়ে ছোটবেলাটা । আমার ছোটবেলা ,কৈশোর বেলা সব কেটেছে পাবনা শহরে -নানুবাড়িতে । আর আমার দাদুবাড়িটা পাবনার সুজানগরে পদ্মার কোল ঘেষা নিশ্চিন্তপুরে । সবাই আমাকে ভালবাসত । নানাভাই , নানু , মামা- মামী আরো কত সবার আদর , ভালবাসা । মামাতো ভাই-বোনদের সাথে খেলতাম । খাল থেকে কচুরিপানা তুলে আনতাম । আমাদের বাড়িতে অনেক ফুলগাছ ছিল । এখনো আছে । একটা গাছ ছিল-মাধবীলতা । ফুল তুলে এনে মালা গাঁথতাম । মাথায় পরতাম, গলায় দিতাম । আকাশ-বাতাস , পাখিদের উড়া-উড়ি , ফুল-বাগান , ঘাসফড়িঙ- এসবই ছিল আমার আপন ।
যখন দাদুবাড়িতে যেতাম তখন আমি থাকতাম আম-বাগানে , সরিষা-ক্ষেতে , ধান-ক্ষেতে । আমার সঙ্গী থাকত চাচাতো বোন দিবা । আমার এক বছরের ছোট । দু'জনে ঘুরে বেড়াতাম আর ফুল তুলে আনতাম । আকন্দ , কলাবতী আরো কত ফুল । ধানের ক্ষেতে ঘুরে বেড়াতাম । দু’পাশ দিয়ে কচি শীষগুলোয় বাতাস দোলা দিয়ে যেত । বাড়ি থেকে দু’মাইল দূরেই পদ্মা নদী । কখনো বা চলে যেতাম নদীর কাঞ্চন-পাড়ে । নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতাম ।
* * * * * * * *

শিশু কালকে বিদায় দিয়ে যখন কৈশোরে এলাম তখন বই , পত্রিকা আর আঁকা-আঁকি ছাড়া আর কিছুই বুঝতাম না । মাদরাসার ক্লাস শেষে বাড়িতে এসে বসতাম বই নিয়ে । সময় পেলেই দিতাম রঙ-তুলির আঁচড় । বইয়ের পাতার ভাঁজে রেখে দিতাম নিজের হাতে গড়া বাগানের গোলাপের পাঁপড়ি , বেলি-আরো কত ফুল । যখন ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামত তখন আমার টেবিলের পাশের জানালাটা খুলে বসে থাকতাম আকাশের দিকে চেয়ে । বৃষ্টি-ধোয়া রূপটার দিকে চেয়ে থাকতাম । আবার কখনো তার পরশও মেখে নিতাম ।
এখনো যখন বৃষ্টি নামে , যখন মনটা বইয়ের আশে-পাশে আর বাগানের আশে-পাশে ঘুরঘুর করে তখন কল্পনার পাখা লাগিয়ে চলে যায় আমার সেই ফুল-বাগানে আর রঙ-তুলির আঁচড়ে ভরে ওঠা স্মৃতি-বিজড়িত সেই ঘরে । বলতে ইচ্ছে করে খুউউব :
'আবার যেতে ইচ্ছে করে
স্মৃতিমাখা সেই গাঁয় ,
যার পরশ লেগে আছে
আমার দু'খান পায় । '

(১৯.০৩.'০৯ইং; ডায়েরীর পাতা থেকে নেওয়া )
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×